হাঁড়িভাঙা আম পাল্টে দিচ্ছে রংপুরের অর্থনীতি

  23-06-2016 06:39AM

পিএনএস:রংপুরে হাঁড়িভাঙা আমের হাটবাজার ভরে উঠেছে। বাম্পার ফলন ও বাজারদর ভালো হওয়ায় স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন আমচাষিরা। হাঁড়িভাঙা আম পাল্টে দিচ্ছে রংপুরের অর্থনীতি। রংপুর জেলায় ১৬২ কোটি টাকার আম বিক্রির আশা করছে কৃষি বিভাগ। তবে এবার উৎপাদিত হাঁড়িভাঙা আমের বিক্রি ২৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আমচাষিরা মনে করেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।

রংপুর অঞ্চলের হাঁড়িভাঙা আমের কারণে রাজশাহীর ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, অরুণা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্ণ রেখা, মিশ্রি দানা, নীলাম্বরী, কালীভোগ, কাঁচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপুলি, কারাবউ, কেউই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপুরি, পাহুতান, ত্রিফলা আম বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। রাজশাহী অঞ্চলের আমচাষিরা রংপুর থেকে হাঁড়িভাঙা আমের চারা নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ওই এলাকায় চাষের চেষ্টা চালাচ্ছে। রংপুরের পদাগঞ্জ ও বদরগঞ্জে স্টেশন বাজার হাঁড়িভাঙা আমাদের বড় পাইকারি হাট। এই হাট থেকে প্রতিদিন ট্রাকে করে হাঁড়িভাঙা আম নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। রংপুরের ফলের আড়ত ছাড়াও টার্মিনালের পশ্চিম কোণে বসেছে হাঁড়িভাঙার মিনিহাট।

এখান থেকে পাইকাররা আম নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও বিদেশে আম পাঠাচ্ছে। পদাগঞ্জে সরজমিন পরিদর্শনেই চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে হাঁড়িভাঙা আমের বাগান। এ অঞ্চলের কুতুবপুর, খোড়াগাছ পাইকারের হাট, পদাগঞ্জ, কদমতলী, পীরেরহাট, তাম্বলপুর মাঠের হাট, আখরেরহাট ছাড়াও সমস্ত এলাকা জুড়ে শ’ শ’ আম বাগানে আম ধরেছে কাঁড়ি কাঁড়ি। এখানকার মাটি আম চাষে সম্পূর্ণ উপযোগী হওয়ায় আমচাষিরা অন্য ফসলের চেয়ে আম চাষে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন।

পদাগঞ্জের আমচাষি আনসার বক্সি জানান, তিনি ৮ একর জমিতে আমের বাগান করেছেন। গত বছর তিনি ২ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। এ বছর তিনি আড়াই লাখ টাকার আম বিক্রি করার টার্গেট রেখেছেন। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বাগান মালিক সালাম সরকার ২টি বাগানের আম বিক্রি করেছেন প্রায় ১৬ লাখ টাকায়। বড় আম বাগানের মালিকদের মধ্যে খোড়া গাছ পাইকার হাটের নওশাদ, তার ভাই শওকত, বাবুল মিয়া ও আনসার অন্যতম। তারা প্রত্যেকে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। বদরগঞ্জ উপজেলার জয়নাল আবেদীন বলেন, হাঁড়িভাঙা আমার ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করেছে। মৌসুমের শুরুতে এ আম প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা দরে ও শেষের দিকে ১৫০-২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, রংপুরের আম বাগানকে ঘিরে বেকার শিক্ষিত হাজার হাজার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ মেহবাহুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে হাঁড়িভাঙা আমের বিস্তার ঘটেছে। আম বাগানের মধ্যে মিঠাপুকুর উপজেলাতে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৪ হাজার হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান রয়েছে।

চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এ মৌসুমে ১৬ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ আমের রোগবালাই কম হয়। চারা লাগানোর পরের বছরেই আমের মুকুল আসে। আর ৫-৬ বছর বয়সে গাছে পুরোদমে আম আসতে শুরু করে। এছাড়া বোঁটা শক্ত হওয়ায় গাছ থেকে তা অকালে ঝরে যায় না। পূর্ণাঙ্গ এক একটি আমের ওজন হাফ কেজি থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদিকে রংপুরের আম ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো সুযোগকে নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মালিকরা কেজি প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে। প্রশাসনের মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকার কারণে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তারা জনগনের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।


পিএনএস/বাকীবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন