ব্যাংক খাতেই ৫শ' কোটি টাকার লেনদেন

  24-01-2017 12:32PM


পিএনএস: এক বছর আগেও দেশের পুরো শেয়ারবাজারে একদিনে ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন ছিল বহু আকাঙ্ক্ষিত। সেখানে গতকাল সোমবার একদিনে ব্যাংক খাতেই ৫০০ কোটি টাকার ওপরে শেয়ার কেনাবেচা নজর কেড়েছে।

গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে ব্যাংক খাতের ৩০ কোম্পানির ৫১২ কোটি ১৬ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়। এর পরিমাণ বাজারের মোট লেনদেনের সাড়ে ২৩ শতাংশ। অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে তালিকাভুক্ত ২৯ ব্যাংক কোম্পানির প্রায় ৩৩ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়, যা এ বাজারের মোট লেনদেনের প্রায় ২৮ শতাংশ। ২০১০ সালের ডিসেম্বরের পর গত ছয় বছরে এ খাতে এত বেশি শেয়ার লেনদেন হয়নি।

ব্যাংক খাতের এ লেনদেনে ভর করে গতকাল দুই শেয়ারবাজারের লেনদেন দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা ছাড়াতে সর্বাধিক ভূমিকা রেখেছে। রোববারের তুলনায় এ লেনদেন ৫৩২ কোটি টাকা বা ৩০ শতাংশের বেশি। গতকাল ডিএসইর লেনদেন ৫১২ কোটি টাকা বেড়ে প্রায় দুই হাজার ১৮১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া সিএসইতে প্রায় ১২০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

ব্যাংক খাতের শেয়ারদর ও লেনদেন বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ৩১ ডিসেম্বর হিসাব বছর শেষে লভ্যাংশ ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসায় সক্রিয় বিনিয়োগকারীদের এক বড় অংশ বিভিন্ন ব্যাংকের শেয়ার কিনছে। এতে এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়ছে। পাশাপাশি লেনদেনও সাম্প্রতিক সময়ের তুলনায় বহু গুণ বেড়েছে।

গতকাল ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ ২০ কোম্পানির মধ্যে নয়টিই ছিল ব্যাংক। লেনদেন বৃদ্ধিতে এগিয়ে ছিল ইসলামী, আল-আরাফাহ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, প্রিমিয়ার, ঢাকা, যমুনা, এক্সিম ও ন্যাশনাল ব্যাংক। গতকাল ডিএসইতে এ ব্যাংক কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ৬ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

অবশ্য লোকসানি ব্যাংক আইসিবি ইসলামিকই ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষে। ৫ থেকে ১০ শতাংশ দর বেড়ে সাড়ে পাঁচ টাকায় শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হওয়ায় লেনদেনের বড় অংশে শেয়ারটির বিপুল ক্রয় আদেশের বিপরীতে বিক্রয় আদেশ ছিল না।

দিনের লেনদেন শেষে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ডিএসইতে ব্যাংক খাতের একটি বাদে (সিটি ব্যাংক) বাকি সব ব্যাংকের শেয়ারদর বেড়েছে। অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে একটি বাদে অন্য সব ব্যাংকের শেয়ারদর বেড়েছে। এতে উভয় বাজারে এ খাতে সার্বিক শেয়ারদর বেড়েছে ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, যা গতকালের একক খাতের সার্বিক দর বৃদ্ধিতে সর্বাধিক।

ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটা বড় অংশের দর কমার পরও বাজার সূচক সোয়া ১ শতাংশের ওপর বেড়েছে। ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচক প্রায় ৬৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫৬৬৯ পয়েন্ট এবং সিএসইর সিএসসিএক্স সূচক ১৪০ পয়েন্ট বেড়ে ১০৬৪৬ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে।

যদিও গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৮ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৫৯টির দর কমেছে। বিপরীতে ১৪২টির বাজারদর কমেছে। অন্য শেয়ারবাজার সিএসইতে ১৩০ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর বৃদ্ধির বিপরীতে ১১৬টির দর কমেছে।

এদিকে, খাতওয়ারি লেনদেনে শীর্ষে থাকলেও একক কোম্পানি হিসেবে লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। গতকাল ডিএসইতে এ কোম্পানি সর্বাধিক ৬৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনে এর পরের অবস্থানে থাকা বারাকা পাওয়ারের ৬২ কোটি টাকার, ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৪৪ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়।

ব্যাংক খাতের শেয়ারদর ও লেনদেন বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অন্য খাতে। দুই শেয়ারবাজারের সার্বিক লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বীমা খাতের বাইরে অন্য সব খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দর কমেছে।

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২৩ কোম্পানির মধ্যে দুটি বাদে (ডিবিএইচ ও আইসিবি) বাকি সবক'টির বাজারদর বেড়েছে। এতে খাতটির সার্বিক দর ১ শতাংশের ওপর বেড়েছে। এ ছাড়া লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৭০ কোটি টাকার, যা মোট লেনদেনের পৌনে ৮ শতাংশ। এ ছাড়া বীমা খাতের ৪৭ কোম্পানির মধ্যে ২৭টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৬টির ও অপরিবর্তিত ছিল চারটির দর। অবশ্য এ খাতে গতকাল মাত্র ৩৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
বিপরীতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের চার কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির বিপরীতে ১২টির দর কমেছে। একইভাবে প্রকৌশল খাতে আটটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ২৫টির, ওষুধ ও রসায়ন খাতে সাতটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ২১টির, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ছয়টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ১০টির দর কমেছে। একই অবস্থা ছিল অন্য সব খাতেও। অধিকাংশ শেয়ারের দর কমায় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের সার্বিক শেয়ারদর ২ শতাংশের ওপর কমেছে। প্রকৌশল খাতের দরপতনের হার ছিল পৌনে ২ শতাংশ। এদিকে, গত দুই বছরের অধিক সময় খাতওয়ারি লেনদেনের শীর্ষে থাকা প্রকৌশল খাত লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে নেমেছে। ব্যাংক খাতের ৩০ কোম্পানির ৫১২ কোটি টাকার লেনদেনের বিপরীতে এ খাতের ৩৩ কোম্পানির ২৭৯ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়।

যদিও তা রোববারের তুলনায় সোয়া ৫২ কোটি টাকা বেশি ছিল।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন