'ওয়ান স্টপ সার্ভিস' আইন হচ্ছে : সাত দিনে ব্যবসা শুরু করা যাবে

  22-03-2017 08:49AM


পিএনএস ডেস্ক: বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করার প্রাথমিক ধাপগুলো (ট্রেড লাইসেন্স, নিবন্ধন, ব্যাংক হিসাব খোলা, টিআইএন ও ভ্যাট নিবন্ধনসহ নয়টি কাজ) শেষ করতে ১৯ দশমিক ৫ দিন সময় লাগে। সরকার বিনিয়োগকারীদের দ্রুত সেবা দেওয়ার জন্য যে 'ওয়ান স্টপ সার্ভিস' আইন করতে যাচ্ছে, তার খসড়ায় এ সময় কমিয়ে সাত দিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে পাঁচ দিনে কাজগুলো করা হবে।

একইভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে বর্তমানের ৪২৮ দিন থেকে কমিয়ে মাত্র ২৮ দিন, রাজউকের সব প্রক্রিয়া ২৬৯ দিন থেকে কমিয়ে ৬০ দিন এবং জমির নিবন্ধন ও মিউটেশন কার্যক্রম ২৪৪ দিন থেকে কমিয়ে এক দিনে শেষ করার বাধ্যবাধকতা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে ওই আইনে। এরকম ২৫ ধরনের সেবা দেওয়া হবে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো মন্ত্রণালয়, সংস্থা বা দপ্তর এই সেবা নিশ্চিত করতে না পারলে সেবাদাতা কর্মী চাকরিতে অসদাচরণ করেছেন বলে গণ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে আইনের খসড়ায়। কাজগুলো সময় মতো নিশ্চিত করার জন্য বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে একটি ফোকাল পয়েন্ট, একটি টাস্কফোর্স, একটি সমন্বয় কমিটি এবং একটি নিশ্চিতকরণ কমিটি করার প্রস্তাব রয়েছে। তবে আইনটি কার্যকরে বিডা, বেপজা, বেজা ও হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের জন্য আলাদা আলাদা বিধি-প্রবিধি করা হবে। সে ক্ষেত্রে একেক সংস্থার সেবা দেওয়ার সময় একেক রকম হবে। যেমন আইনে ২৮ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগের কথা বলা থাকলেও বিধিতে বিডাকে এ সেবা দেওয়ার জন্য ২১ দিন সময় প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে সেবা সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে গতি আনতে সহায়ক নানা বিধান রেখেই ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইনের খসড়া তৈরি করেছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সংস্থাটির কর্মকর্তারা আশা করছেন, জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে আইনটি পাস হবে। বিডার পরিচালক তৌহিদুর রহমান খান বলেন, সিঙ্গাপুরের মডেলে ওয়ান স্টপ সার্ভিস ফরম তৈরি করা হয়েছে। তবে আইনটি হবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে।

এরই মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ ২৮ দিনে সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে। তবে ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের এখনও বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। তৌহিদুর রহমান বলেন, নেদারল্যান্ডসের একজন বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু দেশে কার্যরত একটি বিদেশি ব্যাংক তাদের কোম্পানির হিসাব খুলতে তিন মাস সময় নিয়েছে। তিনি বলেন, এ সমস্যার সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।

ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে বাংলাদেশে ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। একই সঙ্গে সামাজিক বিভিন্ন সূচকে সমমানের অন্যান্য দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে এবং দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক পরিবেশে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এরপরও এখানে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ খুব একটা বাড়েনি। পাকিস্তান, মিয়ানমারের মতো অস্থিতিশীল দেশে বাংলাদেশের তুলনায় বেশি এফডিআই যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান পেছনে থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হচ্ছেন না।

যেভাবে ওয়ান স্টপ সার্ভিস :বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় ও সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় এবং এক জায়গা থেকে অনলাইনে যোগাযোগ করার জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থাকবে। অনলাইনভিত্তিক এ ব্যবস্থায় বিনিয়োগকারী তার প্রয়োজন উল্লেখ করে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন। বিডা এ আবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাবে। দপ্তরের ফোকাল পয়েন্ট তা গ্রহণ করে ডেস্কে পাঠিয়ে দেবে। একই সঙ্গে কোন কাজ কোন দপ্তরে কী অবস্থায় রয়েছে তাও অনলাইনে দেখা যাবে। এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বাস্তবায়নে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দেবে বিশ্বব্যাংক। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। তৌহিদুর রহমান বলেন, আগামী ছয় মাস প্রচলিত পদ্ধতি (ম্যানুয়াললি) ও অনলাইন উভয়ভাবে কাজ চলবে। এর পর ম্যানুয়াল কার্যক্রম আর থাকবে না।

ই-ভিসা ও বিদেশিদের তথ্য ভাণ্ডার :বিনিয়োগকারীদের জন্য ই-ভিসা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এ প্রক্রিয়ায় অনলাইনে আবেদন করে অনলাইনেই ভিসা পেয়ে যাবেন তারা। বিডার প্রত্যয়নও দেওয়া হবে অনলাইনে। এরই মধ্যে ই-ভিসার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিডার পরিচালক তৌহিদুর রহমান খান। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে যারা আসছেন তাদের তথ্য ভাণ্ডার করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিসা নিয়ে বিদেশিরা আসছেন। এরপর বাংলাদেশে এসে তারা ভিসার ক্যাটাগরি পরিবর্তন করছেন। আবার অনেকে পর্যটন ভিসায় এসে চাকরি করছেন। কিছু দিন মেয়াদ বাড়িয়ে নিচ্ছেন। দেশে ফিরে যাচ্ছেন আবার ফিরে আসছেন। আবার অনেকে এক কোম্পানির চাকরি নিয়ে এসে চাকরি পরিবর্তন করে অন্য কোম্পানিতে চলে যাচ্ছেন। বিডা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এনজিওবিষয়ক ব্যুরো, ধর্ম মন্ত্রণালয়, ইমিগ্রেশনসহ ১২টি সংস্থার কাছে বিদেশিদের তথ্য থাকে। এখন একটি তথ্য ভাণ্ডার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে বিদেশিদের আসা ও যাওয়ার তথ্য জমা হবে। ফলে একজন ব্যক্তি কতবার আসছেন বা যাচ্ছেন তা এক ক্লিকেই বের করে ফেলা যাবে। ভিসা নবায়ন করা হবে তথ্য ভাণ্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে। এটা সম্পন্ন করা গেলে অনুমোদনহীনভাবে বাংলাদেশে কোনো বিদেশি অবস্থান করতে পারবেন না। আবার সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হবে না। সূত্র: সমকাল

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন