নিয়ন্ত্রণহীন বাজার, মধ্যবিত্তদের জীবন ওষ্ঠাগত

  02-11-2017 02:34PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : বাজার অস্থির। নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সাধারণ মানুষ বাজারে সদায় কিনতে গিয়ে মাথাঘুরে যাওয়ার উপক্রম। মূল্যবৃদ্ধির অস্বাভাবিকতা জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুললেও দায়িত্বশীলদের টনক নড়ছে না ।

পিঁয়াজের চাহিদার প্রায় পুরোটাই উৎপাদন হয় দেশে। ঘাটতি মাত্র ৪ মেট্টিক টন। বার্ষিক ২২ লাখ মেট্টিক টন চাহিদার বিপরীতে ১৮ লাখ টন উৎপাদন হয় আমাদের দেশে। মাঝখানের ৪ মেট্টিক টন ঘাটতি নিয়ে বাজারে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কোনোমতেই কাম্য নয়। এটা অরাজকতা বৈ অন্য কিছু ভাবতে নারাজ ক্রেতা সাধারণ।

মৌসুমের শুরুতে যে পিঁয়াজ ১৪ টাকা কেজি বিক্রি হতো, সেটা বেড়ে হয় ৯৩ টাকা! আর সেটা হঠাৎ ৬০ টাকা থেকে একলাফেওই পর্যায়ে পৌঁছে। এর আগে ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা ছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়! ভাবা যায়? বাজারে নজরদারি না থাকার কুফল এটা।

প্রশ্ন, উৎপাদনকারী কৃষক ও খাদক এই ঊর্ধ্বগতির ফল কি পান না পাচ্ছেন। উত্তর এক কথায় না। কৃষক মাঠ থেকে উঠানোর পর পরই দ্রুত বিক্রি করে দেন। তারপর সেটা চলে যায় একধরনের মধ্যসত্তভোগীদের কাছে। শেষবার ক্রেতারা চড়াদামে কিনেন। মাঝখানে লাভ হয় মধ্যসত্তভোগীদের।

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যারা উৎপাদন করে, তারা যদি ওই অর্থ পেত, তাহলে কথা ছিল। আর সাধারণ ত্রেতারা যদি কৃষকদের বিক্রি দামের কাছাকাছি কিছু বেশি দামে কিনত, তাহলেও দুঃখ থাকত না। কিন্তু কৃষক ও ক্রেতা সাধারণ আর কত ঠকবে। মাঝখানে সিন্ডিকেট মানুষের পকেট কাটে।

১০ টাকা কেজি নির্ধারণের পরও লবণ উৎপাদনকারী কৃষক সাড়ে সাত টাকাও পান না। উৎপাদিত লবণ পড়ে থাকে কৃষকের মাঠে। সাত টাকার সে লবণে নামকাওয়াস্তে ফ্রি লবণ ব্যবহারপূর্বক প্যাকেটজাত করে ৪০ টাকার উপর বিক্রি হচ্ছে! মগের মুল্লুকেও এমনটা সম্ভব হতো কিনা প্রশ্ন ক্রেতা সাধারণের।

চালের কেজি ৮০ টাকা। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ৬ বার। গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে নজিরবিহীন। ২৫০ টাকার একচুলা ৮০০! সরকার নিজেই ১৫ টাকায় বিক্রি করা চালের দাম দ্বিগুণ করে ৩০ টাকা করে। জনসাধারণের প্রতি দায়হীনতার এমন দুঃখজনক ঘটনা দেশপ্রেমিকদের কেবল হতাশই করে।

কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকায়। এই মরিচসহ উল্লিখিত পণ্যের কোনোটারই বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই বাজারে। অথচ কোথাও নিয়ন্ত্রণ চোখে পড়ছে না। সাধারণ মানুষকে নিয়ে ভাবনাহীনতার এমন এক বাস্তবতার মধ্যেই আমরা বেঁচে আছি। যেটাকে বাঁচা বলা যায় না।

ক্রয়ক্ষমতার কথা ক্ষমতাসীনদের ভাবনায় আছে বলে মনে করছে না সচেতন জনগোষ্ঠী। সেটা থাকলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠত না। দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবন ওষ্ঠাগত। এই শ্রেণীর মানুষ যে সমাজে কষ্টে থাকে- বিশ্লেষকদের মতে, সে সমাজ কখনো উন্নত হতে পারে না।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন