তানোরে বজ্রপাত ভয়ে মিলছে না ধানকাটা শ্রমিক

  18-05-2018 08:18PM

পিএনএস, তানোর (রাজশাহী) সংবাদদাতা : তানোরজুড়ে চলছে বোরো ধান কাটার ধুম। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে জমিতে পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের হাজারো চাষী। শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত হয়েছে বজ্রপাত আতঙ্ক।

মূলত: বজ্রপাত আতঙ্কে ধান কাটতে মাঠে যেতে চাচ্ছে না শ্রমিকরা। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উপ-প্রকৌশলী মো: এনামুল হক জানিয়েছে, গত তিন বছরে বজ্রপাতে তানোরে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। এর মধ্যে চলতি বছরেই মারা গেছে ৩ জন। অন্যদিকে রাজশাহী জেলাতে গত তিন বছরে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন ৪২ জন। এর মধ্যে চলতি অর্থ বছরের এক মাসেই মারা গেছেন ১৩ জন।

সর্বশেষ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী সদর ইউনিয়নের শিমলায় সেলিম হোসেন এবং মোহনপুর ইউনিয়নের চান্দলাই এলাকায় আবদুল্লাহ নামের এক শিশু মারা যায়। জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে শিমলা এলাকার মাঠে অন্য কৃষকদের সঙ্গে বোরো ধান কাটছিলেন সেলিম হোসেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হয়।

এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সেলিম। একই সময়ে মোহনপুরের চাঁন্দলাই গ্রামে বজ্রপাত হয়। এতে মারা যায় শিশু আবদুল্লাহ। একই বজ্রাঘাতে জ্ঞান হারান খৈবুর রহমান ও সইবুর রহমান নামে দু’জন। পরে চিকিৎসার পর তারা সুস্থ হন।

মেঘ দেখে ক্ষেত থেকে কাটা বোরো ধান কৃষকের আঙিনায় তুলছিলেন এ দুই শ্রমিক। এ সময় সেখানে খেলছিল শিশু আবদুল্লাহ। এ ঘটনায় সেখানে থাকা একটি মহিষও মারা যায়। এর আগে ৯ মে জেলার তানোর উপজেলার কামারগাঁও বাতাসপুরে বজ্রপাতে মারা যান ওই গ্রামের কৃষক আনসার আলী।

এ ঘটনায় আহত হন আরও তিন কৃষক। ওই দিনই বজ্রপাতে তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের দুবইল নামোপাড়ার সোহাগ আলী এবং কলমা ইউনিয়নের চকরতিরাম এলাকার কৃষাণি এলেনা মুরমু মারা যান।

এদের মধ্যে আনসার আলী ও এলেনা মুরমু অন্যান্য কৃষি শ্রমিকের সঙ্গে বোরো ধান কাটছিলেন। আর সোহাগ আলী মাঠে নলকূপে সেচ দিচ্ছিলেন। বজ্রপাতে মৃত্যুতে আতঙ্কে এ অঞ্চলের কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা। এতে ক্ষেতের পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় চাষীরা।

উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বোরো চাষী হাসিবুর রানা বলেন, বাড়তি মজুরি দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। তার ওপর রয়েছে বজ্রপাত আতঙ্ক। এতে মাঠের অর্ধেক জমির ধানও কাটতে পারেননি চাষীরা। এখন প্রতিদিনই নামছে ভারি বৃষ্টিপাত।

তানোর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, বর্তমানে তানোর জুড়েই বিরাজ করছে বজ্রপাত আতঙ্ক। এতে চড়া পারিশ্রমিক দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। যারা কাজ করছেন তারাও থাকছেন আতঙ্কে।

বজ্রপাত অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতোই বলে জানিয়েছেন উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা: শওকাত আলী। তিনি বলেন,এটি মোকাবেলার আগাম প্রস্তুতি নেই। তবে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। আহতদের দেয়া হয়েছে ১০ হাজার টাকা করে চিকিৎসা সহায়তা। এছাড়া হতাহত দু:স্থ্য পরিবারগুলোকে ৩০ কেজি করে চালও দেয়া হয়েছে।

শওকাত আলী বলেন, উপজেলায় বজ্রপাতে যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই মাঠে কাজ করেন। বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে না থেকে যতটা সম্ভব ঘরে থাকতে হবে। বিশেষ করে মাঠের গভীর নলকূপের পাকাঘরে আশ্রয় নেয়া যেতে পারে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন