মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস

  15-09-2017 02:54PM

পিএনএস ডেস্ক: রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন গড়ে ৪০ লাখ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর ব্যবসায়ীদের কয়েকশ কোটি টাকা আটকে আছে মিয়ানমারে। পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত হওয়ার আগে বাণিজ্য স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তারা।

এর বাইরে গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের মংডু ও আকিয়াবে আসা যাওয়ার সীমান্ত পাসও বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রত্যক্ষভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমদানি রপ্তানিতে। টেকনাফ ইমিগ্রেশন পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, উপপরিদর্শক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সীমান্ত পাস বন্ধ থাকায় আমরা গত ১১ মাসে ৫০ লাখ টাকার রাজস্ব হারিয়েছি। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ফি হিসেবে এ অর্থ আদায় হতো।

টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি উভয় বাণিজ্যই হয়ে থাকে। এখানে ২০০ টন পণ্য নিয়ে ভিড়তে পারে জাহাজ। বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত অর্থবছরের প্রতিমাসেই টেকনাফ স্থলবন্দরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু রাখাইনের সহিংসতা ও পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর বর্বরতার কারণে লাটে উঠেছে টেকনাফ বন্দর দিয়ে ব্যবসা।

কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আর রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮ কোটি ৮৪ লাখ ৪৮ হাজার ৬৫ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১ শতাংশ বেশি। একইভাবে আগস্টে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আর আদায় হয়েছে ১০ কোটি ৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৪২ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুমাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে। কিন্তু রাখাইনে সহিংসতা শুরু হওয়ার পরদিন থেকেই এ বাণিজ্যের চাকা বন্ধ হয়ে যায়। গত ২৫ আগস্ট থেকে আমদানি রপ্তানি বলতে গেলে শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।

চলতি মাসের গত ১৩ দিনে টেকনাফ স্থলবন্দরে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ৭০ লাখ। অথচ চলতি সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মাসের প্রায় অর্ধেক ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে।

টেকনাফ স্থলবন্দর কাস্টমসের সুপারিন্টেন্ডেন্ট এএসএম মোশাররফ হোসেন বলেন, বাণিজ্য বন্ধ থাকায় প্রতিদিন আমরা গড়ে ৪০ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে টেকনাফ স্থলবন্দর ভবিষ্যতে আরও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দুদেশের আমদানি রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

টেকনাফ স্থলবন্দর ব্যবহার করে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ বলেন, হঠাৎ করে এভাবে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়াটা আমাদের কাছে অনাকাক্সিক্ষত। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা মিয়ানমারে বিনিয়োগ করা আছে। এতে ব্যবসার ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে।

টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ যে পরিমাণ রপ্তানি করে, তার ৯৭ গুণ আমদানি করে। বাংলাদেশের আমদানি করা পণ্যের তালিকায় রয়েছেÑ কাঠ, মাছ, চাল, শুঁটকি, বরই আচার, পেঁয়াজ, আদা ও হলুদ। আর রপ্তানির তালিকায় আছে তৈরি পোশাক, এলুমিনিয়াম সামগ্রী, প্লাস্টিক সামগ্রী, মানুষের চুল, ওষুধ ও গেঞ্জি।

ব্যবসায়ী ও বন্দর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টেকনাফ স্থলবন্দর ব্যবহার করে মংডু ও আকিয়াব বন্দরে খুব কম সময়ে জাহাজ যাওয়া আসা করতে পারে। মংডু বন্দরে জাহাজ যেতে সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট। আর আকিয়াব (সিটুয়ে) বন্দর যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা। অথচ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে একটি জাহাজ সিঙ্গাপুর বন্দর ঘুরে আকিয়াব আসতে সময় লাগে ছয়দিন। ফলে আকিয়াব টেকনাফ বন্দর দিয়ে যারা ব্যবসা করেন, তারা এ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মংডুতে বাংলাদেশি পণ্যের একটি বাজার তৈরি হয়ে আছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক ও এলুমিনিয়াম পণ্যের। এসব পণ্যের চাহিদা দ্রুত বাড়ছিল। কিন্তু রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার কারণে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে এসেছে। ফলে ওই বাজারও বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।

মঙ্গলবার টেকনাফ বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, মিয়ানমার থেকে আসা চাল ট্রাকে করে বের করা হচ্ছে। এর বাইরে আর কোনো পণ্য বোঝাই জাহাজ বন্দরে দেখা যায়নি।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন