নেপালে মোটরসাইকেল রপ্তানি শুরু করল রানার

  21-01-2017 10:46PM

পিএনএস : আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নেপালে মোটরসাইকেল রপ্তানির মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করলো দেশীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রানার অটোমোবাইলস্ লিমিটেড।

শনিবার ময়মনসিংহের ভালুকায় রানার অটোমোবাইলস্ লিমিটেডের কারখানায় এই অনন্য উদ্যোগের শুভ সূচনা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এছাড়াও রানার অটোমোবাইলস্ লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান, ভাইস-চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সি.ই.ও মুকেশ শর্মা, কোম্পানির পরিচালক, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নেপালের চার্জ দা এফেয়ারস্ মি. ধন বাহাদুর অলি, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেট্রিক্স মোটো করপোরেশনের দিলীপ কুমার কার্নাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সুধী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার সকালে বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের ভালুকায় রানার অটোমোবাইলস কারখানায় পৌঁছালে তাকে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বাগত জানান। পরে তিনি মোটরসাইকেলের উৎপাদন কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এ সময় রানার অটোমোবাইলসের পণ্যের গুণগত মানের প্রশংসা করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, কারখানাটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম দেশীয় মোটরসাইকেল শিল্প কারখানা যেখানে রানার ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের মোটরসাইকেল তৈরি করা হয়। রানার অটোমোবাইলস্ এ উৎপাদন এবং রপ্তানির মধ্য দিয়ে বিশ্ব প্রযুক্তির শীর্ষ দেশগুলোর সাথে যুক্ত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। আর বেসরকারি খাতই হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। বেসরকারি খাতের বিকাশে সহায়তার মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের মোট রপ্তানি ৬০ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে। রানার প্রথমবারের মতো মোটরসাইকেল রপ্তানি করছে যা অত্যন্ত গর্বের। এটি বাংলাদেশের রপ্তানি ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক। বর্তমানে প্রতিদিন ৫০০ মোটরসাইকেল তৈরি করছে রানার অটোমোবাইলস্। সম্প্রতি রানার অটোমোবাইলসের সাথে যুক্ত হয়েছে বিশ্বখ্যাত ইউএস ব্র্যান্ড ইউএম। এ মাসেই রানার-ইউএম ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করবে রানার অটোমোবাইলস।

হাফিজুর রহমান খান মোটরসাইকেল উৎপাদন ও রপ্তানি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য বানিজ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, এই কারখানায় দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৫০০ মোটরসাইকেল এবং ২০১৮ সালের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা ১০০০ এ উন্নীতকরণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিসম্পন্ন উচ্চ ক্ষমতার বিখ্যাত ইউএম-রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারে সরবরাহ শুরু হবে। নেপালে আমাদের আজকের এই মোটরসাইকেল রপ্তানির মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে রপ্তানির পথ প্রশস্ত হচ্ছে, তবে সরকারের কাছ থেকে সুষ্ঠু নীতি সহায়তা পেলে বিশ্ব বাজারে রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল আধিপত্য স্থাপনে সক্ষম হবে।’

২১ জানুয়ারিকে রানার অটোমোবাইলসের জন্য ‘মাইলফলক’ উল্লেখ করে হাফিজুর রহমান খান বলেন, আমরা ২০১১ সালে পূর্ণাঙ্গ মোটরসাইকেল উৎপাদনের অনুমোদন পেলেও ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারিতে রানার অটোমোবাইলসের কারখানা উদ্বোধন করা হয়। পাঁচ বছর পর ঠিক একই দিনে আমরা প্রথমবারের মতো মোটরসাইকেল রপ্তানি করছি।’

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০০০ সালে মোটরসাইকেল আমদানি করে বাজারজাত শুরু করে রানার। কয়েক বছর পর প্রতিষ্ঠানটি মোটরসাইকেলের পার্টস সংযোজন শুরু করে। আর ২০০৭ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় রানার বাংলাদেশে প্রথম মোটরসাইকেলের কম্পোনেন্টস্ তৈরির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে-যা বুয়েট এবং বিআরটিএ অনুমোদন দেয়।

পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে রানার পানচিং, ওয়েল্ডিং, পেইন্টিং, এসেম্বলিং, টেস্টিং ইত্যাদি মেশিনারিজ স্থাপনের মাধ্যমে মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী হিসাবে সরকারি অনুমোদন লাভ করে। পূর্ণাঙ্গ মোটরসাইকেল কারখানা হিসেবে ২০১২ সালে পুরোদমে উৎপাদন শুরু করে। ইতিমধ্যে ভালুকায় স্থাপিত কারখানায় মোটরসাইকেলের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ যথা: চেসিস, রিয়ার ফোরক, ফুয়েল ট্যাঙ্ক, মেইন স্ট্যান্ড, সাইড স্ট্যান্ড, ফুট পিগ ইত্যাদি তৈরি এবং ইঞ্জিন সংযোজন করা হচ্ছে। এ সকল যন্ত্রাংশ রং করার জন্য অত্যাধুনিক পেইন্ট শপ স্থাপন করা হয়েছে।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন