শেরপুরে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে ‘আপৎকালিন ধান’ চাষ

  02-07-2017 08:19PM

পিএনএস, শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা : এবার বোরোর ফলন ও দাম দুটোই ভাল পেয়েছেন কৃষক। তাই বোরো ধান ঘরে তোলার পরই আবার কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কৃষকরা। বীজ সংকটসহ নানা প্রতিকূতলতা উপেক্ষা করে কৃষক ‘আপৎকালিন ফসল’হিসেবে খ্যাত জিরাশাইল ও পারিজাত ধান লাগানোর কাজ ইতিমধ্যে শেষ করেছেন। এখন ধান ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে এই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৪হাজার ৬০০হেক্টর জমিতে জিরাশাইল ও পারিজাত ধান লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০০হেক্টর বেশি জমিতে এই ধান চাষ হয়েছে। বোরোর ফলন ও দাম ভাল পাওয়ায় গেল কয়েক বছরের তুলনায় বেশি জমিতে এই ধান চাষ করা হয়েছে। বিশেষ করে বরেন্দ্র এলাকাখ্যাত শাহবন্দেগী, বিশালপুর, মির্জাপুর, কুসুম্বী ও ভবানীপুর ইউনিয়নের সিংহভাগ জমি এই ধান চাষের আওতায় এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে বোরো ও রোপা আমন মৌসুমের মাঝের ফাঁকা তিন মাসে এখানকার কৃষকরা বাড়তি ফসল হিসেবে এই ধান চাষ করেন। অথচ শস্যভান্ডারখ্যাত উত্তরাঞ্চলের কেবল বগুড়া জেলাতেই এসময় প্রায় সোয়া লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি হিসেবে পড়ে থাকে। এসব জমিকে এই বাড়তি ফসল চাষের আওতায় আনা গেলে মঙ্গাপীড়িত এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খাজানুর রহমান। তিনি বলেন, প্রতি বছর মধ্য জুলাই থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত রোপা আমন মৌসুম চলে।

আবার একইভাবে মধ্য অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত -এ দীর্ঘ প্রায় ৬মাস বোরো মৌসুম হিসেবে পরিচিত। আর এ দুই মৌসুমের মাঝের সময়কে রোপা আউস মৌসুম বলে। এফাঁকা সময় দেশের প্রায় বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ জমিতে কৃষকরা কোন ফসল চাষ করেননা। তবে শেরপুর উপজেলায় জিরাশাইল ও পারিজাত জাত ধান চাষ করা হয়। স্থানীয়ভাবে যা বর্ষালী, আপৎকালিন বা বাড়তি ফসল নামে পরিচিত। গত প্রায় ২৫-২৬ বছর ধরে কৃষকরা বাড়তি ফসল হিসেবে রোপা আকারে এ দু’জাতের ধান চাষ করে আসছেন। স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানান, আশি’র দশকে রোপা আউস মৌসুমে খুব অল্প পরিমান জমিতে ধান চাষ করা হত।

আবার যারা চাষ করতো, সেটা রোপা আকারে নয়। জমি তৈরী করে সেখানে ধান বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু ’৯০ সালের পর থেকে এখানকার কৃষকরা বাড়তি আয়ের আশায় একটি নির্দিষ্ট জাতের ধান এ ফাঁকা সময় রোপা আকারে চাষ শুরু করেন। সেই থেকে এখানকার কৃষকদের আর পিছু তাঁকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে চাষের জমির আওতা বাড়িয়ে দিয়েছেন। উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের সাধুবাড়ী গ্রামের মোজাম্মেল হক জানান, এবার তিনি ১৫বিঘা জমিতে জিরাশাইল ও পারিজাত ধান লাগিয়েছেন। গতবার যা ছিল ৫বিঘা। ১৪-১৫বছর ধরে এই ফসল চাষ করে আসছেন। কৃষক শহিদুল ইসলামও একই কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বোরো ধানের ভাল দাম পাওয়ায় এই ধান চাষে কৃষক ঝুঁকে পড়েছেন। বীজের সংকট না থাকলে আরও অনেক জমিতেই কৃষক জিরাশাইল ও পারিজাত চাষ করতেন বলে এই কৃষক জানান।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন