সুস্বাদু কুল-অর্থনৈতিকভাবেও লাভজনক-বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব

  12-03-2015 02:26PM

পিএনএস (কামাল পাশা দোজা):সুস্বাদু কুল-অর্থনৈতিকভাবেও লাভজনক-বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
আমাদের দেশে সারা বছরেই বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ করা হয়। কুল বা বরই হচ্ছে বাংলাদেশে অন্যতম একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল।দেশের প্রায় সব জেলাতেই কমবেশী কুল চাষ হয়। তবে রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল,সাতষক্ষীরা, বগুড়া, ময়মনসিংহে ভালো ও উন্নত জাতের কুল, বরই বা বড়ই চাষ হয়। কুলের ইংরেজি নাম Ber ও বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Ziziphus mauritiara.
কুলে বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য এবং ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ আছে। কুল পাকা ও টাটকা অবস্থায় খাওয়া হয়। এছাড়া কুল দিয়ে চাটনি, আচার ও নানান মুখরোচক খাবার তৈরি করা হয়। কুল খেতে সুস্বাদু। তাই ছোট বড় সবার কাছেই এই ফলটি প্রিয়। আমাদের দেশে অনেক জায়গায় এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কুল চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। কুল বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
আমাদের দেশে বেশ কিছু জাতের কুলের আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে কুমিল্লা কুল, সাতক্ষীরা কুল, রাজশাহী কুল, আপেল কুল, বাউ কুল উল্লেখযোগ্য। এদিকে ভালো ফলন আর দাম ভালো পাওয়ায় পঞ্চগড়ে কুল বড়ইয়ের চাষ বাড়ছে। বিশেষ করে দেবীগঞ্জ ও বোদা উপজেলায় এই বড়ইয়ের চাষ হচ্ছে বেশি। ইতিমধ্যে এই দুই উপজেলার প্রায় দুইশ’ কুলচাষি স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। আরো অনেকেই কুল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তারা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত আপেল কুল ও বাউকুল জাতের বড়ই চাষ করে এমন সাফল্য অর্জন করেছেন।
জানা গেছে, গত কয়েকবছর যাবৎ কুল চাষ লাভজনক হওয়ায় দেবীগঞ্জ ও বোদার বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা তাদের বাগানে ও বাড়িতে কুল চাষ সম্প্রসারণ করেছেন। চাষিরা বলেছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপেল কুল ও বাউকুল গাছে ফল ধরে। মাত্র ৪ মাস সময়ের মধ্যেই এ জাতীয় কুল গাছে ফলন আসে। ফলে অনেক যুবক কুল চাষে এগিয়ে এসেছেন এবং অর্থনৈতিকভাব অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, দেবীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় দুইশ’ কৃষক কুল বড়ই চাষে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই কুল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছেন।
দেবীগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ-আল-মামুন জানান, এখানকার চাষিরা বাউকুল ও আপেলকুলসহ বিভিন্ন জাতের বড়ইয়ের চাষ করছেন। বাজারে এসব বড়ই উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে।
দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীডুবা গ্রামের মানিক মিয়া গত ছয় বছর যাবৎ কুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি জানান, এবার প্রায় ৮ বিঘা জমিতে তিনি কুলের চাষ করেছেন। এবার কুল চাষে তার প্রতি বিঘা জমিতে ৩০/৩২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি আশা করছেন এবার কুল চাষে তার ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা লাভ হবে।
বরই কিংবা কুল দুই নামেই সমান পরিচিত ফলটি। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে সব মাটিতেই জন্মে গাছটি। যত্নআত্তির বালাই ছাড়াই দিব্যি বেঁচে থাকে বছরের পর বছর। এক সময় এই গাছটি অবহেলাতেই বেড়ে উঠত। এখন কিন্তু বরইয়ের সেই দিন নেই। বড় যত্ন করে চাষ করা হয়। ফলটি যেমন অর্থকরী, তেমনি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।
বরইয়ে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ আছে নানা কিছু। রোগ প্রতিরোধে যেমন ভূমিকা রাখে, অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। বরই সবার জন্য ভালো হলেও ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য কিন্তু না। পাকা বরইয়ে চিনি থাকে, তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের পাকা বরই না খাওয়াই ভালো। আর যাঁদের শ্বাসকষ্ট আছে, কাঁচা বরই বেশি খেয়ে ফেললে তাঁদের শ্বাসকষ্ট কিন্তু বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
বরই যেসব কারণে অনন্য, আসুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক এবার...
শক্তি জোগাবে বরই
বরইয়ের উপাদানগুলো শরীরে শক্তির জোগান দেয়। অবসাদ কেটে যায় দ্রুত।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ
বরই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ। এটি যকৃতে সুরক্ষা বর্ম তৈরি করে এবং ক্যানসারের বিরুদ্ধেও লড়তে পারে।
বয়স বেঁধে রাখে
বরই বয়সের ছাপ পড়তে বাধা দেয় শরীরে।
ত্বক সুরক্ষায়
ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ত্বককে কোমল করে বরই। রোদে পোড়া ত্বক সুরক্ষার কাজেও কার্যকর।
ক্ষুধাবর্ধক এবং হজমে
বরই কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্যান্য হজমজনিত সমস্যার সমাধান করে। ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
হাড় ও দাঁতের জন্য
বরই একই সঙ্গে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসসমৃদ্ধ হওয়ায় হাড় গঠনে এবং দাঁতের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে।
আপেল কুল
দেশে অনেক জাতের কুল চাষ হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আপেল কুল।আপেল কুল বাংলাদেশের একটি লাভজনক সম্ভাবনাময় ফল। এই কুলের রঙ আপেল সাদৃশ হওয়ার কুলটির নাম দেওয়া হয়েছে আপেল কুল। কষহীন মিষ্টি স্বাদের আর আগাম পাকে বলে অন্যান্য কুলের চেয়ে এর চাষ দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।
অনেকের ধারনা আপেল কুল বিদেশি জাত। ভ্রান্ত ধারনা এটা। এর আবিষ্কারক বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মোফাজ্জল হোসেন । বর্ষাকালই কিন্তু কুল লাগানোর আদর্শ সময়।কুল বা বড়ই যেকোন মাটিতেই জন্মে,এমনকি লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতাও সহ্য করতে পারে। তবে বেলে দো-আঁশ মাটিতে কুলের ফলন ভালো হয়।
বানিজ্যিকভাবে চাষ করতে চাইলে বর্গাকার রোপণ পদ্ধতি ভালো হবে। এই ক্ষেত্রে চারা-চারার রোপণ দূরত্ব হবে ৫-৬ মিটার।
চারা রোপণের ১৫-৩০ দিন পূর্বে ১x১x১ মিটার আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে,প্রতি গর্তে পচা গোবর ২০-২৫ কেজি, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম এবং ইউরিয়া প্রত্যেক প্রকারের সার ২০০-২৫০ গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশিয়ে চারা রোপণ করতে হবে।
সাধারনত,আমরা বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদে পানি দেই না কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে হালকা সেচ দিলে যে কোন প্রকার গাছের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। তেমনি কুলেও হালকা সেচ দিলে পরবর্তীতে ফলন ভালো হয়। তবে ভালো ফলনের জন্য অবশ্যই ফুল ও ফল ধরার সময় ১২ -১৫ দিন অন্তর পানি দিতে হবে,এতে ফল ঝরে যাবে না,স্বাদ ভালো হবে,মিষ্টতা বাড়বে। আর গাছ তলা পরিষ্কার রাখতে হবে।। প্রতি বছর গাছের বয়স অনুযায়ী সার দিলে গাছের বৃদ্ধি সুষম হয়। ১ বছর বয়সী গাছে ক্যানোপী ছাড়া শাখা-প্রশাখা বের হওয়া মাত্রই সুন্দর করে কেটে দিবেন,তাহলে গাছের সেপ ভালো থাকবে।
কুল গাছের অন্যতম প্রেক্টিস হলো প্রুনিং(ডাল ছাটাই)। কুলের নতুন শাখা ছাড়া ফুল আসে না। যত ভালো প্রুনিং করা হবে,নতুন শাখা তত বৃদ্ধি পাবে,ফলে ফুল-ফলের সংখ্যা তত বৃদ্ধি পাবে। আবার এত ছাটাই করা যাবে না যে,সালোক সংশ্লেষনের প্রয়োজনীয় কারখানা মানে পাতা কম থাকে।
রোগ-বালাই নিয়ে জিজ্ঞাসা থাকলে,কমেন্টে আলোচনা করা যাবে।
খুবই জনপ্রিয় ফল কুল
বড়ই’র মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টি গুন। বড়ই আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটা ফল। যদিও এর আদি নিবাস আফ্রিকা, তবু বাংলাদেশে তো বটেই এটি পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় বহুল পরিচিত একটি ফল। মজার ব্যাপার হলো বরই-এর সরাসরি কোনো ইংরেজি নাম নেই! তবে সাধারণত একে Jujube বা Chinese date নামে ডাকা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ziziphus zizyphus। আমাদের দেশে ডিম্বাকার বরইকে সাধারণত ‘কুল বরই’ বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Zizyphus mauritiana।
বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই, সব ধরনের মাটিতে বরই গাছ জন্মে। বরই গাছ ছোট থেকে মাঝারি আকারের ঝাঁকড়া ধরনের বৃক্ষ। বরই গাছ সাধারণত ১২-১৩ মিটার লম্বা হয়। এই গাছ পত্রঝরা স্বভাবের অর্থাত্ শীতকালে পাতা ঝরে এবং বসন্তকালে নতুন পাতা গজায়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে গাছে ফুল আসে এবং ফল ধরে শীতকালে। কাঁচা ফল সবুজ। তবে পাকলে হলুদ থেকে লাল রং ধারণ করে। কাঁচা ও পাকা দু ধরনের বরই-ই খাওয়া যায়। স্বাদ টক ও টক-মিষ্টি ধরনের। তবে কুল বরই মিষ্টি হয়। বরই শুকিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। কাঁচা ও শুকনো বরই দিয়ে চমত্কার চাটনি ও আচার তৈরি করা যায়।
স্বাদের বড়ই আচার
শীতশেষে টক মিষ্টি দেশী কুল / বড়ই / বরই মন টানে সবার। সে বড়ইয়ের টক-ঝাল-মিষ্টি আচার হলে জিভে জল ধরে রাখা দায়।
বরই ফলের এত গুণ!
সবুজ, লাল-সবুজ-হলুদ রঙের ছোট ছোট ফলগুলো দেখলেই জিভে জল এসে যায়। এগুলো দেখতেই সুন্দর না খেতেও অনেক সুস্বাদু। টক বরই, দেশি কুলবরই, বিদেশি কুলবরই, মিষ্টি বরই নানা ধরনের বরই। আবার বরইয়ের আচার ছোট-বড় সবাই পছন্দ করে। কুল বরইয়ের চাটনির কথা শুনলেও জিভে জল এসে যায়। আবার এর রয়েছে নানা ধরনের গুণ।
এরই মধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে বরই। বর্তমানে আমাদের দেশে চাষিরা নানা জাতের বরইয়ের চাষ করে থাকে। শীতের অন্যান্য ফসলের চাষের পাশাপাশি রবই একটি।
এর আদি নিবাস আফ্রিকা হলেও বর্তমানে এটি ভারত, আফগানিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিছু অঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছে। [১]
উত্তর ভারতের প্রতিটি বরই গাছে বছরে ৮০ থেকে ২০০ কেজি পর্যন্ত বরই ফলে। দশ থেকে বিশ বছর বয়সী গাছেই ফলন বেশি হয়।
অপার সম্ভাবনার দেশ আমাদের বাংলাদেশ।এক সময়ে দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল।এখন আর সে অবস্থা নেই।ধান গমের পাশাপাশি প্রচুর খাদ্য-শস্য এখন দেশে উৎপাদিত হয়। কুল,বরাই কিংবা বড়ই এমনি একটি সুস্বাদু,মিষ্টি ও পুষ্টিকর ফল।দেশের মানুষের বিকল্প খাদ্য হিসাবে পুষ্টির অনেকটা পুরনে সহায়ক হবে কুল।তারপর বিদেশে রপ্তানী করে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

পিএনএস/কাপাদো

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন