ফরিদপুরে কৃষকের মুখে হাসি ফুটালো বাঙ্গি

  05-06-2018 06:50AM


পিএনএস ডেস্ক: ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলায় চলতি বছর বাঙ্গি বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি। রমজান মাসে বাঙ্গি বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় বেশ খুশি চাষিরা। বাঙ্গি বিক্রির টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের ঈদের পোশাক ক্রয় করবেন চাষিরা। ফরিদপুরে উৎপাদিত বাঙ্গি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। অল্প সময়ে অধিক লাভ কেবল বাঙ্গি চাষেই সম্ভব বলে জানালেন কৃষি বিভাগ।

সারাদিন রোজা রাখার পর বাঙ্গি জুস দিয়ে ইফতারের তুলনা হয় না। বাঙ্গি’র জুস ঠান্ডা হওয়া রোজাদারদের বাঙ্গির প্রতি আগ্রহ বেশি থাকে। আর সেকারণে রমজান মাসকে সামনে রেখে প্রতিবছরের ন্যায় চলতি বছরেও সদরপুর উপজেলায় ব্যাপক হারে বাঙ্গি চাষ করেছেন চাষিরা। রোজার শুরু থেকেই বাঙ্গির বাজারজাত শুরু হয়েছে। চাষিরা এখন মাঠ থেকে বাঙ্গি তোলা এবং বাজারজাত করতে ব্যস্তসময় পার করছেন। চাষিদের সাথে মাঠে কাজ করছে কৃষাণীরাও।

সদরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাঙ্গি চাষ ব্যাপকভাবে হয়ে থাকে। লাভ ভাল হওয়ায় প্রতিবছর রমজানকে টার্গেট করে বাঙ্গি চাষ করে চাষিরা। বাঙ্গি বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় দিনের পর দিন কৃষকেরা ঝুঁকছেন বাঙ্গি চাষে। বর্তমানে সদরপুর উপজেলার ১০টি গ্রামে চাষ হচ্ছে বাঙ্গি। এখান কার উৎপাদিত বাঙ্গি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, খুব ভোর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাঙ্গি তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কেউ কেউ ক্ষেত থেকে তোলা বাঙ্গি ভ্যান, নসিমন করে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন।

বাঙ্গি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্যে উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মটুকচর, কাটাখালি, আবুলের মোড়, বাঁধানোঘাট, ভাষানচর ইউনিয়নের নতুন বাজার, কারিরহাট, আমিরাবাদ এলাকায় প্রতিদিন সকাল বিকাল হাট বসছে।

এবছর দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। হাটগুলোতে রমজানের শুরুতে মধ্যম ও বড় শ্রেণির একশ বাঙ্গির দর ছিল ২ হাজার ৫শত টাকা। বাছাইকৃত বাঙ্গির শ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শত টাকা পর্যন্ত।
কৃষক নুরু বলেন, ফলন ভাল হয়েছে। বাজারে দামও ভাল পাচ্ছি। এর উপর নির্ভর করে আমাদের জীবিকা। ঈদের কেনাকাটাও এই বাঙ্গি বিক্রির টাকায় হয়। এখানকার বাঙ্গি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা পূরণ করে থাকে। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা আগামীতে আরও বেশি চাষ করতে পারব।
সদরপুর উপজেলার কাটাখালি এলাকার বাঙ্গি চাষি আবুল হোসেন বলেন, তিন বিঘা জমিতে এবছর বাঙ্গির আবাদ করেছিলাম। ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছি।

সদরপুর উপজেলার শৈলডুবী এলাকার কৃষক চান মিয়া জানান, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি জানান, গতবছরের তুলনায় এবছর বাঙ্গির চাহিদাও বেশ বেড়েছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাঙ্গি কিনতে ব্যবসায়ীরা আসছেন।
ভাষানচর এলাকার কৃষক সোবাহান জোয়াদ্দার বলেন, আমার ক্ষেতের বাঙ্গি বিক্রি করে দিয়েছি, প্রায় অর্ধলাখ টাকা লাভ করেছি এবছর। তিনি বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাঙ্গির হাট বসে সেখানে আমি বাঙ্গি বিক্রি করেছি। এছাড়া ক্ষেত থেকেও অনেক ব্যবসায়ী বাঙ্গি কিনে নিয়ে গেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর প্রায় ৬৪০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির আবাদ হয়েছে। চারা রোপনের ৪৫দিন পর থেকে বাঙ্গি তোলা যায়। এক বিঘা জমিতে খরচ ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আর বিক্রয় হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রয় করা সম্ভব।

সদরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ফরহাদুল মিরাজ বলেন, বাঙ্গি স্বল্প সময়ে একটি লাভ জনক ফসল। রমজান মাসকে সামনে রেখে বাঙ্গি চাষ করে থাকে। বাঙ্গি ইফতারে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বীজ রোপনের ৪৫ থেকে ৬০ দিনে বাজারজাত করা যায়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাঙ্গি যায়। এক বিঘা জমিতে খরচ ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আর বিক্রয় হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রয় করা সম্ভব। বাঙ্গি চাষ করে কৃষকেরা স্বাভলম্বী হয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপপরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, সদরপুরের উৎপাদিত বাঙ্গির চাহিদা সারা দেশে আছে। ইফতারিতে এটি খুবই জনপ্রিয় ফল। ঢাকায় একটি মার্কেটও আছে। সেই হিসাবে বাঙ্গি খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতি ফসল হিসাবে সদরপুরে চাষ হচ্ছে। এবছর ৬৪০ হেক্টর জমিতে যে বাঙ্গির চাষ হয়েছে, যা এখন বাজারজাত হচ্ছে। প্রায় তিন কোটি টাকার বাঙ্গি উৎপাদিত হবে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিষমুক্ত বাঙ্গি উৎপাদনের জন্য সহযোগিতা করে থাকি।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আগামীতে আরও বেশি বাঙ্গির আবাদ করবেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন