যশোরে একজন বৃক্ষ প্রেমিক আব্দুল ওয়াহেদ সরদার

  07-05-2017 08:48PM

পিএনএস, যশোর প্রতিনিধি : আব্দুল ওয়াহেদ সরদার। বৃক্ষই যার ধ্যান, জ্ঞান। বৃক্ষের প্রেমে সারাক্ষন মজগুল থাকেন তিনি। বৃক্ষের ছায়ায় শীতল করেন প্রানীকুলকে। বিনা পয়সায় খাওয়ান ফল। বৃক্ষ বিপ্লবের এই নায়ক যশোর সদর উপজেলার সাড়াপোলোর বাসিন্দা। তিনি অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে বৃক্ষ প্রেমের অরাধনা করে চলেছেন। নিজ খরচে সরকারি জমিতে রোপন করছেন ফলজ ও বনদ বৃক্ষ।

আব্দুল ওয়াহেদ সরদার ২০০৬ সালে বৃক্ষ রোপণে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। এর পর গাছ লাগানের নেশা তার পিছু ছাড়েনি। ৭ বছর যাবত তিনি সরকারি পতিত জমি, রাস্তাঘাট ও পুকুরপাড়ে গাছ লাগিয়ে যাচ্ছেন। তার লাগানো আম, জাম, কাঁঠাল, কামরাঙ্গা, লিচু ও তাল গাছ শোভা পাচ্ছে যশোরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও পতিত জমিতে । শহরের জজ কোট চত্বর,র্যাব অফিস,পুলিশ লাইন, কালেক্টরেট প্রাঙ্গণ, বেজপাড়ার আনছার ভিডিপির ক্যাম্প প্রাঙ্গন, স্টেডিয়ামপাড়ার মিতালী সংঘ সংলগ্ন এলাকা, জেলা ট্রাফিক অফিস, চেকপোস্ট ও বিল হরিণার শ্মশান সংলগ্ন জমিতে বেড়ে ওঠেছে তার রোপনকৃত গাছ। এছাড়া শার্শা উপজেলা বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, চৌগাছা ,মনিরামপুর ও অভয়নগরের থানা প্রাঙ্গনের তিনি আম, কাঁঠাল, লিচু, কামরাঙ্গাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের চারা রোপন করেছেন।

সদর উপজেলার সাড়াপোল সড়কে আব্দুল ওয়াহেদের রোপনকৃত প্রায় ৪০ টি গাছে ফল ধরছে। এছাড়া রামনগর ইউনিয়নের ৮টি সড়কের দু পাশেই শোভা পাচ্ছে তার রোপনকৃত বৃক্ষ। চাঁচড়া কালারহাট সড়কের ৯ কিলোমিটার এলাকা, রুপদিয়া বিল হরিণা ও সাড়াগুটো ৩ কিলোমিটার, সাড়াপোলে ২ কিলোমিটার ও রুপদিয়া বানিয়াবহু সড়কের ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তার লাগানো গাছের শাখা প্রশাখা বিস্তার করছে। রুপদিয়া, মথুরামপুর, সিরাজসিঙ্গা সড়কে তার রোপন করা গাছের কোন হিসেব নেই। বেশিরভাগ সড়কের আম ও লিচু গাছে ধরছে ফল।

বৃক্ষের প্রতি অনুরাগের কারনে আব্দুল ওয়াহেদ সরদার পেয়েছেন বৃক্ষ প্রেমিকের উপাধি। তার বৃক্ষ প্রীতির কথা ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মুখে মুখে। সামান্য একজন রাজমিস্ত্রীর কাজ করেও নিজ অর্থায়নে গাছ লাগিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। দারিদ্রতাকে পিছনে ফেলে প্রতি বছর হাজার হাজার টাকার বৃক্ষ রোপন করে চলছেন। বৃক্ষরোপন করেই যেন অজানা কোন তৃপ্তি পান তিনি। সরকারি দপ্তরে বৃক্ষরোপন করতে তাকে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এসেছে হাজারো বাঁধা। তারপরও তিনি হাল ছাড়েননি। শুধু বৃক্ষরোপন করেই ক্ষান্ত হননি। সে গুলোর দেখভাল ও পরিচর্যা করছেন। তার মতে, বৃক্ষ হচ্ছে একটা বোবা প্রানী।

কথা বলতে পারে না তাই মানুষ বৃক্ষের সাথে নিষ্টুর আচরন করে। আব্দুল ওয়াহেদ সরদার বলেন, ‘বৃক্ষ রোপন করতে যেয়ে প্রতিনিয়ত তাকে সমস্যায় পড়তে হয়। সরকারি দপ্তরে গাছ লাগানোর অনুমতি সহজে মেলে না। কি জন্য গাছ লাগাবেন তার কৈয়িত দিতে হয় অফিসারদের কাছে। তারপর অনুমতি মিললেও মানুষ শত্রুতা করে গাছের চারা উপড়ে ফেলে। কেউ বুঝতে চাইনা এই বোবা প্রানীর ভাষাটা।‘গাছের প্রতি তার গভীর সখ্যতার কথা স্বীকার করে সদর উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামের মিন্টু মিয়া বলেন, ‘আব্দুল ওয়াহেদ সরদারের বৃক্ষরোপনের কথা এলাকার সবারই জানা। গাছকে তিনি সন্তানের মত করেই øেহ করেন। সারাক্ষন গাছের পরিচর্যা করে সময় কাটান।‘ যশোর ৫ আসনের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘আব্দুল ওয়াহেদ সরদার বৃক্ষরোপন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। বৃক্ষ নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা তিনি শুনেছেন এবং জাতীয় সংসদে তার আংশিক উপস্থাপনা করেছেন।‘

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন