করোনার প্রভাবে বিপাকে টমেটো চাষীরা

  14-04-2020 07:50PM

পিএনএস ডেস্ক:দিনাজপুরে সদরে বিস্তৃত সবুজের মাঠ যে দিকে তাকাই সেদিকেই টমেটোর আবাদ। থোকায় থোকায় সবুজ রঙের টমেটো ঝুলছে। এর মধ্যে কিছু কিছু টমেটো লাল রং হতে শুরু করেছে ।

লাল রঙের টমেটোগুলি টসটসে লাল দেখলেই মন জড়িয়ে যায় । টমেটোগুলিকে চাষীরা বাজারজাত শুরু করেছে। লাল টকটকে টমেটো দেখার পর মন ব্যাকুল হয়ে যায় । মনে হয় অনেকগুলি কাচাই সালাদ করে খওয়া যাবে । কিন্তু লাল টকটকে টমেটো বাজার নিয়ে যাওয়ার মন খারাপ হয়ে যায়। এককেজি লাল টকটকে টমেটোর দাম ৩ টাকা থেকে ৪ টাকা ধরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

টমেটো চাষী জানায়, এক বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করতে চাষীদের খরচ পড়েছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এই টাকা যোগান করতে টমেটো চাষীদের কে এনজিও থেকে ঋণ কিংবা গরু বিক্রি করেতে হয়েছে। সেখানে এক কেজি টমেটো উৎপাদন করতে চাষীদের খরচ হয়েছে ৭ থেকে ৮ টাকায় । প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি করে ক্ষতি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ টাকা। এই অবস্থায় টমেটো চাষীরা চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

দিনাজপুর জেলায় এই গ্রীস্মকালীন টমেটোর আবাদ হয়েছে ১ হাজার ১ শত ৫৪ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ ও যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঢাকা, নারায়নগঞ্জ জেলাসহ দেশের অন্যান্য জেলা হতে টমেটোর ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না।

এতে করে হাজার হাজার মেঃ টন টমেটো নিয়ে বিপাকে পড়েছে টমেটো চাষীরা। এতে করে লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। স্থানীয় টমেটোর গাবুড়া বাজারে প্রতিদিন কয়েক হাজার মেঃ টন লাল টসটসে টমেটো নিয়ে আসা হচ্ছে। ভ্যান ভাড়া নিয়ে খাজা ভতিৃ করে টমেটো বাজারে নিয়ে আসার পর মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে টমেটো চাষীদের। অনেক সময টমেটো বিক্রির সিংহ ভাগ ভ্যান ভাড়া দিয়েই চলে যেতে হচ্ছে চাষীদেরকে। এতে করে একদিকে যেমন কমেছে দাম অন্য দিকে টমেটো ক্ষেতের মধ্যে রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে টমেটো নিয়ে চাষীদের আহাজারী আর আর্তনাদ ছাড়া কিছু নেই।

দিনাজপুরে ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে এই এলাকায় টমেটোর আবাদ চাষ হয়েছিল ১ হাজার ১ শত ২১ হেক্টর জমিতে এই মৌসুমে টমেটো উৎপাদন হয়েছিল ৫০ হাজার ২০৩ মেট্রিক টন। আর এব বছর গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৩ হেক্টর জমি বেশি আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায এ বছর উৎপাদনও বেশি হবে আশা চাষীদের । এই এলাকায় টমেটো গ্রীস্মকালে নাভী, রানী ও বিপুল প্লাস জাতের টমেটো চাষ বানিজ্যিক ভাবে হয়েছে।

দিনাজপুর সদরের শেখপুরা ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের টমেটো চাষী মোশাররফ হোসেন বলেন, টমেটো আবাদ করে এবছর করোনাভাইরাসের কারনে আমাদের বুক ফাটা কান্না ছাড়া কিছু নেই । আজ টমেটো ছিড়ার জন্য ৫ জন মহিলা শ্রমিক নিয়েছে ৫ মণ টমেটো ছিড়ে বাজারে বিক্রি করেছি ৫ শত টাকা। এক মন টমেটোর দাম ১ শত টাকা, আর এক শ্রমিকের মজুরী তিনশত টাকা পাঁচ জনের মজুরী দিতে হবে ১৫ শত টাকা। বাকী টাকা আমি কোথায় থেকে দিব। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা টমেটো চাষীরা মাঠে মারা যাব ।

হোসেনপুর গ্রামের আল আমিন বলেন, এ বছর ১ বিষা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছি। এই টমেটো আবাদ করতে আমার খরচ পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা । টমেটোর ফলনও খুবই ভাল হয়েছে। এ বছর করোনাভাইরাসের কারনে টমেটো বাজার না পাওয়া টমেটো হয়ত গাছেই থাকবে। কারণ বাজারে নিয়ে যাওয়ার পর পাইকার না থাকায় ফেলে দিয়ে আসতে হচ্ছে ।

হোসেনপুর গ্রামের মজিবর রহমান বলেন ,জমিতে টমেটো দেখে মন ভরে গেলেও ক্রেতা না থাকায় কেউ কেউ টমেটো নিয়ে ফেলে দিচ্ছে। কারন টমেটো পচনশীন ফসল হওযায় জমিতে রাখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন সার ও কীট নাশকের দোকানে বাকী ও এনজিও ঋনের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিতায় কপালে ভাস পড়েছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তৌহিদুল ইকবাল বলেন ,কৃষি বিভাগের বিশেষ দিক নির্দেশনায় গ্রীস্মকালীন টমেটোর ভাল ফলন হয়েছে। এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে পাইকার আসতে না পারায় এই আপদকালীন সময়ে ত্রাণ সামগ্রীর সাথে এই টমেটো সংযোগ করে দেয়া হলে কিছুটা হলেও চাষীরা মুল্য পেতে পারেন।

তিনি আরোও বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ এই বৈশ্বিক সমস্যার কারনে জেলা ভিত্তিক হিমাগার তৈরী করা হলে এই আপদকালীন সমযে টমেটো বা বিশেষ সবজি হিমাগারে সংরক্ষণ করে রাখা গেলেও চাষীরা তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পাবে বলে আমার ব্যাক্তিগত অভিমত। এই অঞ্চলে কাচা সবজি কিংবা লিচুর জেলা হওয়ায় কিছু দিন ধরে এই ধরনের জন্য হিমাগারের দাবি যৌক্তিক।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন