ড্রাগন চাষে মাগুরার চাষীদের উৎসাহ বাড়ছে

  04-12-2014 08:49AM

পিএনএস, মাগুরা : মাগুরায় বিদেশী ড্রাগন ফল চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা অর্থকরী এ ফল চাষের প্রতি ঝুঁকছেন। সমন্বিত মানসম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টার-এর তত্ত্বাবধানে ইতিমধ্যে জেলার ৪ উপজেলায় ১০টি ফল বাগান করা হয়েছে।

প্রতিটি বাগানে ৮০টি গাছ, পিলার, কীটনাশক, সার সরবরাহ করা হয়েছে। তাছাড়া ৩০টি বাড়িতে ফলের বাগান করে গরীব চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে চারা, সার, পিলার কীটনাশক দেয়া হয়েছে। আধুনিক পুষ্টিগুণ এবং ঔষধীগুণ সম্বলিত এ ফলে খেতে খুবই সুস্বাদু। তাছাড়া এতে রক্তচাপ, গ্লুকোজ কমাতে সহায়তা করে। প্রসাধনীতে ব্যবহৃত হয়। ফল প্রতি কেজি ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। বছরে একটি গাছ থেকে ১০ কেজি উৎপাদন সহজেই সম্ভব। সে হিসাবে প্রতি গাছ থেকে ২০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ১০ কেজি ফল উৎপাদন হতে পারে।



এ ফলের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ২০ থেকে ২৫ টন। ২০ থেকে ২৫ বছর একটি গাছ ফল দেয়। এর মাধ্যমেই বিজ কাটিং করা যায়। তা ছাড়া এ ফলে তেমন রোগ বালাই দেখা যায় না। মালয়েশিয়া, চীন, শ্রীলংকাসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ এ ফল চাষে এগিয়ে যাচ্ছে।

মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান তত্ত্ববিদ আমিনুল ইসলাম জানান, আমাদের দেশের মাটি এ ফল চাষের জন্য উপযোগী এবং সম্ভাবনা থাকায় ভিয়েতনাম থেকে ৬ জাতের ড্রাগন চারা এনে কৃষকদের এ ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ড্রাগন ফল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও এর নিকটবর্তী অঞ্চলের বিদেশী ফল। থাইল্যান্ডে এ ফলকে পিতায়া বলে। গাছের আদি নিবাস দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায়। বর্তমানে এই ফল পৃথিবীতে নতুন ফল হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।



নাতিশীতোষ্ণ উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের জলবায়ু এই গাছের জন্য ভালো। সুনিষ্কাসিত ও জৈব পদার্থযুক্ত উর্বর যে কোন মাটিতে এই গাছ ভালো জন্মে। বছরের যে কোন সময় চারা রোপণ করা যায়। তবে মে মাসে গাছে ফুল ফোটা শুরু করে আর জুন মাস থেকে ফল পাকা শুরু করে। পিলারের চারিদিকে দুই ফুটপ্রস্থ ও দুই ফুট গভীরতায় মাদা তৈরী করে ১০ থেকে ১৫ কেজি পচা গোবর বা কম্পোষ্ট সার ও কিছু ছাই মাটিতে মিশ্রিত করে সাথে ২০০ গ্রাম পটাশ দিয়ে মাদায় প্রয়োগ ও সেচ প্রদান করে ২ সপ্তাহ রেখে প্রতিটি পিলারের সাথে ২/৩টি চারা রোপণ করতে হয়। কাঁচা ফল সবুজ রংয়ের। ফলের শেষ প্রান্তের পাতাবৃতি লাল রং ধারণ করে ফলের নাভি ফেটে গেলে বুঝতে হবে ফলটি যথাযথ পরিপক্ব হয়েছে।

৪ বছরের একটি গাছ থেকে বছরে এদেশে ১২৪টি ফল সংগৃহীত হয়েছে। যার গড় ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ১.২ কেজি। জাত ভেদে পূর্ণাঙ্গ গাছে বছরে ১০০ কেজি পর্যন্ত ফলন হতে পারে। উপযুক্ত পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনায় এর গাছ ২০- ২৫ বছর ফলনশীল থাকে। ড্রাগন ফলে প্রচুর আঁশ থাকায় হজম শক্তি বাড়ায় ও চর্বি কমায়। পর্যাপ্ত ক্যারোটিন থাকায় স্মৃতি শক্তি ও চোখের জ্যোতি বাড়ায়। ভিটামিন বি থাকায় ক্ষুধা বাড়ায়, রক্তে গ্লুকোজ কমায়। বি সিটোস্টরেল থাকায় হাইপার টেনশন কমায়। ত্বকের মসৃণতা ও আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ভিটামিন বি-৩ থাকায় শরীরে রক্ত প্রবাহ বাড়ায়, খারাপ কলেস্টোরোল ও রক্ত চাপ কমায়, রক্তের শিরা প্রশস্ত করে ও মাইগ্রেনের ব্যথা কমায়। আর ড্রাগনের সাদা শাঁসের রস প্রসাধন গুণে ভরপুর। সাধারণ বার্ধক্য বিলম্বিত করে, ত্বকে ভাঁজ পড়া বন্ধ রাখে, ত্বকের রেখা ও কুচকানো দাগ মুছে লাবণ্যতা বৃদ্ধি করে।

পিএনএস/জা.আ.প্রধান/মো.সাইফুল্লাহ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন