ভোলায় ১০ কোটি টাকার আমন ক্ষতিগ্রস্ত, বিপাকে কৃষক

  07-11-2016 08:15PM

পিএনএস, ভোলা : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলায় আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার ৭ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বহু ক্ষেতের আমন ফসল দমকা হাওয়া আর ভারী বৃষ্টির কারণে মাটিতে হেলে পড়েছে এবং পানিতে মিশে পচে যাচ্ছে। এই ধান বিক্রির টাকায় সংসার পরিচালনা কিংবা বার্ষিক খোরাকী চালিয়ে থাকেন কৃষকরা। কিন্তু নিম্নচাপের প্রভাবে আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বর্তমানে ধান বোপণের খরচের টাকা উঠবে কীনা, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

ভোলার বিস্তৃর্ণ ক্ষেত-ক্ষামারে বেড়ে উঠছে স্থানীয় ও উচ্চ ফলনশীল জাতের অন্তত ৪০ রকমের ধান। রাজাশাইল, কাজলশাইল, বিরি-৬২, ৩২ আর বিনা-৭ সহ বেশ কয়েকটি জাতের ধান কাটার সময় শুরু হওয়ার কথা আগামী ১০-১৫ দিন পরই। কিন্তু গত শুক্রবার ও শনিবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ কৃষকদের জন্য দুর্ভাগ্যই বয়ে এনেছে। সদর উপজেলার ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া, ইলিশা, কাচিয়া, ধনিয়া এবং আলীনগরে সরজমিনে দেখা গেছে ধান গাছ পানিতে হেলে পড়ার দৃশ্য। শুধু সদর উপজেলাই নয়, পুরো জেলার ৭ উপজেলায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চটিমারা গ্রামের চাষি রুস্তম আলী (৬০) বলেছেন, ‘এ বছর আমি ২ কানি জমিতে আমন ধান করেছি। নিম্নচাপের কারণে আমার ক্ষেতের সব ধান গাছ হেলে পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক টাকা লোকশান গুনতে হবে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।’

একই ইউনিয়নের চর ভেদুরিয়া গ্রামের আবদুল রাজ্জাক (৫০) বলেছেন, ‘রায়ানু ঝড়ের সময় আমার আউস ধান নষ্ট হয়েছে। অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। এবার ৫ কানি জমিতে সুদে টাকা ধার নিয়ে আমন করেছি। কয়দিনের বাতাস ও বৃষ্টিতে আমার ক্ষেতের অনেক ধান গাছ হেলে পানিতে ডুবে গেছে। এখন আমার ঘর-বাড়ি বিক্রি করে দেনা দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

একই ইউনিয়নের মাঝিরহাট এলাকার চাষী কামাল হোসেন বলেছেন, ‘ব্রাক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও আমন চাষ করেছি। সব ধান বাতাসে হেলে পড়ে পানিতে নষ্ট হচ্ছে। পরিবারে সাত জনের খাবার যোগার করতে হয় আমাকে। এখন আমি দেনা দেবো নাকি সংসার চালাবো? এ অবস্থায় আমি সরকারের সহযোগিতা চাই।’

ভোলা জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ভোলা জেলায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬ শত ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। এতে ৬ লাখ ১৬ হাজার ৪ শত ৮ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু গভীর নিম্নচাপের কারণে জেলায় ১৩ হাজার ৩ শত ৪০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অন্তত ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৪ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন কম হবে।

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রশান্ত কৃমার সাহা জানিয়েছেন, রোয়ানুর আঘাতে ভোলার কৃষকরা আউস ধান চাষে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠার জন্য কৃষি বিভাগ আগামী দুই এক দিনের মধ্যে কৃষকদের জন্য প্রনোদনা হিসাবে বিজ ও সার বিতরণ শুরু করবে। এরই মধ্যে গভীর নিম্নচাপের কারণে আবার ধাক্কা খেল ভোলার কৃষকরা।

কৃষকদের এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য পরবর্তী রবি কিংবা বোরো মৌসূমের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তার।

শুধু পরামর্শ নয়, আর্থিক অনুদান কিংবা সুদমুক্ত ঋণ প্রদাণের মাধ্যমে তাদের ঘুরে দাঁড়াবার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার দাবি করছেন ভোলার এ সকল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন