অতিবৃষ্টির কারণে চিন্তিত চাষীরা

  25-04-2017 12:38AM

পিএনএস ডেস্ক: বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে সুনামগঞ্জে শত শত মানুষের দিনরাতের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে সর্বশেষ বাঁধটি ভেঙ্গে অবশিষ্ট জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

সুনামগঞ্জের কৃষকরা বলছেন, তাদের শেষ ভরসাও চলে গেলো। অতিবৃষ্টির কারণে সারা দেশেই বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমন দুশ্চিন্তা কাজ করছে কৃষকদের মাঝে।

তবে সরকারি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে,বোরো ধান পাকার এই সময়ে এখন বৃষ্টি বন্ধ হলে বোরো উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না।

এদিকে আবহাওয়া দপ্তর বলেছে, গত ৩০ বছরের মধ্যে এ বছরের এপ্রিলে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে।

তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সুনামগঞ্জের প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সাথে শত শত সাধারণ মানুষ দিনরাত শ্রম দিয়ে একটি বাঁধ টিকিয়ে রেখেছিলেন।

এই বাঁধের কারণে এতদিন টিকে ছিল জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনার হাওর। শেষ পর্যন্ত পানির ঢলে বাঁধটি ভেঙ্গে সর্বশেষ হাওরটিও তলিয়ে যায়।

এই হাওর এলাকার কৃষক কল্লোল তালুকদার নিজেও এলাকার অন্যদের সাথে বাঁধ রক্ষায় কাজ করেন। তিনি বলেছেন, ভরসার শেষটুকুও চোখের সামনে পানিতে তলিয়ে যেতে দেখলেন তারা।

‘আমাদের এই হাওরে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ফসল ছিলো। এটা ছিলো শেষ ভরসা। কিন্তু রাত দিন বাঁধ টিকিয়ে রাখার কাজ করে সবশেষ ফসলটুকুও পানিতে তলিয়ে গেল। এখন আমাদের আর কোন আশা ভরসা নাই।’

গত রোববার পানির ঢলে বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের প্রায় ২২ হাজার একর জমির বোরো ধান। সুনামগঞ্জে ছোট বড় মিলিয়ে ১৩৩টি হাওরের সবক’টিই এখন পানির নিচে।

হাওরে বছরের একমাত্র ফসল বোরো নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে মাছও মরে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ঐ অঞ্চলের মানুষ।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেছেন,‘পরিস্থিতি সামাল দিতে ত্রাণ সহায়তাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

দেশের অন্যান্য এলাকার কৃষকরাও এখন অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারণে বোরো ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

উত্তরের কুড়িগ্রাম জেলার ঘোড়াদহ ইউনিয়ন থেকে কয়েকজন কৃষক বলছিলেন, বোরো ফসলের শেষমুহুর্তে এসে টানা বৃষ্টির কারণে ইতিমধ্যেই তাদের ক্ষেতে অনেক ক্ষতি হয়েছে।

‘বৃষ্টির কারণে ধান লুটে পড়ে গেছে মাটিতে। আর কিছু ধানে ছত্রাক হয়েছে। সেগুলোর শীষে দানা নাই। অনেক টাকা খরচে করে আবাদ করলাম, এখনতো চিন্তার বিষয়।’

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্রাকের কৃষি বিষয়ক কর্মসূচির পরিচালক ড: সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, যদিও বোরো ফলন এবার ভাল হয়েছে, কিন্তু এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এই পর্যায়ে বেশি ক্ষতির আশংকা থাকে।

তিনি বলছেন, ‘অতিবৃষ্টি বোরো ধানের জন্য খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। বৃষ্টি বন্ধ না হলে ধান তোলার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। ধান ভালভাবে না শুকালে গুণগত ক্ষতি হবে। বীজ হিসেবে রাখার ক্ষেত্রেও ক্ষতি হবে।’

এবার হাওরের ছয়টি জেলাসহ দেশের মোট ৪৫টি জেলায় প্রায় ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। সুনামগঞ্জেই দুই লাখ হেক্টর জমির ধান ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে।

সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মঞ্জুরুল হাসান বলেছেন, ‘হাওর অঞ্চল বাদে দেশের অন্য এলাকায় বোরো ধানে বৃষ্টির প্রভাব সেভাবে পড়েনি বলে তারা তথ্য পাচ্ছেন। তবে বৃষ্টি আরো অব্যাহত থাকলে ধানের ক্ষতি হবে।’
সূত্র: বিবিসি

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন