বিনাধান-১১ এর বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

  26-11-2017 10:02AM


পিএনএস, ময়মনসিংহ: ‘পনের দিন পর বন্যার পানি নাইম্ম্যা গেলে দেখলাম, ধানগাছগুলা পইচ্চ্যা গেছে। সাতদিন পরে দেহি পচা গাছ থাইক্ক্যা পুগি (চারা গজাইছে) অইতাছে। এরপর সাদা (ইউরিয়া) ও মাইট্ট্যা (টিএসপি) সার দিলাম। কয়দিনের মধ্যেই ধানগাছগুলা ফনফণা হয়ে গেলো। হেই ক্ষেতে অত ধান অইব কস্মিনকালেও বিশ্বাস করি নাই।’

কথাগুলো ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরগোবাদিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক আব্দুল জব্বারের। তিনি জানান, বন্যার পর ধানক্ষেতের পরিচর্যা করতে দেখে প্রতিবেশিরা তাকে ‘পাগল’ বলেছেন। বাম্পার ফলন দেখে এখন সবাই তার কাছে বিনাধান-১১ এর বীজ চাইছেন।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত জলমগ্নতা সহিষ্ণু বিনাধান-১১ কাটা শেষে হাসিখুশি কৃষক আব্দুল জব্বার এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া জানান। প্রতিবেশি কৃষক জালাল উদ্দিনের আবাদকৃত বিনাধান-১১ টানা ১২ দিন পানির নিচে থাকার পর একরে ৪৫ মণ ফলন হয়েছে বলে জানান।

শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) পরিচালক (প্রশাসন) ড. আজগর আলী ও পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনা) ড. জাহাঙ্গীর আলম, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রইসুল হায়দার, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামসুন্নাহার, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবুল কাসেম, সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফিরোজ হাসান সরেজমিন মাঠ পরিদর্শন করেন।

এসময় বিনাধান-১১ এর অন্যতম উদ্ভাবক ড. শামসুন্নাহার জানান, ১১৫-১২০ দিনের মধ্যে ফলন হয়। বিনাধান-১১ পানির নিচে ১৫/২০ দিন থাকার পর মনে হবে ধানগাছ মরে গেছে। সাতদিন পর নতুন গাছ গজাবে। কাদাপানি হলে স্প্রে করে গাছের পাতা পরিস্কার করতে হবে। হেক্টর প্রতি সাড়ে চার থেকে পাঁচ টন ফলন হয়। বিনাধান-১১ কর্তনের পর ওই জমিতে স্বল্প সময়ে বিনা সরিষার আবাদ করা যায়। বিনাধান ও বিনা সরিষা আবাদ করলে একই জমিতে তিন ফসল করা সম্ভব।

ড. জাহাঙ্গীর আলম কৃষকদের বলেন, পোকা মারতে ওষুধ দিবেন না। ধানের ক্ষেতে খুঁটি পুঁতে রাখবেন। পাখি বসবে। পোকা খাবে। পরিবেশ বান্ধব ফলন হবে।

বিনার পরিচালক (প্রশাসন) ড. আজগর আলী জানান, বিনাধান-১১ চাষে চরাঞ্চলের কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। আগামী বছর ওই এলাকায় চাষিদের বিনাখরচে দশ একর জমিতে বিনাধান-১১ ও বিনা সরিষার চাষ করা হবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন