আমন সংগ্রহে সরকারের রেকর্ড

  11-03-2020 07:37PM

পিএনএস ডেস্ক : এবার আমন ধান কেনার ক্ষেত্রে রেকর্ড করেছে আওয়ামী লীগ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ সোয়া ৬ লাখ টন ধান কেনা হয়েছে। প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে দেশের ১৬ উপজেলায় কৃষক অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনা হয়েছে। আগামীতে এই অ্যাপের মাধ্যমে ধানের পাশাপাশি চালও কেনা হবে।

বুধবার সচিবালয়ে আমন সংগ্রহ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এসব তথ্য জানান। এ সময় দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চলতি আমন মৌসুমে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৯১ টন ধান সংগ্রহ করব। এর মধ্যে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৮ টন সেদ্ধ চাল ও ৪৩ হাজার ৯০০ টন আতপ চাল। এই উদ্দেশে উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা, খাদ্য কর্মকর্তাসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের ২৫টি টিম মাঠে কাজ করেছে। ছোটখাট বিচ্যুতি ছাড়া কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি প্রায় ৬ লাখ ২৭ হাজার টন ধান সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে। যা অতীতে কখনো হয়নি। ধানের লক্ষ্যমাত্রার ৯৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ, সেদ্ধ চাল ৯৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ ও আতপ চাল ৯৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আশা করি, আমরা সাকসেসফুল হয়েছি।

জানা গেছে, আমনে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৭ টন ধান, ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪০৭ টন সেদ্ধ চাল ও ৪৩ হাজার ৯০০ টন আতপ চাল সংগ্রহ করেছে খাদ্য অধিদফতর। ধান কেনার ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। ১৬টি উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের কর্মকৌশল দিয়ে চেষ্টা করেছি। ভুল-ত্রুটি থাকতেই পারে। কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় এক সঙ্গে কাজ করলে যে ভালো কিছু করা যায়, এটা একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা আস্তে আস্তে কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেয়ার উদ্দেশে যতখানি প্রয়োজন, হয়তো একসময় সবটুকু ধানে চলে যেতে পারি, আমাদের সেই পরিকল্পনা রয়েছে।

কৃষক অ্যাপের মাধ্যমে চাল কেনা প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী বোরো মৌসুমে অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ৬৪ জেলার একটি করে উপজেলায় ধান ও ১৬ উপজেলায় মিলারদের কাছ থেকে চাল কিনবে সরকার। ধান কেনায় সফলতা আসায় এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আমনে পরীক্ষামূলকভাবে ১৬ উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে ৩০ হাজার ১৭০ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেখানে ২৯ হাজার ৭০১ টন ধান কেনা হয়েছে।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে না আসতে পারে, সেজন্য লটারির ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এটাকে আরও গ্রহণযোগ্য করার জন্য ১৬টি উপজেলায় (১৬ জেলার) অ্যাপের মাধ্যমে ধান ক্রয় করেছি। আমরা এটাতে সাকসেসফুল হয়েছি। সামনের বোরোতে বাকি (৪৮ জেলার) ৪৮টি উপজেলাকে অ্যাপের আওতায় নিয়ে আসব পাইলট আকারে। যাতে পরবর্তী সময়ে সবগুলোতে পাইলট আকারে নিয়ে আসতে পারি।

এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০টি প্যাডি সাইলোর প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে আছে। আমরা হয়তো আগামী অর্থবছর থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারব। এতে ৬ হাজার কোটি টাকার বিষয় রয়েছে। আশা করি, এই অর্থবছরে একনেক পার করে নিয়ে সামনের অর্থবছর থেকে বাস্তবায়নে যেতে পারব।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ফসল উৎপাদন করে কৃষক যদি লাভ করতে না পারে তবে তার জীবনের প্রয়োজনগুলো কীভাবে মেটাবে! গত বোরোতে কৃষক দাম পায়নি। তখন থেকেই আমরা চিন্তা করছিলাম কীভাবে কৃষকের কাছ থেকে সরাসারি ধান কিনে বেনিফিট দেয়া যায়। আমনের আগে আমরা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে কোনো মূল্যে চাষির কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। অত্যন্ত আনন্দের কথা যে গত আড়াই-তিন মাস ধরে ধান সংগ্রহ হচ্ছে। ধানের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন হয়েছে। এটা একটা অসাধারণ অর্জন। আমি আশাবাদী বোরোতেও সফলভাবে চাষির কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করতে পারব। এর প্রভাবে কিছুটা হলেও বাজারের ওপর পড়বে এবং পড়েছে। এই মুহূর্তে মোটা ধান প্রায় ৮০০ টাকা। চিকনটার দাম অস্বাভাবিকভাবে একটু বেশি ১২০০-১৩০০ টাকা। মোটা চালের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছে।

ধানের আর্দ্রতা মাপার জন্য মিটার কেনা হয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষকের বাড়ি গিয়ে কৃষি কর্মকর্তা ময়েশ্চার মিটার দিয়ে ধান মেপে দেবে। তারপর কৃষক সরকারি গুদামে সেই ধান পৌঁছে দেবে। এতে কৃষকের হয়রানি কমবে, ধান বাড়িতে ফেরত নিতে হবে না।

অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি যে কোনো দিন একনেকে উঠবে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য গতকাল (মঙ্গলবার) অর্থ মন্ত্রণালয় ১০০ কোটি টাকা ছাড় দিয়েছে, যা ডিস্ট্রিবিউশন করে দিয়েছি।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠনের ৫ বছর হলেও এটি কার্যকর হতে পারেনি কেন- এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠানটির জনবল ছিল না। ইতিমধ্যে তারা জনবল নিয়োগ দিয়েছে। প্রত্যেক জেলায় অফিস করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে মূল সমস্যাটা হচ্ছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষে যিনিই আসেন, তারই দেড়-দুই মাস চাকরি থাকে। একজন যাওয়ার পর আরেকজন আসলেন, তিনি দুইমাস-আড়াইমাস পর চলে গেলেন। এবার জনপ্রশাসন অনেক চয়েজ করে একজনকে দিয়েছে, উনি আগামী রোববার জয়েন করবেন। আমরা চরম আশাবাদী যে, নতুন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের নিয়ে মাঠে একেবারে সচেষ্টভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ব।

স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষে পোস্টিংয়ের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হচ্ছে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরাও স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের চেয়েছিলাম। তাদের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য বলেছিলাম। আমরা চিঠিও দিয়েছি, কিন্তু তারা (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) দিতে রাজি নন, তারা বলছে- এরা আমাদের স্টাফ, আমরা বেতন দিই, যদি নিতে চান তবে আপনারা বেতন দিয়ে চালান।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন