আমদানি বাড়ছে দ্রুত

  08-03-2017 10:11AM


পিএনএস ডেস্ক: দ্রুত বাড়ছে আমদানি। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সামগ্রিক আমদানি বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি। রমজান মাসকে সামনে রেখে খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে এলসি খোলা বেড়েছে। একইসঙ্গে সুতা, ওষুধ ও সিমেন্টের কাঁচামাল, কয়লা, পুরনো জাহাজ আমদানিও বাড়ছে। শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি মূল্যের পরিমাণ আগের চেয়ে এখন বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানিবিষয়ক সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংকগুলোতে দুই হাজার ৭৪৬ কোটি ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ব্যাংকগুলোতে দুই হাজার ৪৪৫ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়। সাধারণত এলসি খোলার ৯০ দিনের মধ্যে পণ্য দেশে আসে। অনেক ক্ষেত্রে এলসি বাতিলের ঘটনাও ঘটে। আমদানি মূল্য পরিশোধ হলে তাকে এলসি নিষ্পত্তি বলা হয়। আলোচ্য সময়ে এলসি নিষ্পত্তিও আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। গত জুলাই-জানুয়ারি সময়ে দুই হাজার ৬৫৫ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে দুই হাজার ৩৬৫ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে(জুলাই-নভেম্বর) সামগ্রিক আমদানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ছয় মাসে সামগ্রিক ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, দেশের অর্থনীতি ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে। যে কারণে চাহিদাও বাড়ছে। ফলে আমদানি বাড়বে এটা স্বাভাবিক ও সঙ্গত। এ ছাড়া সামনে রমজান আসছে। এ কারণে কিছু পণ্যের আমদানি বাড়বে। আবার বিনিয়োগ পরিবেশ ইতিবাচক হওয়ায় শিল্প খাতের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ছে। পদ্মা সেতু, ফ্লাইওভারসহ বড় নির্মাণ কার্যক্রমের কারণ সিমেন্ট খাতে চাহিদা বেড়েছে। সব মিলিয়ে সামগ্রিক আমদানি বাড়ছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে গম, ডাল, চিনি, দুগ্ধজাত খাবার ও শুকনো ফল আমদানিতে এলসি খোলা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। তবে দেশে উৎপাদন ভালো হওয়ায় চাল ও পেঁয়াজের আমদানিতে এলসি খোলা কমেছে। ভোজ্যতেলের এলসি খোলাও কমেছে।

গত সাত মাসে গম আমদানির জন্য ৮৫ কোটি ডলারের এলসি খুলেছেন আমদানিকারকরা। যা আগের বছরের তুলনায় ২৯ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। বিভিন্ন ধরনের ডাল আমদানিতে এলসি খোলা হয়েছে ৩৭ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৮৫ শতাংশ বেশি। চিনি আমদানিতে ৭১ শতাংশ বেশি এলসি খোলা হয়েছে। গত সাত মাসে চিনি আমদানির জন্য ব্যাংকগুলোতে ৫৪ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩২ কোটি ডলার। শুকনো ফল আমদানির জন্য ২০ কোটি ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। দুগ্ধজাত খাবার আমদানিতে ১৭ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি।

তবে দেশে চাল উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং আমদানিতে শুল্ক থাকায় প্রধান এই খাদ্য পণ্যের আমদানি প্রায় ৭৪ শতাংশ কমেছে। গত সাত মাসে চাল আমদানিতে ২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে ব্যাংকগুলোতে। সাধারণত কিছু উঁচু দরের সরু চাল এবং প্রাণিখাদ্য উৎপাদনের জন্য কম দামি চাল আমদানি হয়। আগের অর্থবছরের একই সময়ে প্রায় ১০ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়। এ ছাড়া দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় এর আমদানি কমেছে ৩৫ শতাংশ।
শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিতে জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ২৪৩ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। গত সাত মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ৩০১ কোটি ডলারের এলসি খুলেছেন উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া সুতা আমদানিতে ৭ শতাংশ, ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে ২১ শতাংশ, সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার, লাইমস্টোন আমদানিতে ১৫ শতাংশ, কয়লা আমদানিতে ৫৮ শতাংশ এবং পুরনো জাহাজ আমদানিতে ১২ শতাংশ এলসি খোলা বেড়েছে।

বাংলাদেশের পণ্য আমদানি ব্যয় সব সময়ই রফতানির চেয়ে বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এ ঘাটতি অনেক বেড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে যাওয়ার হার ২৫ শতাংশ। বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি রেমিট্যান্স ব্যাপকহারে কমে গেছে। এ কারণে লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষায় কিছুটা চাপে পড়েছে বাংলাদেশ। অর্থবছরের প্রথমার্ধে চলতি হিসাবে বড় অঙ্কের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অবশ্য সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) এখনও উদ্বৃত্ত রয়েছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন