কেঁচো সার বদলে দিলো আব্দুল হামিদকে!

  09-11-2017 03:29PM

পিএনএস, তানোর (রাজশাহী) সংবাদদাতা : গোবর মিশ্রিত মাটিতে কেঁচো চাষে তৈরি হয় ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো কম্পোস্ট সার। এ সার উৎপাদন করে ভাগ্য বদলেছে কৃষক আব্দুল হামিদের। রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বহড়া গ্রামে কৃষক হামিদের বাড়ি।

এই সার ও কেঁচো বিক্রি করে প্রতিবছর খরচ বাদে তিনি ৫ লাখ টাকা আয় করছেন। কিন্তু কীভাবে আসলো এ সাফল্য ?

এ বিষয়ে হামিদ বলেন, তিন বছর আগে বাড়ির পাশে (২১ ফিট বাই ২১) ফিট আকারে খামার তৈরি করি। শুরুতে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা মূলধন বিনোয়োগ করলে পরে আর তেমন খরচ হয়নি।

হামিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৮ সালে কয়েক বিঘা জমিতে সবজি আবাদ করেছিলেন। ২০১৩ ও ২০১৪ দেশে হরতাল, অবরোধ থাকায় সবজি বাজারজাত করতে পারেননি। পরে ক্ষেতেই সব সবজি নষ্ট হয়ে যায় এবং লোকসান গুনতে হয় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। এতে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন।

এরপর হতাশা আর লোকসান মাথায় নিয়ে ২০১৫ সালে অন্য এক কৃষককে ভার্মি সার উৎপাদন করতে দেখেন। পরে নিজেই উৎসাহিত হয়ে বাড়ির পাশে একটি খামার তৈরি করেন। ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়া জাতের প্রায় এক লাখ কেঁচো এনে শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের কাজ। এ ব্যাপারে তাকে দিক নির্দেশনা দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বে-সরকারি গবেষণা সংস্থা বারসিক।

এই সার প্রস্তুতপ্রণালী সম্পর্কে হামিদ জানান, এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রথমে গোবর সংগ্রহ করতে হয়। গোবরের গ্যাস দূর করার জন্য ৭-৮ দিন খোলা জায়গায় ফেলে রাখতে হয়। এরপর বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত ড্রেনের ভিতর গোবর ফেলে পরিমাণমত কেঁচো ছেড়ে দিতে হয়। দুই সপ্তাহ পর নেটে চালাই করে কেঁচো সার আলাদা করা হয়।

তিনি আরও জানান, কেঁচো সার প্রতি ২০-২৫ দিনে গড়ে প্রায় ৩-৪ টন উৎপাদন করছেন। যার বাজার মূল্য প্রতিটন ১২ হাজার টাকা আর প্রতি কেজিতে বিক্রি করেন ১৫ টাকা। এছাড়া কেঁচো দ্রুত বংশবৃদ্ধি করায় সেই কেঁচো বিক্রি করেও বাড়তি আয়ও করেন তিনি। কেঁচো সার উৎপাদন আরও বৃদ্ধিতে ইতিমধ্যে নতুন আরেকটি খামার তৈরি করছেন বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কে পাশের গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, আমরা কেউ ভাবতামই না যে, আমাদের এলাকায় সারাবছরই মৌসুমী সবজি চাষাবাদ করা সম্ভব। বর্তমানে আমাদের গ্রামের ৭৫ জন কৃষক সারাবছর সবজি চাষ করছেন। পাশাপাশি পাশের বিল্লি, চোরখৈর, কুচিয়ামাড়া, আলেকছত্র গ্রামের ১৫০জন কৃষকে বিভিন্নভাবে সবজি চাষে সহযোগিতা করেছেন।

দিনে দিনে ভার্মি কম্পোস্ট খামার থেকে সার উৎপাদন বেশি হতে থাকায় নিজের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি নিজ গ্রামসহ পাশের নাচোল উপজেলার বকুলতলা, পূর্বলক্ষণপুর, নিয়ামতপুর উপজেলার গন্ধশাইল, ভেলকিপুর, তানোর উপজেলার কুচিয়ামারা, আলেকছত্র, বাউরিগ্রাম, বিল্লী, চোরখৈর, চাকইর গ্রামের কৃষদের মাঝে ভার্মি কম্পোস্ট সার বিক্রয় ও ভার্মি কৃষকদের ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির বিভিন্ন বিষয় সহযোগিতা করেছেন। পাশাপাশি কৃষকদের ভার্মি কম্পোস্ট সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করার জন্য গ্রামে গ্রামে কৃষক সভা ও আলোচনা করছেন।

এ নিয়ে গোদাগাড়ি উপজেরার বকুল মিয়া বলেন, আব্দুল হামিদের ভার্মি কম্পোস্ট কার্যক্রমে ব্যবহৃত কেঁচোগুলো দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং দ্রুত সার উৎপাদনে সক্ষম। আমি তাঁর কাছ থেকে এক হাজার কেঁচো নিয়ে এসে কাজ শুরু করেছি একমাস হলো। বর্তমানে আমার কেঁচো সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার হয়ে গেছে।

এ নিয়ে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট এই সময়ের সবচেয়ে দামী সার। এই সার ফসলে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। আব্দুল হামিদের কারণে অনেক কৃষক উপকৃত হচ্ছেন। আমরা কৃষি অফিস থেকে তাকে সর্বদা সাহায্য করে থাকি।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট সার ফসলের জন্য খুবই উপকারি। এতে মাটির উর্বতা শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং রাসায়নিক সারের মত জমির ক্ষতি করে না। কৃষকের কাছে এই সারের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন