মরিচের জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত চরাঞ্চলের কৃষক

  09-01-2021 06:52PM

পিএনএস ডেস্ক : ধান চাষ করে ক্ষতির মুখ দেখার পর লাভের আশায় মরিচের জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষক। চার দফা বন্যার কারণে এবার যেমন রোপা আমন ধান চাষ করে ক্ষতির শিকার হয়েছেন তারা, তেমনি মাটি ভেজা থাকায় আগাম এবং সঠিক সময়ে মরিচ চাষ করতে পারেনি।

তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের গাছ পরিমিত শক্তি এবং ফলন দেয়ার সামর্থ্য নিয়ে তর তর করে বেড়ে উঠায় কৃষক লাভের আশায় বুক বেঁধেছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, পুরো জেলার চাষের জমির লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি জমিতে মরিচ চাষ হয় সারিয়াকান্দি উপজেলায়। এই উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্যে সাত ইউনিয়ন চর। জেলায় এবার মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাত হাজার ৬১৫ হেক্টর জমি। এখন পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ছয় হাজার ৯৬৫ হেক্টর।

এই সংখ্যক জমির মধ্যে শুধুমাত্র সারিয়কান্দি উপজেলাতেই মরিচের চাষ হয়েছে তিন হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করা হয়েছে ১৭৩৫ হেক্টর এবং দেশি উফশী জাতের মরিচ চাষ করা হয়েছে ১৯৭০ হেক্টর জমিতে। উপজেলাতে মরিচ চাষের জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল চার হাজার হেক্টর জমি। চার দফা বন্যার কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি।

কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, মরিচ চাষের মৌসুম শুরু হয় মূলত নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। কৃষকরা জমিতে বীজ বপন করেন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে কেউ কেউ ভালো দাম পাওয়ার আশায় অক্টোবর থেকেই আগাম জাতের মরিচ চাষ করে থাকেন। এছাড়া দেরিতে চাষ করলে শীতে কুয়াশার কারণে মরিচের গাছে রোগ বালাই দেখা দেয়। এজন্য আগাম জাতের চাষ করতে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

ইতোমধ্যে আগাম মরিচের আগাম চাষীরা ফসল সংগ্রহ করে বিক্রি শুরু করেছেন। তবে মরিচ চাষ করার ৫০ দিন পর থেকে ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। এরপর ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যেই ফলন সংগ্রহ করা যায়। শুকনো মরিচ করার জন্য কৃষক জমি থেকে ফসল সংগ্রহ করে চাষ করার চার থেকে পাঁচ মাস পর।

সারিয়াকান্দির চরবাটিয়া গ্রামের কৃষক আহম্মদ আলী জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। আগাম করতে পারেননি। জমির মাটি ভেজা ছিল। তিন বিঘা জমিতে তিনি দেশী উফশী জাতের মরিচ লাগিয়েছেন। এক বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করে ফসল তোলা পর্যন্ত তার খরচ পড়বে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো। তিনি জমির মরিচ পাকিয়ে শুকনো মরিচ করে বিক্রি করবেন।

এক বিঘা জমি থেকে তার শুকনো মরিচ সংগ্রহ হবে আট থেকে ১০ মণ। শুকনো মরিচের মৌসুমে বাজারে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা প্রতি মণ বিক্রি হয়। সেই হিসাবে তিনি এক বিঘা জমি থেকে মরিচ বিক্রি করবেন প্রায় ৪৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। তার লাভ হবে প্রায় দ্বিগুণ।

কাজলা গ্রামের মরিচ চাষী লেমন জানান, মরিচের জমিতে মাসে দুইবার পানি দিতে হয়। এ সময় জমিতে সারও দেয়া হয়। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে কীটনাশক দিতে হয়। পরিচর্যা এই। তিনি দুই বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করেছেন। হাইব্রিড জাতের মরিচ কাঁচা মরিচ হিসেবেই বাজারে বিক্রি করা হয়। এই মরিচ কখনো পাকানো হয় না। হাইব্রিড জাতের মরিচের গাছ থেকে একাধিকবার ফসল সংগ্রহ করা হয়। গাছ কেটে অথবা নষ্ট না হলে গাছে ফলন আসার পর থেকে জুন-জুলাই মাস পর্যন্ত ফলন দেয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) শাহাদুজ্জামান জানান, সা‌রিয়াকা‌ন্দি উপ‌জেলা‌তেই সব‌চে‌য়ে বে‌শি ম‌রিচ চাষ হয়। জেলায় এবার ম‌রি‌চের উৎপাদন লক্ষ‌্যমাত্রা ধরা হ‌য়ে‌ছে ১৬ হাজার ৩৭২ মে‌ট্রিক টন। আশ‌া করা হ‌চ্ছে লক্ষ‌্যমাত্রার চে‌য়ে উৎপাদন বে‌শি হ‌বে। পু‌রো দে‌শের ম‌ধ্যে বগুড়া‌তেই সব‌চে‌য়ে বে‌শি ম‌রি‌চের উৎপাদন হয়। বি‌ভিন্ন মসলা প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানি বগুড়ার ম‌রিচ কিনে তাদের ব্র‌্যান্ডে সারা দেশেই বি‌ক্রি ক‌রে।

পিএনএস/এসআইআর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন