চিনি আতব ধানে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে চলছে নানা কর্মকাণ্ড

  23-11-2020 03:46PM

পিএনএস, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুরে চলতি আমন মৌসুমে চিনি আতব (সুগন্ধী) ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে তৎপর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বাদামী ঘাস ফড়িং, ব্লাস্টসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকা ও রোগের হাত থেকে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন রক্ষায় চলছে নানা সচেতনতা মূলক কর্মকান্ড। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে উপসহকারী কৃষি অফিসাররা প্রতিটি ব্লকে মৌসুমের শুরু থেকেই ক্ষেতে সঠিক সময় সেচ, সার ও বালাইনাশক প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৩০টি ব্লকে প্রত্যেক সপ্তাহের মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ধান ক্ষেতের আইলে আলোক ফাঁদ পেতে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি নিশ্চিত করে কৃষকদের বালাইনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে মসজিদ-মন্দিরে সমাবেশ, বিভিন্ন হাট-বাজারে দল ভিত্তিক ও কৃষকদের ঘরে ঘরে গিয়ে আলোচনা এবং সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণসহ নানা কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে আসছে কৃষি বিভাগ। এতে কৃষকরা সহজেই তাদের ধান ক্ষেতে আক্রমণকারী ক্ষতিকর পোকা ও রোগ চিহ্নিত করতে পারছেন এবং কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে বালাইনাশক প্রয়োগ করে বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে ফসল রক্ষা করছেন। প্রতিদিনই উপজেলার কোন না কোন গ্রামে গিয়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাদেবপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৮ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৮ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে উফশী জাত ও বাঁকি ১১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে চিনি আতব ধান চাষ হয়েছে। যা মোট আমন চাষের প্রায় ৪১ ভাগ।

উপজেলার প্রায় ২০টি অটো রাইস মিলে প্রতিদিন এক হাজার মেট্রিক টনের অধিক চিনি আতব চাল উৎপাদন হয়। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা, বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর, যশোর, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।

চিনি আতব চালের পোলাও, বিরিয়ানি, পায়েস ইত্যাদি খাবার এ অঞ্চলে প্রাচীনকাল থেকেই জনপ্রিয়। সুস্বাদু ও সুগন্ধিযুক্ত হওয়ায় এসব খাবার বাদ দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন কিংবা অনুষ্ঠান যেন অপূর্ণ থেকে যায়। বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন সামাজিক উৎসবে চিনি আতব চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এদিকে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমেরিকাসহ মধ্যপাচ্যের দেশগুলোতে চিনি আতব চাল রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে বলে চাল উৎপাদনকারী অটো রাইসমিল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

সরেজমিনে উপজেলার উত্তরগ্রাম, শিবরামপুর, সফাপুর, চকরাজা, দাশড়া, সরস্বতীপুর, শ্যামপুর, খোর্দ্দনারায়ণপুর, বাগধানা, নলবলো, ধনজইল, চৌমাশিয়া, সুজাইল, গোষাইপুর, হাসানপুর ও রাইগাঁসহ বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়- বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে চিনি আতব ধানের শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। দৃষ্টিসীমা ছাপিয়ে চারিদিকে বিরাজ করছে অপার দুলুনি। আর এ দোলায় লুকিয়ে আছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন। এবার চিনি আতব ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা কোন বিপর্যয় না ঘটলে কৃষকদের বাড়ির আঙ্গিনা ভড়ে উঠবে সোনালী ধানের হাসিতে। বর্তমানে শেষ মহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে কাটা-মাড়াই শুরু হবে।

উপজেলার সফাপুর গ্রামের কৃষক বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘কৃষি বিভাগের সহায়তায় কয়েকদিন পর পর ধানের ক্ষেতের আইলে আলোক ফাঁদ পেতে ধান ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি জানতে পারছি। পরে কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুসারে জমিতে প্রয়োজন মাফিক বালাইনাশক প্রয়োগ করি। এতে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে পারছি।’

উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের কৃষক লতিফ বলেন, মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছি। আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হলেও চিনি আতব ধান কাটতে আরো ১০-১২ দিন সময় লাগবে। তিনি বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এলাকায় চিনি আতব ধানের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, উঠান বৈঠক করে কৃষকদের নানা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের ঘরে ঘরে গিয়ে আলোচনা এবং সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণসহ মাঠে নানা কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। পোকা দমনে পার্চিং ও আলোক ফাঁদ পদ্ধতিতে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে দেশের সর্বাধিক চিনি আতব ধান (সুগন্ধী) মহাদেবপুরে চাষ হয় । বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা না দিলে কৃষকরা বাম্পার ফলন পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

পিএনএস/এসআইআর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন