স্বপ্ন বুনছেন মোসলেম

  24-10-2016 07:53AM

পিএনএস: সাড়ে ছয় একর জমিতে সফলভাবে লেবু চাষ করে অর্থ, খ্যাতি, সম্মান ও পরিচিতি সব পেয়েছেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গজারিয়া গ্রামের স্বপ্নবাজ, পরিশ্রমী, উদ্যমী এক যুবক মোসলেম উদ্দিন। এবার সেই মোসলেম উদ্দিন সাড়ে ৪ একর জমিতে একই সঙ্গে মাল্টা ও বরই চাষ করেছেন। ওই একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে তিনি চাষ করেছেন মাষকলাই। এক জমিতে তিন ফসলে এবার ব্যাপক সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। নিচের স্তরে দেশীয় মাষকলাইয়ের ক্রমবর্ধমান সবুজ পাতা, তার উপরে মাল্টার চারা, মাঝে মাঝে ফুলে ফুলে ভরা ছোট ছোট বরই গাছগুলো। এ যেন এক মন ভরানো অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে সখীপুরের কীর্ত্তনখোলায়।

সরজমিন উপজেলার কীর্ত্তনখোলা-ডাবাইলপাড়া সড়কের পাশে মোসলেম উদ্দিনের সাথী ফসলের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, এ যেন সবুজের বুকে অন্যরকম এক সবুজের হাতছানি। তার ফসলি জমিজুড়ে রয়েছে সারিসারি মাল্টা ও বরইয়ের চারা; এর ভেতর মাষকলাই। এভাবে একই সময়ে অন্য ফসলের সঙ্গে সাথী ফসলের চাষ করলে উৎপাদন খরচ কম লাগে এবং লাভ বেশি হয়। সাড়ে ৪ একর জমিতে প্রায় ১০০ মণ মাষকলাই হবে হবে বলে আশা করছেন চাষি মোসলেম উদ্দিন। বাজার ভালো হলে দেড় থেকে ২ লাখ টাকার মাষকলাই বিক্রি বিক্রি করা যাবে। এ পদ্ধতিতে সাথী ফসল চাষে জমি তৈরি, পরিচর্যা, সার প্রয়োগ ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে গেলে সময়ও যেমন কম লাগে, তেমনি সব কিছু একসঙ্গে করতে পারায় খরচও কম লাগে। লাভও পাওয়া যায় দ্বিগুণ-তিনগুণ। উপজেলার কীর্ত্তনখোলা-ডাবাইলপাড়া সড়কের পাশে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি বছর ১ লাখ ৬ হাজার টাকা চুক্তিতে ১১ বছরের জন্যে সাড়ে ৪ একর জমিতে তিনি তিন ফসলি ফসলের আবাদ শুরু করেছেন।

সাথী ফসল হিসেবে প্রথববারের মতো বরই ও মাল্টা বাগানে মাষকলাই চাষ করে মোসলেমের সাফল্য দেখে অন্য কৃষকদের মধ্যেও এর আগ্রহ বেড়েছে। এর আগে মোসলেম উদ্দিন উপজেলার গজারিয়া এলাকায় সাড়ে ছয় একর জমি লিজ নিয়ে সিটলেস জাতের লেবু চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। ওই জমি থেকে প্রতি বছর লেবু ও চারা কলম বিক্রি করেই ৭-৮ লাখ টাকা আয় করছেন। এবার তিনি উপজেলার কীর্ত্তনখোলা-ডাবাইলপাড়া সড়কের পাশে ৪ একর জমি লিজ নিয়ে আগাম জাতের ৮০০ টক-মিষ্টি বড়ই গাছ ও পাশাপাশি ৮০০ মাল্টা ফলের চারা লাগিয়েছেন। ইতিমধ্যে ছোট ছোট বড়ই গাছগুলোতে বরই ধরতে শুরু করেছে।

দেশীয় বড়ই বাজারে আসার দুই মাস আগেই তিনি এ বড়ই বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। সফল চাষি মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘বরই ও মাল্টা বাগানে চাষ করা মাষকলাই থেকে বাম্পার ফলনের আশা করছি আমি। আমার বাগান দেখে স্থানীয় কৃষকরা আগ্রহ নিয়ে এখন পরামর্শ চাচ্ছেন।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফায়জুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘সখীপুর উপজেলার মাটি সবজি চাষের জন্যে খুবই উপযোগী। সাথী ফসল চাষে সখীপুরে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। সাথী ফসল চাষে আমরা কৃষকদের আরও উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি। টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হাশিম বলেন, ‘যেভাবে ফসলি জমি কমে আসছে এবং কৃষিতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে তাতে সাথী ফসল চাষ করলে কৃষকরা কম খরচে বেশি লাভবান হবে। মোসলেমের মাষকলাই চাষ তার একটি উদাহরণ।’



পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন