ফলন কম হওয়ায় বিপাকে কৃষক

  24-11-2017 03:03PM

পিএনএস, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি : বরেন্দ্র অঞ্চলে বৈরী প্রাকৃতিক দুর্যোগে কয়েক দফায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রাজশাহীর তানোর উপজেলার আমনের আবাদ। এসব ধাক্কা কাটিয়ে এখন কৃষকের উঠোন ভরে গেছে আমন ধানে। তবে হাসি নেই কৃষকের মুখে। ধানের ফলন বিপর্যয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

একদিকে ফলন বিপর্যয় অন্যদিকে ধানের নায্যমূল্য। এই দুই টানাপোড়নে কৃষক দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে প্রান্তিক বর্গাচাষীরা এই ফলনে ধরা খেয়ে চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। আলুর বাজার বিপর্যয়ের পর ধানের ফলন কম হওয়ায় বাড়তি চাপে পড়ে কৃষক এখন দিশেহারা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭৩ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমি। এরমধ্যে তানোর উপজেলায় ২১ হাজার ১’শ ৩০ হেক্টরের বেশি জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছিল।

উপজেলার ২০ থেকে ২৫ জন কৃষকেরা জানান, এ বছর আমনে প্রতি বিঘায় গড়ে ধান হচ্ছে ১০ থেকে ১৩ মণ করে। যেখানে গত বছর হয়েছিল ১৯ থেকে ২৩ মণ। বর্তমানে বাজারে ধানের দাম রয়েছে প্রতিমণ ৮৪০ থেকে ৮৯০ টাকা পর্যন্ত। তবে গত বছর এ সময় ধানের দাম ছিল প্রতিমণ ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। তাদের হিসাবে গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে শুরু থেকেই ধানের দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা বেশি।

কৃষক আরও জানান, সরকার প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে আমন ধান কিনবে। নির্ধারিত এ মূল্যে এক মণ ধানের দাম ১০৪০ টাকা হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে ধান কেনা শুরু না হওয়ায় ধানের বাজারে নির্ধারিত ওই দামের কোন প্রভাব পড়েনি।

উপজেলার তানোর গ্রামের কৃষক মুরাদ হোসেন। আট বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চলতি মৌসুমে আমন চাষাবাদ করেছিলেন তিনি। এ কৃষকের ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। তার বিঘা প্রতি ১৩ মণ করে ফলন হয়েছে। জমির মালিককেই তার দেওয়া লাগবে প্রতি বিঘায় ১০ মণ করে ধান।

তানোর দুবইল গ্রামের আদর্শ কৃষক ইউসুফ মোল্লা, গোল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদ, কলমা বহড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ জানান, ক্ষেতে অনেক টাকা খরচ ও পরিচর্যা করে ধান ভালই হয়েছিল। কিন্তু ধান আধাপাকা অবস্থায় দুই দিনের নিম্নচাপ ও ঝড়ো হাওয়াই তার ক্ষেতের অর্ধেকের বেশি ধান মাটিতে পড়ে যায়। সে সাথে পোকার আক্রমন দেখা দেয়। এসব কারণেই তার ফলন বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। এমন ফলন বিপর্যয়ের চিত্র পুরো বরেন্দ্র অঞ্চল জুড়ে। যেখানে শতকরা ৯০ ভাগ কৃষকই এবার ফলন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রাকৃতিত দুর্যোগ ও পোকার আক্রমণের কারণে।

শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) উপজেলার কালীগঞ্জ হাটে সকালে গিয়ে দেখা যায়, হাটে নতুন ধানে ভরে গেছে। হাটে নতুন সুমন স্বর্ণা জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে ৮৩০ থেকে ৮৭৫ টাকায়। এ হাটে জমজমাট ভাবে ধান কেনা-বেচা চলছে।

ফলন বিপর্যয়ের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার আমন ক্ষেতে ধানের মাথা দেখে মনে হচ্ছিল শতভাগ বাম্পার ফলন হবে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা দিনরাত পরিশ্রম করে পোকা-মাকড় দমনে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। কিন্তু শেষের দিকে এসে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অধিকাংশ পাঁকা ধান মাটিতে পড়ে যায়। ফলে শেষ সময়ের দুর্যোগে ধানের ফলন কমে গেছে বলে মনে করেন তিনি।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন