চট্টগ্রামে চালের আড়ত বন্ধ

  20-09-2017 08:22PM

পিএনএস ডেস্ক : কোনো ঘোষণা ছাড়াই চট্টগ্রামে চালের আড়ত প্রায়ই বন্ধ রেখেছে ব্যবসায়ীরা। ফলে আজ বুধবার সকালে চাল কিনতে গিয়ে ফিরে এসেছেন অনেক খুচরা ব্যবসায়ী। এ নিয়ে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে চট্টগ্রামের চালের বাজারে। চালের অতিরিক্ত মজুদ ও বেশি দামে চাল বিক্রির দায়ে চট্টগ্রামের ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র চাক্তাইয়ে বদিউর রহমান এন্ড সন্সের চালের আড়তে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমান আদালত।

এ সময় আড়তের ব্যবস্থাপক দিদারুল আলমকে এক লাখ টাকা জরিমানা ও তিন মাসের কারাদ- প্রদানের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় চাক্তাইয়ের চালের আড়ত ও পাইকারী দোকান বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীরা ভ্রাম্যমান আদালতের উপর হামলা চালিয়ে ওই দিদারুল আলমকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে চাল পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত ঠেলাগাড়ি ও ভ্যান ছড়িয়ে সড়ক অবরোধ করে। রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত এ নিয়ে চাক্তাইয়ে উত্তেজনা বিরাজ করে। পরে অতিরিক্ত র‌্যাব-পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এ ঘটনায় আজ বুধবার সকাল থেকে নগরীর চাক্তাই ও পাহাড়তলি বাজারের সবকটি চালের আড়ত ও পাইকারী দোকান বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীদের অনেকে চাল কিনতে গিয়ে ফেরত এসেছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। নগরীর চকবাজারের চাল ব্যবসায়ী ছালেহ আহমদ বলেন, হাওড়ে বন্যার পর থেকে চাল সঙ্কটের কথা বলে মজুদদাররা পর্যাপ্ত চাল সরবরাহ করছেননা। ফলে দিনের চাল দিনে নিয়ে ব্যবসা করছি।

অথচ চাক্তাইয়ের প্রতিটি গুদামে অতিরিক্ত চাল মজুদ আছে। তিনি বলেন, চাল সঙ্কটের কথা বলে মজুদদাররা বেশি দাম হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর এ নিয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়ায় মজুদদারদের মাথা-ব্যাথা শুরু হয়েছে।

রিয়াজ উদ্দিন বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী শেখ ফরিদ বলেন, ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান ও হামলার ঘটনায় চালের আড়তদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা আজ বুধবার সকাল থেকে আড়ত ও দোকান বন্ধ রেখে চাক্তাইয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে। এতে খুচরা ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই চাল না পেয়ে ফেরত গেছেন।

এ কারণে চালের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, আড়তে চালের অবৈধ মজুদ গড়ে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির মাধ্যমে দাম বাড়ানোর প্রেক্ষিতে চাক্তাইয়ে মঙ্গলবার বিকেলে অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানে অতিরিক্ত মূল্যে চাল বিক্রি ও চাল মজুদের অভিযোগে একজনকে তিন মাস কারাদ- ও এক লাখ টাকা অর্থদ- প্রদান করে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপরই কর্মচারী ও ব্যবসায়ীরা হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পরে অতিরিক্ত র‌্যাব-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছালে অন্য আড়ত গুলোতে অভিযান না চালিয়ে আটক দিদারুল আলমকে নিয়ে ফিরে আসা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার দায়ে জাহিদুল ইসলাম শাওন নামের অপর একজনকে দন্ডবিধির ১৮৬০ এর ১৮৬ ধারায় ১ মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট।

আড়ৎ বন্ধ রাখার বিষয়ে চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনামুল হক বলেন, চাল মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও অতি মুনাফার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ঢালাওভাবে অভিযান পরিচালনা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব তো পড়বেই।

তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আজ সকাল থেকে চাল ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে বৈঠক চলছে। চাল ব্যবসায়ী সমিতি ও মিল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত রয়েছে। এ কারণে চালের আড়ৎ ও পাইকারী দোকানগুলো হয়তো কেউ কেউ বন্ধ রেখেছেন।

তিনি বলেন, চালের আড়ত ও পাইকারী দোকন বন্ধ রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ী সংগঠন এখনো কোনো কর্মসুচি দেয়নি। প্রশাসনের ঢালাও অভিযান বন্ধ ও গ্রেপ্তারকৃতদের ছাড়া না হলে কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়টিও সামনে চলে আসতে পারে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, অভিযান চালানোর আগে চালের আড়ৎদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের আমরা সতর্ক করেছি। কিন্তু তাতে তারা কর্ণপাত করেনি। তাই অভিযান চালানো হচ্ছে। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে আবারো অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন