হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস

  03-12-2019 04:24PM

পিএনএস, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : অতীত-বর্তমানের রেষারেষির যাতাকলে পড়ে নওগাঁর মহাদেবপুরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস। কালের পরিক্রমায় প্রতি বছরই হাজির হয় শীত। সকালে ঘাসের ডগায় শিশির ভেজা মুক্তকণা জানান দিচ্ছে শীতের। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান নিয়ে হাজির হয় এ ঋতু। তার মধ্যে অন্যতম খেজুর রস। শীতের সাথে রয়েছে খেজুর রসের এক অপূর্ব যোগাযোগ। শীতকালের শুরুতেই গ্রাম গঞ্জের মনুষেরা খেজুর গাছ ছিলানো (কাটা) নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। কে কার আগে রস সংগ্রহ করতে পারে। বিশেষ করে শীত মৌসুম এলে গাছিদের আনন্দের সীমা থাকতো না। শীতের ভোরে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা মহাব্যস্ত হয়ে পড়তো। কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুঁলে-ঝুঁেেল রস সংগ্রহ করতো গাছিরা।

খেজুর রস সংগ্রহ করে নতুন আমন ধানের পিঠা ভাপা-পুলি ও পায়েশ তৈরির ধুম পড়ে যেতো গ্রামে গ্রামে। শীত যতো বাড়তে থাকে খেজুর রসের মিষ্টতাও তেমন বৃদ্ধি পায়। এক সময় খেজুর রসের মন মাতানো গন্ধে মৌ মৌ করত পল্লী গ্রামের অলি গলি। শীতের সকালে খেজুর রসে ভিজিয়ে মুড়ি না খেলে গ্রাম গঞ্জের মানুষদের যেন দিনটাই ভালভাবে শুরু হতো না। শীতের সকাল মানেই গ্রামের অলি গলিতে চলতো রস-মুড়ির আড্ডা। সময় বয়ে চলার সাথে সাথে রস-মুড়ি খাওয়ার সকালের সেই পারিবারিক আড্ডা বর্তমানে আর দেখা যায়না।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাড়ি-ঘর নির্মাণ আর নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে খেজুর গাছের সংখ্যা পল্লী গ্রামে অস্বাভাবিক ভাবে কমে গেছে। যে হারে গাছ কাটা হয়েছে; সে হারে রোপণ করা হয়নি। যা আছে তাও সঠিকভাবে পরিচর্যা না করা এবং গাছ ছিলানোর (কাটা) পদ্ধতিগত ভুলের কারনে প্রতিবছর অসংখ্য গাছ মারা গেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও পেশাদার গাছির সংকট।

তারপরেও উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ইতিমধ্যে শখের বশতঃ গাছিরা নামমাত্র রস সংগ্রহ করছে। হয়তো সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন খেজুর রসের কথা মানুষের মন থেকে হারিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্মের কাছে খেজুর রস রূপকথার গল্পের মতো মনে হবে। সচেতনদের মতে, বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তার পার্শ্বে, পরিত্যক্ত স্থানে পর্যাপ্ত পরিমানে খেজুর গাছ রোপণ করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে খেজুর গাছের রস ও গুড় সম্পর্কে কোন গল্পকথা বলতে হবে না।

উপজেলার কর্ণপুর গ্রামের গাছি ছামাদ বলেন, ‘শীত মৌসুম এলে গাছ ছাটাই করে রস বিক্রির টাকায় ভালভাবে সংসার চালাতে পারতাম। আগে প্রতি বছর শীত মৌসুমে নিজের গাছ ছাড়াও নির্ধারিত অর্থ বা গুড় দেয়ার চুক্তিতে অন্যের ১০-১৫ টি গাছ ছিলতাম (কাটা)। কিন্তু এখন গাছ মরে যাওয়া এবং গাছ বিক্রি করার কারনে মাত্র একটি গাছ কাটি। গাছ কম থাকায় গ্রামবাসী খেজুর রস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের গাছি মুনু মন্ডল বলেন, ‘শীত মৌসুম এলেই সারা বছর অযতেœ অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুর গাছের কদর বেড়ে যেতো। আমার নিজস্ব খেজুর গাছ না থাকলেও আমি মালিকদের গাছ ছাটাই করে সংগ্রহীত রসের একটি অংশ প্রদান করতাম।’

এ ব্যাপারে উপজেলার সফাপুর গ্রামের কফিল উদ্দিন নামে এক প্রবীণ বলেন, ‘এক সময় আমাদের এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে, জমির আইলে, রাস্তার পার্শ্বে ও পতিত জমিতে সারি সারি খেজুর গাছ ছিল। বর্তমানে খেজুর গাছ মরে যাওয়া এবং বিক্রি করার কারনে খেজুর গাছ নেই বল্লেই চলে। বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা কমতে কমতে বিলুপ্ত প্রায়।’

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন