ফলের ন্যায্যমূল্যে নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত বাজার

  29-09-2017 11:00AM

পিএনএস, রাজশাহী: রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির বড় অংশ জুড়ে আছে আম। এ অঞ্চলের সর্বত্রই আমের বাগান থাকলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে। দেশের মোট আমের উল্লেখযোগ্য অংশ আসে এখান থেকেই। যদিও উৎপাদিত আম বিপণনে প্রান্তিক চাষীদের পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে। ভোক্তাপর্যায়ে ফলটির দাম বাড়লেও এর সুবিধা তারা পান না। আড়তদারদের কাছে বিক্রি করতে না পেরে অবিক্রীত ফল নিয়েও অনেক সময় বাড়ি ফিরতে হয়। অথবা সড়ক বা ফুটপাতে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে হয়।

কৃষকরা যাতে সহজে ও ন্যায্যমূল্যে আম বিক্রি করতে পারেন, সেজন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে গড়ে তোলা হচ্ছে ফলটির বিশেষায়িত বাজার। জেলা সদরে তিন তলাবিশিষ্ট এ বাজার নির্মাণে এরই মধ্যে দরপত্রও আহ্বান করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সংস্থাটি বলছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতোই ফলের বিশেষায়িত বাজার গড়ে তোলা হবে অন্যান্য জেলায়। এক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হবে ওই জেলায় সর্বাধিক উৎপাদিত ফলকে। এ হিসাবে টাঙ্গাইলে গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে আনারসের বিশেষায়িত বাজার।

সূত্রমতে, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফল বিশেষায়িত এ বাজারে তুলবেন। দূর থেকে আসা কৃষকদের জন্য থাকবে ডরমিটরির ব্যবস্থা। পাশাপাশি থাকবে সাময়িক সময়ের জন্য ফল সংরক্ষণের ব্যবস্থাও। এতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের দরকষাকষির সুযোগ পাবেন। বাজার দেখভালের দায়িত্বও থাকবে কৃষকদের ওপর— সমবায়ের ভিত্তিতে। সমিতি গঠন ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির কাজটাও করা হবে প্রকল্পের মাধ্যমেই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ফলের বিশেষায়িত বাজারটি গড়ে তোলা হচ্ছে বৃহত্তর রাজশাহী গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্পটির পরিচালক মন্মথ রঞ্জন হালদার বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তবে প্রতি বছরই আম নিয়ে লোকসানে পড়তে হয় এ অঞ্চলের কৃষকদের। দরকষাকষির সুযোগের অভাবে আড়তদারদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্য পান না তারা। কারণ তাদের মাথার ওপর কোনো ছাদ নেই। আমরা তাদের মাথার ওপর ছাদের ব্যবস্থা করছি, যাতে তারা নিশ্চিন্তে তাদের উৎপাদিত ফল বিক্রি করতে পারেন।

এলজিইডির এ উদ্যোগে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এ অঞ্চলের আমচাষীরাও। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার তালিকাভুক্ত একাধিক আমচাষী জানান, আম নিয়ে অনেক সময়ই লোকসান ও ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয় তাদের। ব্যবসায়ীরা অনেক সময়ই তাদের পণ্য সময়মতো কিনতে চান না। অনেক সময় আবার দামও দিতে চান না। আমের জন্য একটি বিশেষায়িত বাজার পেলে এ সমস্যা দূর হবে।

প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আমের মৌসুম শেষ হয়ে গেলেই যে বাজারটি খালি পড়ে থাকবে, তা নয়। পেয়ারা বা বরইয়ের মতো অন্যান্য দেশী ফল যেগুলো সারা বছর পাওয়া যায়, সেগুলো এ বাজারে রাখা হবে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনারসের বিশেষায়িত বাজার গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে টাঙ্গাইলে। কারণ দেশে আনারসের অর্ধেকেরও বেশি উৎপাদন হয় এ জেলায়। এছাড়া কলারও বড় জোগানদাতা জেলাটি। তাই টাঙ্গাইলে বিশেষায়িত বাজার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে এ দুটি ফল।

সব দেশি ফলের জন্যই পর্যায়ক্রমে বিশেষায়িত বাজার গড়ে তোলা হবে বলে জানান এলজিইডির পরিকল্পনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর সাদিক। তিনি বলেন, মূলত প্রান্তিক চাষী, স্থানীয় ভোক্তাদের সামর্থ্য ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিষয়টি মাথায় রেখেই মূলত বিশেষায়িত এ ফলবাজার গড়ে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি ফলচাষীদের দক্ষতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নেয়া হবে।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন