চিরিরবন্দরে ধানক্ষেতের ক্ষতিকর পোকা খাচ্ছে পাখি

  06-03-2017 09:12PM

পিএনএস, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : ক্ষতিকর পোকা দমনে এক সময় জমিতে ব্যাপকভাবে কীটনাশক ব্যবহার করা হতো। এখন সে প্রবণতা কমেছে। ধান ক্ষেতে পোকা খেকো পাখি বসার ব্যবস্থা করে পোকা দমন করা হচ্ছে। দিনাজপুর চিরিরবন্দরে কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিনা খরচে পোকা দমনের পরিবেশ বান্ধব এ পদ্ধতি। কৃষিবিদরা জানান, কৃষি বিভাগের নতুন উদ্ভাবিত এ পদ্ধতির নাম পার্চিং পদ্ধতি।

উপজেলা কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ৮ শত ৫৭ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। এ বছর উপজেলার কৃষকরা ১৫ হাজার ১’শত ১০ হেক্টর জমিতে ডেথ পার্চিং এর ব্যবস্থা করেছে। যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।

পার্চিং পদ্ধতি দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি ডেথ পার্চিং জমিতে শুকনো ডাল অথবা কঞ্চি পুঁতে দেয়া। আরেকটি জীবন্ত পার্চিং জমিতে ধনচে গাছ লাগানো। তবে জীবন্ত পাচিং আমনমৌসুমে ব্যবহার করা হয়। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে সবুজ ধান ক্ষেত দেখলেই এখন চোখে পড়বে বাঁশের কঞ্চি, শুকনো ডালপালা । ধান ক্ষেতের মধ্যে কয়েক ফিট পরপর বাঁশের কঞ্চি পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পোকা দমনে হাজার হাজার টাকা খরচ করে কীটনাশক স্প্রে করতে হয় না ধান ক্ষেতে। এক দিকে যেমন চাষিরা আর্থিক ভাবে লাভবান হয়। অন্যদিকে পরিবেশ বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা পায়। খেতে হয় না বিষাক্ত ধানের ভাত। ফলে মানুষ নানা ধরণের রোগ-বালাই সৃষ্টি থেকে রক্ষা পাচ্ছে।তাই কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট পার্চিং পদ্ধতি পোকা দমনের সবচেয়ে সহজ উপায় এবং কম খরচে পরিবেশ বান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনায় কৃষকের জন্য সরবরাহ করছে।

কৃষিবিদদের মতে, ধান গাছে থোড় আসার পর লেদা পোকা, নলি মাছি, মাজরা পোকাসহ কয়েকটি পোকা আক্রমণ করে। পোকার আক্রমণে প্রতি বছর প্রায় সাত থেকে প্রায় ১০ ভাগ ধানের উৎপাদন কম হতো। এ ধরনের ক্ষতিকারক পোকা দমনে একসময় কীটনাশক ব্যবহার করা হতো। এতে বিঘা প্রতি প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হতো। চিরিরবন্দরের কৃষকরা এখন কীটনাশকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পোকা দমন করছেন।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ পদ্ধতি অনুসরণকারী কৃষকদের মধ্যে মুকুল হোসেন, অরিফ হোসেন, শওকত আলী, জাকির হোসেন, বেলাল, শাহীনুর, আইজার, লাবলু, নজরুল ইসলাম, দয়াল চন্দ্র রায়, বাপ্পি সহ অনেকের সাথে কথা হলে তারা জানান, পার্চিং পদ্ধতি বোঝানোর সময় তারা বিশ্বাস করতে পারেনি। পরে এ পদ্ধতির গুনাগুন দেখে বিস্মিত হন। তারা এ বছর স্ব-উদ্যোগে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুন হারে এ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো: মাহামুদুল হাসান জানান, কৃষি বিভাগ কৃষকদের এই পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছে। এর ফলে উড়ন্ত পোকামাকড়, দৃশ্যমান পোকাসহ ক্ষতিকারক পোকা পাখিরা খেয়ে ফেলছে। প্রাকৃতিকভাবে পোকা-মাকড় দমনে পার্চিং পদ্ধতি সফলতা দেখাবে মনে করেন তিনি।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন