সবজি চাষে স্বাবলম্বী জামালপুরের লক্ষাধিক কৃষক

  12-12-2016 12:15PM


পিএনএস, জামালপুর: জামালপুর সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদবিধৌত পলি মিশ্রিত মাটিতে টমেটো, লাউ, বেগুন, মরিচ-পিঁয়াজসহ নানা জাতের সবজি ও বিভিন্ন রবিশস্য চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেন লক্ষাধিক কৃষক। এ উপজেলার প্রতিটি গ্রামের সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত শস্যের ন্যায্য মূল্য পেয়ে স্বালম্বী হচ্ছেন।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার ছনকান্দা থেকে শরিফপুর ও নান্দিনা হয়ে নুরুন্দি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের দুই তীরের পলি মিশ্রিত দোআঁশ মাটির ফসলি জমিতে শোভা পাচ্ছে সারি সারি সবজির মাচা। এসব মাচায় লতা পাতা ছড়িয়ে জাপটে ধরে আছে টমেটো, লাউ, বেগুন, পটল, করোলা, ঝিঙা, শশা, মরিচ, পিঁয়াজ, রসুনসহ নানা জাতের সবজি। এসব সবজি মাচার ফাঁকে ফাঁকে দেখা যায় বিন্দু মরিচ, পিঁয়াজ, রসুন আর বেগুনের চাষ। অনেকে সবজি মাচার নিচেই সাথি ফসল হিসেবে চাষ করছেন মরিচ, পিঁয়াজ, আদা, হলুদ এবং বেগুন। ব্রহ্মপপুত্র নদের তীর ছাড়াও জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর, রানাগাছা, রশিদপুর, দিগপাইত, কেন্দুয়া, তিতপল্লা, বাঁশচড়া, নান্দিনা, নুরুন্দি, লক্ষ্মীর চর, তুলশির চর, গোপালপুর ও ঘোড়াদাপসহ অধিকাংশ এলাকার ফসলি জমিতেই অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য চাষিরা সবজি চাষের প্রতি ঝুকে পড়েছেন। এ উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকার যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত। তাই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি ও রবিশস্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাজারজাত করতে পারছেন। এতে এ উপজেলার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি ও রবি শস্যের ন্যায্য মূল্য পেয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপপুর ইউনিয়নের জয়রামপুর গ্রামের ষাটোর্ধ কৃষক ওমর আলী জানান, ব্রহ্মপুত্রের তীরে তাঁর এক বিঘা জমিতে ধান চাষে সাত হাজার টাকা খরচ করে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা মূল্যের ধান পাওয়া যায়। অপরদিকে, এক বিঘা জমিতে লাউ, টমেটো, শশা, জিঙা, মরিচ বা বেগুন চাষে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে একই সময় ৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্বব হচ্ছে। তাই এলাকার অধিকাংশ চাষিরাই ধান চাষের পরিবর্তে সবজি চাষের দিকে ঝুঁকে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। একই গ্রামের কৃষক মিয়ার উদ্দিন, ফরহাদ হোসেন এবং সেন্টু মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, তাঁদের বেলে দোআঁশ মাটির জমিতে ধান বা আখ চাষে উৎপাদন খরচই ওঠে না। তাই গত পাঁচ বছর ধরে নানা জাতের সবজি চাষ করছি। এতে এক একর জমিতে সবজি চাষে বছরে আমাদের অন্তত তিন লাখ টাকা আয় হচ্ছে। আর সবজি চাষ শুরুর পর থেকেই আমাদের অভাব দূর হয়েছে।

শরিফপুর গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম বলেন, "বর্তমান বাজারে ধানের যে দাম তাতে সেচ, সার ও কীটনাশকের দামই ওঠে না। তাই ধান চাষ ছেড়ে দিয়েছি। তবে সবজি চাষে অল্প খরচেই ধান, পাট বা আখ চাষের চেয়ে অধিক লাভবান হচ্ছি। " নান্দিনা গ্রামের মিনারা বেগম জানান, তাঁর বাড়ির উঠানসংলগ্ন এক বিঘা জমিতে ধান চাষ হয় না বললেই চলে। তবে লাউ, শিম এবং টমেটো চাষে সংসারের চাহিদা মিটিয়েও ধান চাষের চেয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। তাই সবজি চাষই তাঁদের কাছে প্রধান অর্থকরী ফসল হিসাবে গণ্য হচ্ছে।

জামালপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাখাওয়াত হোসেন ইকরাম জানান, ব্রহ্মপুত্র নদবিধৌত এ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রতিবছর বন্যার সময় পলি মিশ্রিত পানি প্রবাহিত হয়। পলি মাটিতে প্রচুর পরিমাণে জৈব সারের উপাদান থাকে। এসব জমিতে অধিক পরিমাণে সবজি ফলে। আর উন্নত যাতায়াত সুবিধায় এ উপজেলার প্রায় এক লাখ চাষি তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এ বছর সদর উপজেলার চার হাজার ৬৬৮ হেক্টর জমিতে টমেটো, লাউ, বেগুন, করোলা, পটল, ডাটা, শষা ও ঝিঙাসহ নানা জাতের সবজি চাষ হয়েছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদবিধৌত উর্বর পলি মাটিতে চাষিরা মরিচ, পিয়াজ, রসুন, ডালসহ নানা রবি শষ্য চাষে ন্যায্য মূল্য পেয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন