উচ্চমূল্যের পোশাক রফতানি বাড়ছে

  21-03-2017 08:45AM


পিএনএস ডেস্ক: প্রাইস ট্যাগে ১৭০ ইউরো লেখা 'আমস্টারডাম' ব্র্যান্ডের এক পিস ডেনিম ট্রাউজারের। গন্তব্য ইউরোপের অভিজাত বাজার। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেডের 'ডেনিম এক্সপার্ট' কিছুদিন আগে এরকম একটি বড় চালান রফতানি করেছে। প্রতি ইউরো ৮৬ টাকা বিনিময় হিসেবে এক পিস ডেনিমের মূল্য দাঁড়াল ১৪ হাজার ৬২০ টাকা। এ উচ্চমূল্যের পেছনে রয়েছে নানা উদ্ভাবন। বিশেষভাবে ওয়াশিং করা ডেনিম কাপড়ের ডিজাইনে আছে বিশেষত্ব। ব্যবহার করা হয়েছে দামি এক্সেসরিজ। ফলে সাধারণ ডেনিম হয়ে উঠল অসাধারণ। বাড়ল দর, বাড়ল কদর।

বাংলাদেশ এখন এমন উচ্চমূল্যের পোশাকের (হাইয়ার অ্যান্ড) বিশ্ববাজারে প্রবেশ করেছে। গত কয়েক বছর ধরে ডেনিম পোশাক, স্যুট, জ্যাকেট, স্পোর্টসওয়্যার এমনকি পশ্চিমাদের বিয়ের পোশাক রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। তবে বিশ্ববাজারের চাহিদার তুলনায় বাংলাদেশ এখনও খুব কমই এ ধরনের পণ্য রফতানি করছে। তবে ধীরে হলেও তা বাড়ছে। চীন, তুরস্ক, মেক্সিকো, ইতালি ও জাপানের দখলেই রয়েছে হাইয়ার অ্যান্ডের বাজার।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, রফতানি বাণিজ্যে হাইয়ার অ্যান্ডের পোশাকের সার্বজনীন কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে সাধারণত ৭০ ডলার থেকে বেশি দরের পোশাককে এ ক্যাটাগরির ধরা হয়। ৩৫ থেকে ৭০ ডলারের মধ্যে হলে গড় এবং ১৫ ডলারের নিচের পোশাককে লোয়ার অ্যান্ড বা কম দামের পোশাক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া ব্র্যান্ড ইমেজের কারণে একই পণ্যের মান এবং দর ভিন্ন ভিন্ন হয়। তবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ প্রসঙ্গে বলেন, স্ট্যান্ডার্ড দর বা গড় দরের চেয়ে বেশি দরের পোশাককে হাইয়ার অ্যান্ড হিসেবে ধরে নেওয়া যায়।

পোশাকের মোট রফতানিতে হাইয়ার অ্যান্ডের প্রকৃত পরিমাণ নিয়ে পরিসংখ্যান বিজিএমইএ কিংবা কোনো গবেষণা সংস্থার কাছে নেই। বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, হাইয়ার অ্যান্ডের পোশাকের রফতানি দিন দিন বাড়ছে। তবে এখনও তা পোশাকের মোট রফতানির ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি নয়। জ্যাকেট আইটেমকে হিসাবে নিলে এ হার ১৫ শতাংশ হতে পারে। আর শুধু স্যুট ও স্পোর্টসওয়্যার হিসাবে নিলে হয়তো ১০ শতাংশের মতো হবে। হাইয়ার অ্যান্ডের বড় সম্ভাবনার কথায় তিনি বলেন, একদিকে যেমন বিশ্বব্যাপী বৈচিত্র্যপূর্ণ উচ্চমূল্যের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে, আবার প্রধান রফতানিকারক দেশ চীন পোশাক খাত থেকে ক্রমে সরে আসার ফলে ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশই হবেই নির্ভরযোগ্য গন্তব্য। ক্রেতা সাড়া পাওয়ায় উদ্যোক্তারা আস্তে আস্তে উচ্চমূল্যের পোশাকের উপযোগী প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন বলে জানান তিনি। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ক্রেতাদের আগ্রহে উদ্যোক্তারা এখন এ ধরনের পোশাকে ঝুঁকছেন। দামি ব্র্যান্ডগুলোও বাংলাদেশের প্রতি মনোযোগ বাড়াচ্ছে। সানম্যান গ্রুপের এমডি লুৎফে এম আয়ুব বলেন, হাইয়ার অ্যান্ডের প্রকৃত পরিমাণ কত সেটা বলা মুশকিল। তবে তা খুব বেশি নয়।

সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত অ্যাপারেল সামিটে একাধিক বক্তা বলেছেন, শুধু সস্তা শ্রমের পুঁজির ভরসায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খুব বেশি দূর এগোতে পারবে না। প্রতিযোগিতার বিশ্ববাজারে শক্তিশালী অবস্থান কিংবা পোশাক খাতকে আরও এগিয়ে নিতে হলে কম দামের পোশাক থেকে বেশি দামের পোশাকের দিকে উদ্যোক্তাদের মনোযোগ বাড়াতে হবে।

তিন স্তরের জ্যাকেট উৎপাদন করে টেক্সওয়েভ। উচ্চমূল্যের এই জ্যাকেটের বড় একটা রফতানি আদেশের পোশাক উৎপাদন শুরু হয়েছে সম্প্রতি। জানতে চাইলে টেক্সওয়েভের এমডি এবং বিজিএমইএর পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন বলেন, রেশমি অনুভূতির এ ধরনের জ্যাকেট পরতে যেমন আরাম, দেখতেও তেমন ফ্যাশন দুরস্ত। এ রকম বেশি দামের এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাকের উৎপাদন এখন বাড়ছে দেশে। স্কয়ার ডেনিমের মহাব্যবস্থাপক সাইয়েদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, নিখুঁত ফিনিশিংয়ের ওপর নির্ভর করে উচ্চমূল্যের ডেনিমের মান। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেশিনারিজ, মেশিনের গতি ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সরবরাহ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সূত্র: সমকাল

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন