লক্ষ্মীপুরে সুপারীর বাম্পার ফলন

  15-10-2017 07:47PM

পিএনএস, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : উপকূলীয় অঞ্চল লক্ষ্মীপুরের ‘লক্ষ্মী’ হিসেবে পরিচিত অর্থকরী ফসল সুপারীর এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি জমির পাশে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনায় সুপারী গাছ রোপন করে এখানে উৎপাদন হচ্ছে শত-শত কোটি টাকার সুপারী। অর্থকারী এ ফসলকে ঘিরে এ অঞ্চলে দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। উৎপাদিত এ ফসলের বাজার দর ভালো থাকায় সুপারী চাষে আগ্রহ বাড়ছে এখানকার মানুষের।

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে বর্তমানে ৬ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে সুপারী বাগান রয়েছে। আর এসব বাগানে এ বছর উৎপাদিত হয়েছে ১২ হাজার ৪৯০ টন সুপারী।

এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৬৮০ টন, রায়পুর উপজেলায় ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৭৭২ টন, রামগঞ্জ উপজেলায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৩৩১ টন, কমলনগরে ৩৭৫ হেক্টর জমিতে ৬৩৭ টন ও রামগতি উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে ৭০ টন সুপারী উৎপাদিত হয়েছে।

ফলে এ মৌসুমে উৎপাদিত সুপারীর বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে তিন শত কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।এ বছর মৌসুমের শুরুতেই সুপারী ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাট-বাজারে সুপারী ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় বাজারে সুপারীর চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় চাষেও আগ্রাহ বাড়ছে কৃষকদের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারী গাছে ফুল আসে। পরে এ ফুল থেকে সৃষ্ট সুপারী পুরোপুরি পাকে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে। মূলত কার্তিক মাস আর অগ্রহায়ণ মাসেই সুপারীর ভরা মৌসুম। তবে এবার সময়ের আগে বাজারে এসেছে সুপারী। আশ্বিন মাসের শুরুর দিকে বাজারে আসতে শুরু করেছে সুপারী।

জেলার প্রতিটি বাজারেই প্রচুর পরিমাণে সুপারী আসতে দেখাগেছে। এখানকার সুপারীর প্রায় ৭০ ভাগ নদীনালা, খালডোবা, পুকুর ও পানিভর্তি পাকা হাউজে ভিজিয়ে রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আর ৩০ ভাগ সুপারী দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ ছাড়াও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এ বছর কাঁচা-পাকা সুপারীর ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষী, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

লক্ষ্মীপুরে সুপারীর প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র না থাকায় অনেক সময় কৃষকরা সুপারীর ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।জানা যায়, সুপারী গাছ একবার রোপণ করলে তেমন কোনো পরিচর্যা ছাড়াই টানা ৩৫-৪০ বছর ফলন দেয়। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশী আয় করা যায়। সুপারী বাগানে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কিংবা রোগ-বালাই কম থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরা সুপারী চাষের দিকে বেশী ঝুঁকেছেন।

এ বছর মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই সুপারী বিক্রির প্রধান মোকাম সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর শহর, দালাল বাজার, চররুহিতা, ভবানীগঞ্জ, মান্দারী, দত্তপাড়া, জকসিন, রায়পুর উপজেলা শহর, হায়দরগঞ্জ বাজার, সোনাপুর, দেনায়েতপুর, খাসেরহাট, মোল্লারহাট, রামগঞ্জ উপজেলা শহর, কাঞ্চনপুর বাজার, করপাড়া বাজারসহ জেলার প্রতিটি বাজারে সুপারীকে ঘিরে বর্তমানে চলছে জমজমাট ব্যবসা।

এখানকার প্রতিটি বাগানে সুপারী পেকে হলুদের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। বাগানে এখন পাকা সুপারীর হলুদ রংয়ের সমারোহ, মাইলের পর মাইল পাকা সুপারীর হলুদ রংয়ে চেয়ে গেছে। তাঁতে হাঁসি পুটেছে সুপারীর বাগান মালিকদের মুখে। গাছ থেকে সুপারী সংগ্রহ, ভিজিয়ে রাখা এবং বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সুপারী চাষীরা।

কয়েকজন সুপারী চাষী জানান, সুপারী গাছের পরিচর্যা ও রক্ষণা-বেক্ষণে স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতা এবং তদারকির কারণে গাছে রোগ-বালাই কম ও ফলন বেশি হয়েছে। গাছ রোপণ ও সুষ্ঠু রক্ষণা-বেক্ষণে কৃষি বিভাগের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নে লক্ষ্মীপুরে এ অর্থকরী ফসল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে বলেও জানান তারা ।

স্থানীয় কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা নিজেদের চাহিদামতো সুপারী স্থানীয় পাইকারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছেন। এ বছর প্রতি পোন সুপারী (৮০টি) মাণভেদে ৯০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা, প্রতি কাউন (১২৮০টি) সুপারী ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবুল হোসেন জানান, এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুপারী চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সুপারী বাগান করার মধ্য দিয়ে এখানকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।সঠিক সময়ে সুপারী চাষীরা সঠিক পরিচর্যার কারনে এবার এ জেলায় সুপারীর বাম্পার ফলন হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কাঁচা-পাকা সুপারীর দাম কিছুটা বেশি। এতে ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষীরা।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন