বোরো নিয়ে বিপাকে জয়পুরহাটের কৃষকরা

  15-02-2018 05:17AM

পিএনএস, জয়পুরহাট: উত্তরের জেলা জয়পুরহাটে ঘন কুয়াশা আর দিনভর সূর্যের আলো না থাকায় এবার বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জয়পুরহাট জেলার কৃষকরা।

গেলো কয়েকদিনের তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে নানা প্রকারের রোগ বালাই। ফলে বোরো ধানের চারা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংকট। এই অবস্থায় বোরো উৎপাদন নিয়ে চরম আশঙ্কায় রয়েছে চাষিরা।

স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৭২ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য তিন হাজার ৭১৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। বিএডিসি (বীজ) কৃষকদের মাঝে উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে রয়েছে বিআর-২৮, ২৯, ১৬ ও ৫৪ জাতের ধান। এ ছাড়াও রয়েছে জিরাশাইল ও মিনিকেট। হাইব্রিড জাতের মধ্যে রয়েছে এসিআই-১, ২, ৩, ৪, ৫, ধানীগোল্ড, হিরা-২, ৫, জাগরণ, ময়না, টিয়া, ধানী, এসএল-৮ ও তেজ।

জেলায় বোরো চাষ সফল করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগ এরইমধ্যে সারের বরাদ্দ পেয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ইউরিয়া তিন হাজার ৭০০ মে.টন, টিএসপি ১ হাজার ২০০ মে.টন, এমওপি এক হাজার ৪শ’ ৩৯ মে. টন ও ডিএপি ১ হাজার ৬৪ মে. টন। বোরো চাষে সেচ সুবিধা প্রদানের জন্য ১ হাজার ৮৯৫টি গভীর ও ৯ হাজার ৮৫৪টি অগভীর নলকূপ প্রস্তুত করা হয়েছে।

জেলা সদরের কাদোয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল বারিক বলেন, কয়েকদিনের তীব্র শৈত্যপ্রবাহে আর ঘন কুয়াশায় নষ্টের পথে বীজতলা। দেখা দিয়েছে নানা প্রকার রোগবালাই। এমন বৈরী আবহাওয়ার কারণে বীজতলার চারা নষ্ট হলে বিপাকে পড়বেন জেলার কৃষক।

একই গ্রামের কৃষক সাদেকুল ইসলাম জানান, টানা এক সপ্তাহ ধরে ঘনকুয়াশা আর তীব্র শৈত্যপ্রবাহে ধানের বীজতলায় দেখা দিয়েছে হলদে ধরনের রোগ, যাতে কোনো প্রকার ওষুধ ছিটিয়েও লাভ হচ্ছে না। এ অবস্থায় কৃষি বিভাগের সহায়তা চাওয়ার পাশাপাশি আসছে মৌসুমে বোরো ধানের চাষ নিয়েও অনেকটা শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

কোমর গ্রামের কৃষক মোকলেছুর রহমান নতুন বীজতলা তৈরি করে সবেমাত্র বীজ বপন করেছেন। তিনি বলেন, যদি বৈরী আবহাওয়ার কারণে চারা না গজায় এবং বীজতলা নষ্ট হয় তাহলে এ মৌসুমে বোরো উৎপাদনে চরম বিপর্যয়ের মুখে পরবেন এ জেলার চাষিরা।

পাঁচবিবি উপজেলার ফিসকাঘাট এলাকার মোসলেম উদ্দিন জানান, ২০ বিঘা জমির জন্য ৩০ কেজি বীজ ফেলেছি। কৃষি অফিসের পরামর্শে পরিচর্যা করায় কোনো অসুবিধা হয়নি।

কালাই উপজেলার দেবখণ্ডা গ্রামের নূরুল মাস্টার ৫০ বিঘা জমির জন্য দুই মণ ও বানদিঘী গ্রামের আনোয়ার হোসেন ২০ বিঘা জমির জন্য দেড় মণ হাইব্রিড ধানের বীজ জমিতে ফেলেছিলেন। শীতের কারণে চারা গজায়নি। আবার নতুন করে বীজ ফেলতে হবে। না হলে চারা কিনতে হবে।

আক্কেলপুর রোয়ার গামের জিয়াউল হক জিয়া জানান, ৬০ বিঘা জমির জন্য পর্যায়ক্রমে দুই মণ বীজ ফেলেছিলাম। প্রথম দফায় এক মণ বীজ ফেলেছি কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু পরের দফায় এক মণ বীজ থেকে কিছু চারা নষ্ট হয়ে পড়েছে।

ক্ষেতলাল উপজেলার দক্ষিণপাড়া গ্রামের চপল হোসেন জানান, ১০ বিঘা জমির জন্য ২০ কেজি বীজ ফেলেছিলাম। এরপর থেকেই শৈত্যপ্রবাহের কারণে কোনো চারা গজায়নি। এখন বোরো ধান উৎপাদনের জন্য চারা কেনা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় জানান, প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশার কবল থেকে বীজতলা রক্ষার জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যাতে করে জেলায় ৭২ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা পুরোপুরি পূরণ করা যায়।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন