ট্যানারি সরাতে এখনও গড়িমসি

  27-09-2016 07:40AM


পিএনএস: রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে কারখানা সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে শ্লথগতিতে। এ পর্যন্ত সরানো হয়েছে মাত্র ১০টি কারখানা। অবশ্য ঈদের আগে ৩০টি কারখানা সরানোর দাবি করা হয়েছিল মালিকদের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে পরিবেশবাদীরা বলছে, ঢাকা থেকে কারখানা দ্রুত না সরালে সাভারে শোধনাগার স্থাপন অর্থহীন হয়ে পড়বে। সম্প্রতি চামড়া শিল্প নগরী পরিদর্শন করে পরিবেশবাদীরা বলেছেন, ট্যানারি মালিকদের এখানে না আসার কোনো কারণ নেই। তবে সাভারের বাকি কাজটুকু দ্রুত করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

ঢাকা ও এর আশেপাশের পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সরানোর চেষ্টা চলছে দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে। এ লক্ষ্যে সাভারের হেমায়েতপুরে ধলেশ্বরী নদীর তীরে গড়ে উঠেছে চামড়া শিল্পনগরী। পরিবেশ বাঁচাতে এখানে স্থাপন করা হচ্ছে, অত্যাধুনিক বর্জ্য পরিশোধনাগার, অর্থাৎ ইটিপি। ট্যানারি মালিকরা এখনো নানা অজুহাত দিয়ে যাচ্ছেন। শিল্পনগর গড়ে উঠলেও হাজারীবাগ থেকে কবে নাগাদ সব ট্যানারি এখানে আসবে তা এখনো অনিশ্চিত।
বাংলাদেশে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, কোরবানির ঈদের পর সাভারে এখন পর্যন্ত ১০টি কারখানাও পুরোপুরি স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি। আর যে কয়েকটি স্থানান্তর করা হয়েছে সেগুলো আবার বর্জ্য শোধনাগার প্ল্যান্টের পাইপ লাইনের সঙ্গে সংযোগ না পাওয়া, কারখানার নিজস্ব মেশিনারিজ প্রস্তুত না হওয়া এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাসের স্বল্পতায় উৎপাদনে যাওয়া যাচ্ছে না।

জানা গেছে, পরিবেশ দূষণের কারণে ২০০৩ সালে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি কারখানাগুলো সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে শিল্প মালিকদের ক্ষতিপূরণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন-সংক্রান্ত জটিলতায় বারবার সময় পেছায় ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের এ প্রকল্প। এ লক্ষ্যে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে সাভারে চামড়া শিল্প এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন করে সরকার। সেখানে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণসহ ১৫০-এর অধিক কারখানার জন্য প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে শিল্প মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও শিল্পপার্ক গড়ে তুলে নতুন কারখানা স্থাপনে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় কারখানা স্থানান্তর করছিলেন না ট্যানারি মালিকরা। শেষ পর্যন্ত সরকার তাদের দাবি মেনে ক্ষতিপূরণের ২৫০ কোটি টাকা দেয় এবং সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট করার আশ্বাস দেয়। এর পরই সাভারে কারখানা স্থাপন শুরু করেন ট্যানারি মালিকরা। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই তা না করে হাজারীবাগেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কারখানা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোই পিছিয়ে রয়েছে বলে বিসিক সূত্রে জানা গেছে। সূত্র মতে, বিসিক ও ট্যানারি মালিকদের দুই সংগঠনের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, ট্যানারি মালিকদের ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে হাজারীবাগের সব ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরের কথা ছিল। পরে আরো দুই দফা সময় বাড়িয়ে ট্যানারি স্থানান্তরের নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু তারপরও ট্যানারি মালিকরা নির্দিষ্ট সময়ে কারখানা সরাতে খুব একটা আগ্রহ দেখাননি।

বিটিএ সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ে সবগুলো কারখানা পুরোপুরি সরানো সম্ভব হবে না। তবে মোটামুটি একটা পর্যায়ে যাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।

এর আগে গত জানুয়ারি মাসে ‘শিল্পখাতের উন্নয়নে চলতি অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম মূল্যায়ন সভায়’ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যেসব ট্যানারি হাজারীবাগ ছাড়বে না, সেগুলো বন্ধ করে দেয়ার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। একই সঙ্গে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে বরাদ্দ করা প্লট বাতিলের নির্দেশও দিয়েছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু রাজধানীর পরিবেশ রক্ষায় হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো সরিয়ে নিতে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলা হলেও ব্যবসায়ীরা তাদের আগের স্থান ছাড়তে অনাগ্রহী ছিলেন।

এদিকে গত শনিবার ঢাকা চেম্বার আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আশা করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলোকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে নেয়া সম্ভব হবে। মন্ত্রী বলেন, সাভারে বড় ৬০টি ট্যানারির নির্মাণকাজ বেশ এগিয়েছে। আশা করা যায়, চলতি বছরের মধ্যে ট্যানারিগুলোকে সেখানে নেয়া যাবে। হাজারীবাগ থেকে ১৫৪টি ট্যানারি সাভারে নিতে কাজ করছে সরকার।



পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন