ছুটির দিনে বাণিজ্য মেলায় মানুষের ঢল

  06-01-2017 09:46PM

পিএনএস : বছরের প্রথম মাসের প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন আজ শুক্রবার। এ সুযোগে যেন রাজধানীবাসীর ঢল নেমেছিল শেরেবাংলা নগরের আগারগাঁওয়ের বাণিজ্য মেলার মাঠে। সকাল থেকেই মেলায় ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। বেলা শেষের দিকে তা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গনসহ আশপাশের গোটা এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। তাদের কেউ মেলায় প্রবেশ করছেন, কেউ মেলা দেখে বেরিয়ে আসছেন। সবাই খুশি। এক কথায়, মেলা শুরুর পর প্রথম ছুটির দিনেই দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত ২১তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)।

আগের ২০টি আয়োজনের মতো এ বছরেও বাণিজ্য মেলা শুরু হয়েছে বছরের প্রথম দিনেই। ওই দিন থেকেই মেলায় ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। তবে বেচাকেনা তেমন জমে ওঠেনি এ কয়দিন। আজ মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচাকেনাও বেড়েছে। দোকানিরা বলছেন, এর মাধ্যমেই জমে উঠল এবারের বাণিজ্য মেলা।

শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীরা আসছেন মেলায়। দুপুরের পর থেকে তা পরিণত হয় মানুষের ঢলে। মেলায় প্রবেশের লাইনও তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লম্বা হতে থাকে। শেষ বিকালে মানুষের ভিড়ে পা ফেলা দায় হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গনে।

প্রতিবছরই মেলায় তিন-চার বার আসা হয় বলে জানান মিরপুরের শেওড়াপাড়ার নিবাসী গৃহিনী রোকসানা কাদের। তিনি বলেন, ‘এখানে একসঙ্গে বেড়ানো ও সংসারের কেনাকাটা— দুটোই হয়। তাই প্রতিবছরই মেলায় আসি কয়েকবার।’

ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দাম নিয়ে এ বছর তাদের কোনও অভিযোগ নেই। পণ্যটি পছন্দ হলেই কিনছেন তারা। আর ক্রেতা আকৃষ্ট করতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন বিক্রেতারাও। মিষ্টি কথার পাশাপাশি কেউ দিচ্ছেন মূল্যছাড়সহ নানা অফার। থাকছে গ্যারান্টিসহ বিক্রয়োত্তর নানা সেবার নিশ্চয়তা।

মেলায় অংশ নেওয়া একাধিক কোম্পানির বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যে রয়েছে বিশেষ ছাড়। প্যাভিলিয়নে গ্রাহকরা আসছেন, তারা পণ্য দেখছেন, অনেকে কিছু কিনছেন। আবার অনেকে না কিনলেও পণ্যটি পছন্দ করে রেখে যাচ্ছেন আরেকদিন এসে কিনবেন বলে। তবে কেনাবেচা সামনের দিনগুলোয় জমে উঠবে বলে জানিয়েছেন তারা।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরাবরের মতো এবারও মেলায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে গৃহস্থালি পণ্যের। এজন্য ওয়ালটন, আরএফএল, বেঙ্গল, পারটেক্স, আকতার ফার্নিচার, নাভানাসহ বিভিন্ন গৃহ সামগ্রীর স্টল ও প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের ভিড় সবচেয়ে বেশি। বছরে একবার বাণিজ্য মেলার আয়োজন হওয়ায় কোম্পানিগুলো মেলাকে ঘিরে নতুন ডিজাইনের পণ্য নিয়ে আসে, যেগুলো বছরের অন্য সময় পাওয়া যায় না। নতুন ডিজাইন থাকায় এসব পণ্যের চাহিদা বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।

একটি ফার্নিচার কোম্পানির কর্মকর্তা বললেন, ‘এ বছর মেলায় ব্যতিক্রমী ডিজাইনের ফার্নিচার আনার চেষ্টা করেছি। নতুন এসব পণ্যে রয়েছ ছাড়ের সুবিধা। মেলা উপলক্ষে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাচ্ছেন ক্রেতারা। এ ছাড়া হোম ডেলিভারির সুবিধাও রেখেছি।’ মেলায় প্রতিটি পণ্যের এক বছরের ওয়ারেন্টি এবং ফ্রি সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ বছর মেলায় স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ২১টি দেশ অংশ নিচ্ছে। এবারের মেলায় রয়েছে সাধারণ, প্রিমিয়ার, সংরক্ষিত, বিদেশি, সাধারণ মিনি, সংরক্ষিত মিনি, প্রিমিয়ার মিনি, বিদেশি মিনি প্যাভেলিয়ন, সাধারণ ও প্রিমিয়ার স্টল, ফুড স্টল, রেস্তোরাঁসহ ১৩টি ক্যাটাগরিতে ৫৮০টি স্টল।

আগের বছরগুলোর মতো এ বছরও মেলায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন, ই-শপ, শিশুপার্ক, রক্ত সংগ্রহ কেন্দ্র, প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র, মা ও শিশু কেন্দ্র, ফুলের বাগান ও এটিএম বুথ।
১ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে মেলা। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মেলায় প্রবেশে টিকেটের মূল্য ৩০ টাকা ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন