স্বর্ণ আমদানির সুবর্ণ সুযোগ দেয়া হচ্ছে

  17-04-2018 03:35PM


পিএনএস ডেস্ক: ব্যবসায়ীদের স্বর্ণবার আমদানির সুযোগ দেয়া হচ্ছে। জুয়েলারি দোকানের মাধ্যমে এই স্বর্ণবার আমদানি করতে হবে। তবে সেই সব জুয়েলারি দোকানই এই আমদানির সুযোগ পাবে যারা ভ্যাট নিবন্ধিত। এই সুযোগ দিয়ে ‘স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা ২০১৮’ প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এ বিষয় সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি এই প্রতিবেদককে সম্প্রতি বলেছেন, বর্তমানে স্বর্ণ আমদানি বিষয়ে কোনো স্পষ্ট নীতিমালা নেই। স্বর্ণ আমদানির নীতি সহজ করা হচ্ছে বলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় আমি উল্লেখ করেছিলাম। নানা জটিলতার কারণে এখনো নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়নি। এই নীতিমালার কাজটি এগিয়ে চলেছে। আগামী বাজেটের আগেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে আমি করি।

চলতি অর্থবছরে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘জুয়েলারি আবহমান বাংলার একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। বাংলাদেশে জুয়েলারি শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ থাকলেও প্রয়োজনীয় নীতি-সহায়তার অভাবে এ পর্যন্ত এই শিল্পের তেমন বিকাশ হয়নি। তাই জুয়েলারি শিল্পকে ব্যবসাবান্ধব করার লক্ষ্যে স্বর্ণ আমদানির জন্য সময়োচিত ও বাস্তবসম্মত একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য এই সেক্টরের ব্যবসায়ী সমিতি বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা করে আমরা স্থির করেছি সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সাথে আলোচনা করে স্বর্ণ আমদানি এবং জুয়েলারি শিল্পের জন্য একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে, যাতে এ দেশে জুয়েলারি শিল্প বিকাশ লাভ করতে পারে এবং একইসাথে এই শিল্প বহির্বিশ্বেও রফতানি বাজার তৈরি করতে পারে। এই নীতিমালা প্রণয়ন এই ক্যালেন্ডার বছরেই সমাপ্ত করব বলে আশা করছি।’

সূত্র জানায়, ফাদার অব দ্য ন্যাশন গোল্ড কয়েন প্রকল্পের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও এম এস আলম এবং বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট অ্যান্ড মিউজিয়ামের সিইও মাশুরা হোসেন স্বর্ণ আমদানির বিষয় নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের স্বর্ণবাজারের জন্য কোনো নীতিমালা হয়নি। অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ প্রদান করে পত্রের একটি অনুলিপি অর্থমন্ত্রী বরাবর পাঠান।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী এক নোটে বলেন, স্বর্ণ আমদানির বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলেছি। এই বিষয়ে অনুগ্রহ করে আমাকে একটি প্রতিবেদন দেয়া হোক।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জুয়েলারি শিল্প ব্যবসাবান্ধব করার লক্ষ্যে স্বর্ণ আমদানির জন্য সময়োচিত ও বাস্তবসম্মত নীতিমালা প্রণয়নের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি পরিস্থিতিপত্র দেয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে এলসির মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি নেয়ার যে আবশ্যকতা রয়েছে সেটি তাদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে শিথিল করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, শুধু ভ্যাট নিবন্ধিত জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানই এ প্রস্তাবের আওতায় স্বর্ণবার আমদানি করতে পারবে বলে বিধান করা যেতে পারে। এ ছাড়া মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন বাস্তবায়ন হলে স্বর্ণ আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর আরোপিত হবে বিধায় এর ওপর প্রয়োজনে স্পেসিফিক ডিউটি প্রত্যাহার করা যেতে পারে।

পরিস্থিতিপত্রের ওপর অর্থমন্ত্রী নোট দিয়ে বলেন, শুধু জুয়েলারি সমিতিই তাদের মতামত জানিয়েছে। আমি চাই স্বর্ণ-রৌপ্য আমদানি নিয়মিত কায়দায় চলবে, ব্যাগেজ রুলের আওতায় বা বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাড়পত্র নিয়ে হবে না। শুধু এলসির মাধ্যমেই আমদানি হবে এবং ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানই তা করতে পারবে। নিয়মিত হারে মূসক আদায় হবে এবং আমদানিকারকরা রিফান্ড পাবেনÑ এবারের বাজেট প্রস্তাবেই এই নীতিমালা গ্রহণ করা হবে।

স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা প্রণয়ন নিয়ে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক সভায় দু’টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত দু’টি হলোÑ স্বর্ণালঙ্কারের কাঁচামাল হিসেবে সোনা আমদানি সহজীকরণ ও স্বর্ণের তৈরি অলঙ্কার সামগ্রীর রফতানি উন্নয়নের জন্য সার্বিক বিষয় পর্যালোচনার মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে অতি দ্রুত আবার সভা আহ্বান করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সোনা আমদানি করে তা নির্ধারিত মূল্যে প্রকৃত স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিক্রি করা যায় কি না তা পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক মতামত জানাবে।

ইতোমধ্যে স্বর্ণ আমদানি নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের সুপারিশ পর্যালোচনা করে স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৭ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খুলে বিদেশ থেকে কোনো স্বর্ণ আমদানি হয়নি। এমনকি শুল্ক পরিশোধ করে ব্যাগেজ রুলে আনা স্বর্ণের পরিমাণও একেবারেই নগণ্য। অর্থাৎ কোনো নীতিমালা না থাকায় বিপুল স্বর্ণ চোরাপথে দেশে ঢুকছে, যার খুব নগণ্য পরিমাণই শুল্ক এবং অন্যান্য সংস্থার হাতে ধরা পড়ে।

সূত্র জানায়, দেশে ছোট বড় ৩০ হাজারের বেশি স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার স্বর্ণ বেচাকেনা করছেন। নীতিমালা না থাকার অজুহাতে স্বর্ণ আমদানি করা যাচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করলেও শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ চোরাচালানের মাধ্যমে আনা স্বর্ণ দিয়েই এই চাহিদা মেটানো হচ্ছে।

মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার, কুয়েত ও আরব আমিরাত থেকেই আকাশপথে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণের বার বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর হলো এদের প্রধান রুট। বিমানবন্দর অতিক্রমের পর কয়েক হাত ঘুরে সেগুলো চলে যায় স্বর্ণব্যবসায়ীদের কাছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন