ইলিশে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে সরকার

  18-07-2017 09:57AM

পিএনএস ডেস্ক: ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় ৯৭২ কোটি ১৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে দাদনের (ঋণ) জাল ও মহাজনদের হাত থেকে জেলেদের মুক্ত করার পাশাপাশি জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, মৎস্য সংরক্ষণ আইনের কঠোর প্রয়োগ ও ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ইতিমধ্যেই অনুমোদনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

আগামী ১৭ জুলাই সোমবার পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। তবে প্রকল্পের প্রস্তাবিত বিভিন্ন ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। পিইসি সভায় এসব বিষয় তুলে ধরা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি আয় বাড়ানো এবং আমিষের চাহিদা মেটানোর জন্য ইলিশের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১১ ভাগ এবং জিডিপিতে অবদান ১ শতাংশ। উপকূলীয় মৎস্যজীবীর জীবিকার প্রধান উৎস হচ্ছে ইলিশ। প্রায় ৫ লাখ জেলে সরাসরি ইলিশ আহরণে নিয়োজিত। ২০-২৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। সারা বিশ্বে মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৬০ শতাংশ আহরিত হয় এ দেশের নদ-নদী থেকে। কিন্তু আশির দশকে ইলিশ উৎপাদন সংকটে পড়ে। আশির দশকের আগে দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ২০ শতাংশ ছিল ইলিশের অবদান। কিন্তু ২০০৩-০৪ সালে তা ক্রমান্বয়ে কমে গিয়ে দাঁড়ায় জাতীয় উৎপাদনের মাত্র ৮ শতাংশে। এভাবে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে ইলিশের উৎপাদন কমে যায়। তাই ইলিশ সম্পদের গুরুত্ব ও বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে বৃহত্তর পরিসরে মাছের ব্যবস্থাপনা উন্নত করা প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের আওতায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ হাজার জেলে গ্রুপকে দাদনদার ও মহাজনদের হাত থেকে মুক্তির জন্য মাছ ধরার জাল সহায়তার সংস্থান রাখা হয়েছে। এ আইটেমটির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এছাড়া সব জেলের জাল সহায়তার পাশাপাশি ৪৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে এফআরপি বোট সহায়তারও প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়টিরও যৌক্তিকতার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তবে এ প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই ব্যাখ্যা দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার ব্যাখ্যা হচ্ছে, জেলেরা প্রতিবছরই দাদনদার ও মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ইলিশ মাছ ধরার জন্য জাল ও নৌকা কেনার ব্যবস্থা করে। শর্ত অনুযায়ী মহাজনের আড়তেই ইলিশ মাছ বিক্রি করতে হয় এবং তাদের নির্ধারিত দামেই অর্থ দিয়ে থাকে। সেই সঙ্গে সুদের টাকা কেটে নেয়া হয়। ফলে একজন জেলে শুধু মৎস্য শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। তাদের ইচ্ছমতো কেনাবেচা করতে পারেন না। বর্তমানে লাখ লাখ জেলে এনজিও ও মহাজনী ঋণে জর্জরিত। কিস্তি পরিশোধের ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে থাকতে হয়। তাই তারা স্বাবলম্বী হতে পারেন না। দাদনদান, মহাজন ও এনজিও ঋণ থেকে মুক্ত করতেই জাল ও নৌকার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে পরিকল্পনা কমিশন মনে করে অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়, তাই এ দুটি খাত বাদ দেয়ার পক্ষে মত দেয়া হয় অ্যাপ্রাইজাল সভায়। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার জেলেকে অবৈধ ও ধ্বংসাত্মক জাল বা ফাঁদ নির্মূলের কারণে জাল বিনিময় ও জাটকা আহরণে বিরত ৩০ হাজার জেলেকে বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ১২০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এসব কাজের প্রয়োজনীয়তা ও জেলেদের সংখ্যা নির্ধারণের যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনার কথা বলা হয়েছে।

অন্যদিকে প্রকল্পের আওতায় চারটি জিপ ও ২৯টি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার জন্য সাড়ে ১৭ কোটি টাকা, ১৯টি এফআরপি বোট ও দুটি অভয়াশ্রম পেট্রুল ভেসেল কেনার জন্য সাড়ে ২৯ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব যানবাহন কেনার যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যয় নিয়ে আলোচনার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

সূত্র: যুগান্তর


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন