লালমনিরহাটে হলুদ ফুলে মধুর খবর

  22-01-2017 12:45PM

পিএনএস ডেস্ক: ঋতু পরিক্রমায় হেমন্ত ও শীত ঋতুতে আমাদের দেশে মাঠে মাঠে সরিষা চাষ হয়। মাঠে সরিষা ফুলের অপূর্ব হলুদ শোভায় চোখ জুড়ানো দৃশ্য পথচারীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে তোলে। দৃষ্টির সীমানা জুড়ে দিগন্ত যেন সর্ষে ফুলের হলুদ রঙে অপরূপ রূপে সেজেছে। আর তাই সরষে ক্ষেতের ম ম গন্ধে মাতোয়ারা চারদিক। শোনা যায় মৌমাছির ভো ভো শব্দ।

এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মধু আহরণের হিড়িক। এই পদ্ধতিতে বাক্সবন্দী মৌচাকের মাধ্যমে তুলে আনা হচ্ছে মানসম্মত মধু। এতে লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের সাধারণ কৃষক, আর অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন মৌচাষিরা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর, বড়বাড়ি, কুলাঘাট; আদিতমারী উপজেলার ভাদাই; হাতীবান্ধা উপজেলার হলদিবাড়ি, ডাউয়াবাড়ি ও পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামে এখন হলুদ ফুলে ভরে গেছে। এসব মাঠে চলছে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছির আনাগোনা। এ সময়টা মৌমাছিরও যেন ফুসরত নেই এতটুকু।

মৌচাষি আনোয়ার হোসেন ও ফনি ভূষণ রায় জানান, সারাদিন মৌমাছি সরষে ফুলে পরাগায়ণ ঘটায় এবং মধু সংগ্রহ করে। এরা সাধারণত দেড় থেকে ৩ কিলোমিটার দূর থেকে মধু সংগ্রহ করতে পারে। এক সপ্তাহ পরেই প্রতিটি বাক্সে এসব চাক থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে বের করা হচ্ছে দেড় থেকে দুই কেজি পর্যন্ত খাটি ও স্বাস্থ্যকর মধু। মাঠে বসেই এ মধু বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকা কেজি। পুরো জানুয়ারি মাস জুড়ে চলবে সরষে ক্ষেতে মধু আহরণ। তবে সরষে ফুল শেষ হওয়ার পর ফেব্রুয়ারি মাসে তিল, জিরাক্ষেত ও মার্চের পর লিচুর মুকুল থেকে মধু সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। সরকারি সহযোগিতা পেলে মধু সংগ্রহের মাধ্যমে এ অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব।

কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, সরিষা ওঠার পর ওই জমিতে বোরো চাষ করা যাবে। বোরো কাটার পর পাট বা আউশ ধানও চাষ করা যাবে। একই জমিতে বছরে ৩ টি ফসল ফলবে। যে কারণে কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ জেলায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এ অবস্থা থাকলে বেশ লাভ হবে বলেও জানান তারা।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে সরিষা চাষ বেড়েছে। এ বছর জেলায় এক হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। আর এ থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৯২৬ টন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিধূ ভূষন রায় জানান, আমন ধান কাটার পর মাঠ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় একটি তাগিদ থেকেই সরিষা চাষ করেন কৃষকরা। সরিষা তুলে আবার বোরো ধান আবাদ করা যায়। এছাড়া মাত্র ৭০ থেকে ৮০ দিনেই সরিষা চাষ হয়। আবার বাজারে তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা মেটানোর জন্যই কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন