মাঠে মাঠে আমন ধান কাটার ধুম!

  24-11-2020 04:36PM

পিএনএস, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : নানা প্রতিকূলতার মাঝেও তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে বগুড়ার শেরপুরের কৃষকদের চোখে-মুখে। তাঁরা ইতিমধ্যেই চলতি রোপা-আমন মৌসুমের ধান গোলায় ভরতে শুরু করেছেন। গ্রামের মাঠে মাঠে চলছে আমন ধান কাটার ধুম। বিশেষ করে বরেন্দ্র এলাকাখ্যাত উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান কাটতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর কৃষাণীরা সেই ধান মাড়াইয়ে বাড়ির উঠনে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ধানের ফলন কম হলেও ধানের বাজার ঊর্ধ্বমুখি থাকায় ভালো দাম পাচ্ছেন তাঁরা। সবমিলে বাঁধার পাহাড় ডিঙিয়ে ধানেই কৃষকের চোখে-মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। কৃষকরা জানান, বিঘা প্রতি জমিতে ১০-১৫মণ হারে আমন ধানের ফলন হচ্ছে। আর এসব কাঁচা ধানই বাজারে ১হাজার ৪০টাকা থেকে ১হাজার ২৬০টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ২১হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে সেই লক্ষ্যমত্রা ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ৪০০হেক্টর বেশি জমিতে এবার আমন ধানের চাষ হয়েছে। সে অনুযায়ী ৬১হাজার ৪০ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রটি জানায়। কিন্তু ধানের ফলন কম হওয়ায় সেই সম্ভাবনা এখন শঙ্কায় পরিনত হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কেবলই সোনারঙা ধানের সমারোহ। আর সেসব ক্ষেতের জমির ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কিষাণীরা। বিশেষ করে বরেন্দ্রখ্যাত উপজেলার ভবানীপুর, বিশালপুর, কুসুম্বী, মির্জাপুর ও শাহবন্দেগী ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এসব দৃশ্য দেখা যায়।

এসময় কথা হয় ঘোলাগাড়ী কলোনী এলাকার বাসিন্দা কৃষক রহমত আলী ভোলার সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার পনের বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলেন। নানা দুর্যোগ মোকাবেলায় অনেক ধকল গেছে। বিশেষ করে অতিবর্ষণ ও বাতাসের কারণে শেষমুহূর্তে ধান মাটিতে পড়ে যায়। এতে করে ধানের ফলন কম হচ্ছে। প্রতিবিঘা জমিতে ১০থেকে ১২মণ হারে ফলন নামছে। তবে বাজারে ধানের দাম একটু ভালো থাকায় লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলে জানান তিনি। একই ধরণের মন্তব্য করেন সাধুবাড়ী গ্রামের কৃষক গোলাম রব্বানী, আনিছুর রহমান ঠাণ্ডু। মামুরশাহী গ্রামের সোহেল হাজি বলেন, বিশ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেন। ইতিমধ্যে দশ বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। বিঘা প্রতি ধান কাটতে খরচ হচ্ছে ২৫০০ থেকে ২৮০০টাকা। ফসলি মাঠের দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি করে আরও বেশি টাকার বিনিময়ে ধান কাটছেন। তবে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ধানের ফলন কম হচ্ছে। কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এই কৃষক আরও বলেন, এই উপজেলায় ব্রি-ধান ৪৯, ব্রি ধান-৫৮, বিনা-৭, রঞ্জিত, স্বর্ণা ও কাটারিভোগ জাতের ধান বেশি চাষ হয়েছে। এসব কাঁচা ভেজা ধান প্রতিমণ ব্রি ধান-৪৯ ১হাজার ৮০ থেকে ১১৩০টাকা, স্বর্ণা ধান ১১২০টাকা, কাটারিভোগ ১১৮০ থেকে ১২৩০টাকা, ব্রি-ধান-৫৮, বিনা-৭ ও রঞ্জিত ধান একই দামে ১০৮০থেকে ১১০০টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. শারমিন আক্তার বলেন, এ উপজেলায় কৃষকের কষ্টার্জিত আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ে শুরু হয়েছে। নানা প্রতিকূলতার পরেও আমনের ফলন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে ধানের দামও বেশ ভালো। সবমিলে কৃষকের চেখে-মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

পিএনএস/এসআইআর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন