শ্রীমঙ্গলের 'অক্টোপাস' বিদেশে রফতানি হচ্ছে

  12-09-2016 06:44AM


পিএনএস: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের অক্টোপাসসহ ১৫টি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ৩৭ দেশে। এতে বেকারত্বের হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছে প্রায় চার শ' নারী। এর মধ্যে হাইল হাওর পাড়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক শ' নারী রয়েছে। যারা তাদের বাড়ির আনুষাঙ্গিক কাজের ফাঁকে এবং লেখাপড়া চালিয়ে তৈরি করছে এসব পণ্য।

জানাযায়, ইউএসএইড এর অর্থায়নে বেসরকারি সংস্থা সিএনআরএস কর্তৃক বাস্তবায়িত ক্রেল প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল এসব নারীদের। তারা দীর্ঘ দুই মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করে হাতে বুননের বিভিন্ন পণ্য তৈরির কাজ। ইতোমধ্যে তাদের তৈরি বেশকিছু পণ্য ব্রিটেনসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে রফতানি করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে ২৫ জন নারীর একটি গ্রুপের কাছে অর্ডার আছে অক্টোপাসের।

উপজেলার মির্জাপুর এলাকার দক্ষিণ পাচাউন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি রুমের মধ্যে ১৫/২০ জন নারী গোল হয়ে বসে সুতা দিয়ে তৈরি করছে অক্টোপাস। এসময় কথা হয় দক্ষিণ পাচাউনের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সুরভী ভৌমিকের সাথে, সে জানায়, তারা একটি গ্রুপে ২৫ জন মেয়ে ক্রেল প্রকল্পের মাধ্যমে দুই মাস হাতে বুননের প্রশিক্ষণ পেয়ে বর্তমানে কাজের অর্ডার পেয়ে কাজ করছেন।


সুরভি বলেন, বর্তমানে ৫০টি অক্টোপাসের অর্ডার আছে। প্রতিটি অক্টোপাসে মেটেরিয়েলস বাদে মজুরী পাচ্ছি ৩০ টাকা। এর আগে বেশ কিছু পুতুল তৈরি করেছি আমরা। তবে আরো বেশি বেশি অর্ডার পেলে এবং আমাদেরকে মজুরি আরেকটু বেশি হলে ভাল হয়।

মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী লুবনা আক্তার বলেন, আমি স্কুলের পড়া-লেখার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমার দলে কয়েকজন কলেজের মেয়ে ও এলাকার ভাবীরা মিলে ২৫ জন আছি। ইতিমধ্যে আমরা বেশকিছু পুতুল তৈরি করেছি। এখন ৫০ পিসের ছোট একটি অর্ডার আমরা পেয়েছি। আমি বিশ্বাস করি এর মাধ্যমে আমি আমার পড়াশোনার খরচ নিজেই চালিয়ে নিতে পারবো।

ক্রেল প্রকল্পের কমিউনিকেশন অফিসার ইলিয়াস মাহমুদ পলাশের বলেন, ক্রেল প্রকল্পের মাধ্যমে কিভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল না থেকে সাবলম্বী করা যায় হাইল হাওর তীরবর্তী গ্রাম সমূহের নারী-পুরুষ তাদের নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা নারীদের পাশাপাশি হাওর পাড়ের পুরুষদেরও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছি।

ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড প্রটেকটেড এরিয়া ম্যানেজমেন্ট অফিসার পলাশ সরকার বলেন, ক্রেল প্রকল্প হাইল হাওরের চারদিকের বিভিন্ন গ্রামে আধুনিক পদ্ধতিতে জলবায়ু সহিষ্ণু সবজি চাষ করেছে যা দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এছাড়াও হাওর নির্ভরশীলদের তালিকা করে ক্রেল প্রকল্প গত চার বছরে হাইল হাওর সাইটের ২৮টি গ্রামের ১৩৮৯ জনকে বিভিন্ন আয় বৃদ্ধিমূলক কাজে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যার মধ্যে রয়েছে, সবজি চাষ, মাছ চাষ, হাঁস মুরগি পালন, হাতে বুনন, মোবাইল সার্ভিসিং প্রশিক্ষণ ইত্যাদি।

হাইল হাওর কর্ম এলাকার কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, হাইল হাওরের চারপাশের হাওর নির্ভরশীলদের হাওরের উপর নির্ভরশীলতা অনেক কমে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের প্রশিক্ষণ পেয়ে হাইল হাওর তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামের মানুষ এখন বর্ষাকালেও সবজি ফলাচ্ছে। এছাড়া মেয়েরা হাতে বুননের কাজ করছে।

হাতে বুননের কাজের রুরাল সেন্টার ম্যানেজার রেজোয়ান কাউসার বলেন, আমরা হাওর পাড়ের বেকার ও গরীব প্রায় ৪০০ মেয়েদেরকে হাতে বুননের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এসব মেয়েরা বাসা-বাড়ির সকল কাজের ফাকে প্রতিদিন ২/৩ ঘণ্টা করে কাজ করলে মাসে অন্তত ১৫’শ থেকে দুই হাজার টাকা বাড়তি আয় করতে পারবে। আর ফুল টাইম কাজ করলে মাসে অন্তত ৫/৬ হাজার টাকা রুজি করতে পারবে।



পিএনএস/ বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন