সরিষা চাষে স্বাবলম্বী আরমান মিয়া

  10-02-2020 04:26PM

পিএনএস, নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদীতে সরিষা চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কৃষক আরমান মিয়া। প্রতিদিনই তার সরিষা ক্ষেত পরিদর্শনের পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শও নিচ্ছেন জেলার দূর দূরান্ত থেকে আগত কৃষকরা। বর্তমানে এই উপজেলায় ধানের পাশাপাশি অধিক লাভজনক হওয়ায় সরিষা চাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার কৃষকরা ধানে লাগাতার লোকসান দেওয়ায় আরমান মিয়ার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ঝুঁকছেন সরিষা চাষে। সফল চাষি হিসেবে আরমান মিয়া এখন একটি পরিচিত নাম।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে নরসিংদী সদর উপজেলার পুরাতন রেললাইন সংলগ্ন ফসলের মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠ ভর্তি শুধু সরিষা আর সরিষার চাষ। অধিকাংশ জমিতে গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সরিষার ফলন ধরেছে। সরিষার বাম্পার ফলনে অধিকাংশ জমির চারা ফলনের ভারে নুয়ে পড়েছে। কিছু কিছু জমিতে এখনো বিরাজ করছে হলুদের সমারোহ। হলুদে ছেয়েছে দিগন্ত বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। যে দিকেই তাকাই শুধু হলুদ আর হলুদ। দূর থেকে দেখে মনে হয় পুরো মাঠেকে যেন হলুদ গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। বসন্তের আগমনী জানান দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু হাওয়ার দোলায় দুলছে হলুদ সরিষা ফুল। এ যেন হলুদ সমুদ্রে ঢেউয়ের পর ঢেউ আছড়ে পড়ছে। যে দিকে তাকাবেন হৃদয় ছুঁয়ে যাবে সরষে ফুলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে। একরাশ আত্মতৃপ্তির হাসিমাখা মুখে আরমান মিয়া বলেন, ফসলের ক্রমাগত লোকসানে যখন পথে বসি ঠিক সেই মুহূর্তে উন্নতমানের সরিষার বীজ দিয়ে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সাহায্যের হাত বাড়ায়। তাদের দেওয়া বারি-১৪ জাতের উন্নতমানের সরিষার বীজ বপন করে অল্প খরচে কম সময়ে অধিক ফসল উৎপাদন করে আজ আমি স্বাবলম্বী। আমার সফলতায় উৎসাহিত হয়ে সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে সরিষা চাষ করে জেলার অনেক কৃষক এখন স্বাবলম্বী। সরিষা চাষে খরচ একেবারে নেই বললেই চলে। কিন্তু লাভ অন্য ফসল চাষের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। তাই নরসিংদীর কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়ছেন বলেও জানান তিনি। সরিষা চাষি আব্দুল হান্নান বলেন, অন্যান্য কৃষকদের কথায় আগ্রহী হয়ে গত বছর তিনি প্রাথমিকভাবে দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছিলেন। সরিষার ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় এ বছর তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ায় এ বছরও তিনি অধিক লাভবান হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সরিষা চাষি মাদরাসা ছাত্র শরিফ মিয়া বলেন, সরিষার ভালো ফলনে আনন্দিত হলেও এখন তার সে আনন্দ ম্লান হতে বসেছে। তার জমি প্রধান সড়কের পাশে হওয়ায় সরিষা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলা থেকে সৌন্দর্য প্রেমীরা এসে ভিড় জমাচ্ছেন। অনেকেই ছবি তোলার অজুহাতে জমিতে নেমে ফসল পায়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে ফেলছে।

জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শাফায়েত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, এ জেলার কৃষকদের মধ্যে সরিষার ফলন বাড়ানোর লক্ষ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে বারি-১৪ সরিষার বীজ দেওয়া হয়েছিল। যা অল্প দিনের মধ্যেই কৃষকদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। চলতি মৌসুমে এ জেলাতে মোট সরিষার চাষ হয়েছে প্রায় চার হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে বারি-১৪ সরিষার চাষ হয়েছে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে আর টরি-৭ চাষ হয়েছে এক হাজার হেক্টর জমিতে, বাকি গুলোতে অন্যান্য জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। গত বছর চার হাজার ১শ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিল যা চলতি বছরের তুলনায় কম ছিল। আমন আর ইরি ধান চাষের মধ্যে যে সময়ে জমি পতিত থাকে সে সময়ে চাষ হওয়া সরিষার তেমন কোনো উৎপাদন খরচ নেই। কৃষকরা বোনাস ফসল হিসেবে এটা পেয়ে থাকে। এছাড়াও জমিতে জৈব সারের অভাব পূরণ হয়। ফলে এ চাষ দিনদিন কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, এ জেলার মাটি সরিষা চাষে খুবই ভালো। তাছাড়া অন্যান্য ফসলের তুলনায় খরচ কম ও অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেক কৃষকই সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বছরে সদর উপজেলার ৮শ কৃষকের মধ্যে বিঘা প্রতি এক কেজি উন্নত মানের সরিষার বীজ ও ২০ কেজি করে বিনামূল্যে সার বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন