দেশে ৭৫ শতাংশ মোবাইল আসছে চোরাই পথে!

  17-10-2016 10:11AM

পিএনএস ডেস্ক: দেশের বাজারে মোবাইল হ্যান্ডসেটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চোরাই পথে মোবাইল আমদানির ঘটনা। ক্রেতার চাহিদা থাকায় ও সাধারণ ফোনের চেয়ে দাম বেশি হওয়ায় এসব ফোনসেট অবৈধ পথেই বেশি আনা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, কাস্টমস’র এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতিদিন অবৈধভাবে প্রবেশ করছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন। আর সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

কাস্টমস ও স্মার্টফোন ব্যবহারকারিদের তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে ব্যবহৃত ৭৫ শতাংশ স্মার্টফোন আসছে চোরাই পথে। বিমানবন্দরসহ দেশের অসংখ্য পয়েন্ট দিয়ে আসছে অবৈধ এসব ফোনসেট। তবে এর বেশিরভাগ আসে বিমানবন্দর হয়ে।

ঢাকা কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার পিস মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে স্মার্টফোনের সংখ্যা মাত্র ৬৮ হাজার। যদিও দেশে ব্যবহৃত স্মার্টফোনের সংখ্যা এর চেয়ে হাজার গুণেরও বেশি। সাধারণ মানুষের হাতে হাতে থাকা এত বিপুল পরিমাণ স্মার্টফোন এসেছে মূলত অবৈধ পথে। যা থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পায়নি।

জানা গেছে, চোরাইপথে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বৈধ আমদানির চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি স্মার্টফোন আসছে ল্যাগেজ পার্টির মাধ্যমে। চায়না, দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ আশপাশের অনেক দেশ হয়ে আসছে এসব স্মার্টফোন। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আনা ১০টির মতো মোবাইলের চালান আটক করে বিমানবন্দর কাস্টমস। সস্তা ডিভাইস বা কম্পিউটার এক্সেসরিজের ঘোষণা দেওয়া হলেও স্যামসাং, অ্যাপলের আইফোন, এইচটিসিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২ হাজারেরও বেশি স্মার্টফোন জব্দ করে কাস্টমস।

এ বিষয়ে কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘চোরাচালান প্রতিরোধ করা কাস্টমসের স্বতঃসিদ্ধ কাজের একটি অগ্রাধিকার বিষয়। কাস্টমসের অন্যান্য ফাংশনের মধ্যে রয়েছে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের মাধ্যমে আমদানি-রফতানির ব্যয় সাশ্রয় করা। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- দ্রুত খালাস দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তোলা। তবে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন যেমন, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এই সহজীকরণের যেন অপব্যবহার না হয় সেজন্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা কার্যকর করাটাও একটা চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, মনে রাখা দরকার, সব ব্যবসায়ী অসৎ নয়। এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য মুষ্টিমেয় অসাধু ব্যক্তির স্বেচ্ছায় আইন মেনে চলার (কমপ্লায়েন্স) প্রবণতা তৈরি করা। আর এই পরিসরে এনফোর্সমেন্ট ব্যবস্থাপনায় চোরাচালান প্রতিরোধের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট। চোরাচালানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থায়ন প্রতিরোধের বিষয়টি কাস্টমসের নতুন ভূমিকাকে জোরদার করবে। যেকোনো চোরাচালানের পণ্য আটক এবং রাজস্বফাঁকি রোধে সন্ত্রাস ও আন্তমহাদেশীয় অপরাধে অর্থ বিনিয়োগ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান, আটক ও তদন্ত করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কাস্টমস বর্তমানে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় শক্তিশালী বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সক্ষমতার দিক দিয়ে কাস্টমস অনেক দূরে গিয়েছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরি, ব্যবস্থাপনায় বাস্তবমুখী কৌশল অবলম্বন, স্বচ্ছতার পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টির মাধ্যমে আইন প্রয়োগে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।

চোরাচালানকৃত পণ্য আটকের ইন্টেলিজেন্স প্রয়োগ করে লক্ষ্যবস্তুকে তল্লাশির আওতায় আনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এর মাধ্যমে চোরাচালান অনেকাংশে কমবে বলে মন্তব্য করেন ড. মঈনুল খান।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন