‘কারেন্ট পোকায়’ ভেস্তে যেতে বসেছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন

  06-11-2019 03:45PM

পিএনএস, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত নওগাঁর অন্যতম খাদ্য ভান্ডার মহাদেবপুরে দিগন্তজোড়া মাঠে কার্তিকের শেষে হিমেল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে আমন ধানের সোনালি শীষ। ৮ থেকে ১০ দিন পরই কৃষকরা ঘরে তুলবেন সোনালি ফসল; ভরে যাবে গোলা, মুখে ফুটবে হাসি। কিন্তু কয়েক মাস ধরে নিবিড় পরিচর্যার পর শেষ মুহূর্তে এসে কারেন্ট পোকার (বাদামি গাছ ফড়িং) আক্রমণে ভেস্তে যেতে বসেছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। আক্রান্ত ধান ক্রমেই শুকিয়ে চিটায় পরিণত হচ্ছে। পোকার আক্রমণ ঠেকাতে মাঠে মাঠে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষকরা। তাতেও মিলছে না প্রতিকার।

উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন রোপণের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধান উৎপাদন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষক। তবে যেসব মাঠে এ পোকার আক্রমণ দেখা দেয়নি, সেসব এলাকায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলার নওহাটা, চৌমাশিয়া, বাগধানা, কৃষ্ণপুর, উত্তরগ্রাম, শিবরামপুর, বামনসাতা, সফাপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধান ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কারেন্ট পোকার নাম প্রসঙ্গে কৃষকরা বলেন, ‘এটা এমন এক জাতের পোকা যা কোন ফসলের মাঠে আক্রান্ত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পুরো ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। কারেন্টের মতো দ্রুত গতির কারণেই এটি কৃষকদের কাছে কারেন্ট পোকা নামে পরিচিত।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২৮ হাজার ৩’শ ৪০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। এর মধ্যে উফশী জাতের স্বর্ণা-৫ ১২ হাজার ৬’শ ৪০ হেক্টর , লম্বাস্বর্ণা- ১ হাজার ২’শ ২০ হেক্টর , ব্রি-৪৯ ১ হাজার ৫’শ ৯০ হেক্টর, ব্রি-৫১ ১ হাজার ৫’শ হেক্টর , ব্রি-৫২ ৫’শ হেক্টর , ব্রি-৩৪ ৪’শ ৬০ হেক্টর , ব্রি-৭২ ৩০ হেক্টর ও বিনা-৭ ১’শ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। উপজেলায় মোট ১৮ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে উফশী জাত ও বাঁকি ১০ হাজার ৩’শ হেক্টর জমিতে দেশীয় চিনি আতব (সুগন্ধি) জাতের ধান চাষ হয়েছে।

উপজেলার বাগধানা গ্রামের কৃষক সমরাজ মন্ডল বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমির ধান পেকে গেছে বল্লেই চলে, সেই ধানে হঠাৎ করে কারেন্ট পোকা আক্রমণ করায় কীটনাশক স্প্রে করেছি; তারপরও কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে ক্ষেত রক্ষা করতে পারিনি। মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে ধান ক্ষেত মরে যাওয়ার দৃশ্য দেখে অন্য কোম্পানির কীটনাশক এনে আবারো স্প্রে করেছি।’ উপজেলার বামনসাতা গ্রামের কৃষক মাজেদুর রহমান বলেন, ‘কীটনাশক স্প্রে করেও কারেন্ট পোকা দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে স্প্রে করলে ২-৩ দিন কিছুটা আক্রমণ কম থাকে। ’

উপজেলার চৌমাশিয়া গ্রামের কৃষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বাজারের কীটনাশকগুলো ভেজাল কিনা কতৃপক্ষকে তা পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। কারণ কীটনাশক স্প্রে করার পরও কারেন্ট পোকা দমন হচ্ছে না; ২-৩ দিনের ব্যবধানে আবারো আক্রমণ করছে।’

কারেন্ট পোকার আক্রমণ সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে দাবি করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, ‘সচেতনতা সৃষ্টির জন্য এরই মধ্যে কৃষকদের মাঝে এ সম্পর্কিত প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়েছে এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করা হচ্ছে। কারেন্ট পোকার হাত থেকে রেহাই পেতে আলোক ফাঁদের মাধ্যমে পোকা নির্ণয় করে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।’

পিএনএস/মো. শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন