নাটোরের যুবক সেলিম কৃষি কাজ করেই ১৫ বছরে কোটিপতি!

  23-02-2015 03:21PM

পিএনএস, নাটোর : মোঃ সেলিম রেজা। বয়স ত্রিশের কোঠায়। নাটোর সদরের আহম্দেপুর এলাকার মোঃ নাজিম উদ্দিনের ছেলে। রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাষ্টার্স পাশ এই যুবক কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখেন ছোট বেলা থেকেই। একে একে চাকুরী নেন সেনাবাহিনী, ঔষধ কোম্পানী ও বীমা কোম্পানীতে। কোন চাকুরীই যেন তার ভাল লাগে না।

নিজেই কিছু করার চেষ্টা শুরু করেন। ২০০০ সালে সারা দেশের ঔষধী বৃক্ষরোপনের সরকারী প্রচারনায় উৎসাহিত হয়ে ২ বিঘা জমিতে ঘৃতকুমারী, মিছরীদানা ও শতমুল চাষ করেন। ভালো উৎপাদন হলেও উৎপাদিত পণ্য বিক্রির ভালো ব্যবস্থা না থাকায় ঔষধী চাষ বন্ধ করে দেন। ২০০৪ সালে ৩৮বিঘা জমিতে রোপন করেন আপেল কুল। মাত্র তিন বছরেই আপেল কুলের গাছ নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে তিনি কলম প্রযুক্তির মাধ্যমে এগুলোকে থাইকুলে রুপান্তরিত করেন। কুলের চাইতে দাম বেশী হওয়ায় ২০০৬ সালে ৯বিঘা জমিতে শুরু করেন বারো মাসি পেয়ারা চাষ। কিছুদিন পরে অসময়ে বাঙ্গী, গ্রীস্মকালীন পেঁয়াজ, লেবু, পেঁপে, ড্রাগন ও শরিফা চাষ শুরু করেন।

বর্তমানে ৭০ বিঘা জমিতে তার এসব ফসল রয়েছে। এই ৭০ বিঘার মধ্যে ২৪ বিঘা জমি নিজের এবং ৪৬ বিঘা প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় লীজ নেয়া। তার এসব ফসল রক্ষণাবেক্ষণে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছে ২৮জন শ্রমিক। ফসল তোলার মৌসুমে এখানে কাজ করে আরো শতাধিক শ্রমিক। এসব চাষাবাদের মধ্যে শরিফা ও ড্রাগন চাষে সে এখন ভীষন মনোযোগী। সেলিম রেজা মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় মাটিতে পঁচনশীল কৃষি প্রযুক্তি মালচিং পেপার যার এক পৃষ্ঠা সাদা ও অন্য পৃষ্ঠা কালো রংয়ের হয়ে থাকে। শীত প্রধান দেশে কালো পৃষ্ঠা মাটির উপরে এবং আমাদের দেশে সাদা পৃষ্ঠা মাটির উপরের দিকে রাখতে হয়। প্রথমে মাটিতে চাষ ও জৈব সার দিয়ে তৈরি করে মাটি ভালোভাবে মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। পরে নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা রোপন করতে হয়। এতে মাটিতে খাবার ও সেচ কম লাগে, আগাছা জন্মায় না লেবার কম লাগে, পোকা মাকড়ের আক্রমন কম হয় এতে মাটির আদ্রতা রক্ষাসহ ফসলের খাবারের প্রয়োজন হলে মাঝে যে ড্রেন থাকে সেই ড্রেনের ভেতর সেচ দিয়ে ড্রেনের ভিতর খাবার প্রয়োগ করলে গাছ তা গ্রহন করে।

সেলিম রেজা মনে করেন, আমাদের দেশে এ পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষাসহ অর্গানিক ও কম খরচে বিভিন্ন ফল, সবজি, ফুল যেমন-ষ্ট্রবেরী, পাতা ও বাধাকপি, বেগুন, শসা, করলা, পটল, পুই শাক, লেবু, শরিফা পেয়ারাসহ নিদিষ্ট দূরত্বে যে সকল ফসল উৎপাদন করবে তার সবগুলোই উৎপাদন সম্ভব। গত তিন বছর ধরে সেলিম তার খামারে পরীক্ষামূলক এ পদ্ধতির ব্যবহার করে আসছেন।

সেলিম রেজা জানান, ২০০০ সালে মাত্র ২৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ২বিঘা জমিতে ঔষধী গাছ লাগানোর মধ্যেমে যে কাজ তিনি শুরু করেছিলেন আজ তা সুবিশাল আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ৭০ বিঘা জমিতে তার ফসল ফলাতে বীজ, পানি, শ্রমিক সহ নানা খাতে বছরে ব্যয় হয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা। আর গত বছর খরচ বাদেই তার লাভ হয়েছে কোটি টাকার ওপরে। তিনি মনে করেন, যে কোন চাকুরীর চাইতে কঠোর পরিশ্রম, বুদ্ধি আর একাগ্রতা থাকলে আমাদের দেশের জমিতে ফসল ফলিয়ে যেকোন যুবক ১০ থেকে ১৫ বছরেই পুরোপুরি স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

পিএনএস/মো.সাইফুল্লাহ/মানসুর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন