বোরোর আবাদে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা

  05-02-2020 05:41AM

পিএনএস ডেস্ক: উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের বেশিরভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর। এই অঞ্চলে এখন বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বীজতলা থেকে চারা তোলা, ক্ষেত তৈরি ও চারা রোপণে ভীষণ ব্যস্ত তারা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কৃষকরা কাজ করছেন। লক্ষ্মীপুরে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক কৃষকের বোরো ধান লাগানো প্রায় শেষ। আবার কেউ কেউ বোরো চারা লাগাতে শুরু করেছেন। মাইলের পর মাইল কৃষকের স্বপ্ন সবুজ বোরো ধানের চারায় ভরে গেছে। বাতাসের সঙ্গে দোল খেয়ে বড় হচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। তারা বোরো ধান চাষে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করছেন।

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ২৯ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে বোরো (ইরি) ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধানের উৎপাদন ধরা হয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন।

তিনি বলেন, জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় বোরো ধানের আবাদ হবে সবচেয়ে বেশি। এ উপজেলায় বোরো চাষে ১২ হাজার ৯২০ হেক্টর জমি প্রস্তুত করা হয়েছে। রামগঞ্জে আট হাজার ২০০, রায়পুরে সাত হাজার ৭৮০, কমলনগরে ৩৫০ ও রামগতিতে ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, জেলার বেশিরভাগ স্থানে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে আবাদের জন্য জমি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা।

লক্ষ্মীপুর কৃষি অফিস জানায়, সঠিক সময়ে বোরো ধানের চারা রোপণ করলে ফলন ভালো হয়। চারা এলোমেলোভাবে না লাগিয়ে সারিবদ্ধভাবে লাগাতে হয়। সুষম সার ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা বাড়ে। সাধারণ ইউরিয়া সারের পরিবর্তে গুটি ইউরিয়া সার ব্যবহার করলে অধিক কার্যকর ফল পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে ধানের আবাদ করায় অধিক ফলন পাবে কৃষক।

সদর উপজেলার চররুহিতা এলাকার কৃষক আজাদ উদ্দিন জানান, বংশগতভাবে তারা কৃষি কাজ করছেন। প্রতি বছর জমিতে ধান চাষ করেন। এবারো তার জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং রোগবালাই না হলে এবার ভাল ফলনের আশা করছেন তিনি।

ভবানীগঞ্জ এলাকার কৃষক হানিফ মিয়া, রমজান আলী ও এবাদত উল্যা জানান, সার, কামলা ও পানিসহ সব কিছুরই দাম বেশি। শুধু ধানের দাম কম। এতে আমাদের লোকসান হয়। কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পায় এ ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ কামনা করেন তারা। তবে বিগত কয়েক বছর থেকে সরকারিভাবে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে গুদামে ধান ক্রয় করায় খুশি তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. বেলাল হোসেন খান বলেন, ধানের বীজতলা থেকে বোরো ধান রোপণ করা পর্যন্ত এখনো কৃষকের কোনো ক্ষতি হয়নি। উঁচু জমিতে এ ধান চাষ কারা ভালো। আমরা ধান রোপণের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি এবং কৃষি বিভাগ কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করছে।

তিনি আরো বলেন, পোকা দমনে অধিক পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করে চাষিরা। এতে প্রকৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই আবাদ করা জমিতে ‘পাচিং’ পদ্ধতি অবলম্বন করে পোকা-মাকড় দমনে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদনে খরচ কম হয়। বর্তমানে কৃষকরা হাইব্রিড (উন্নত ফলনশীল) জাতের ফসলের দিকে ঝুঁকছেন বেশি। আশা করি সামনের বছরগুলোতে বোরো ধানের উৎপাদন বাড়বে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সব সময় কাজ করছেন।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন