ঘুম নষ্ট করায় রোগীকে মেরে ফেলার নির্দেশ!

  12-10-2016 05:03PM

পিএনএস: পেটের যন্ত্রণার জন্য ১৮ বছর বয়সী মুকেশ প্রজাপতিকে শুক্রবার আগ্রার এস এন মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান তার বাবা টিকাম প্রজাপতি। কিন্তু, কিছুতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুকেশকে ভর্তি করাচ্ছিল না। মুকেশ যক্ষা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সেইসঙ্গে তার পেপটিক আলসারও হয়েছিল। পেটে সমানে রক্তক্ষরণ হওয়ায় ব্যাথা বাড়ছিল বলে চিকিৎসক মুকেশ হাসপাতালে ভর্তি হন।
এস এন হাসাপাতালের এক বিভাগ থেকে আর বিভাগে সমানে মুকেশকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তার বাবা টিকাম এবং কাকা রাজেশ। কিন্তু, রোগীর অবস্থা গুরুতর বলে সমস্ত বিভাগ থেকেই তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছিল। সব বিভাগ থেকেই বলা হয় এটা সার্জারির বিষয় তাই সেখানেই রোগীকে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু, রাতে সার্জারি বিভাগের দায়িত্বে থাকা অভিষেক নামে এক জুনিয়র চিকিৎসকও মুকেশকে ভর্তি নিতে চাননি।
তিনি জানান, বিভাগীয় প্রধান নির্দেশ না দিলে তিনি এমন সঙ্কটাপন্ন রোগীকে ভর্তি করবেন।
অভিষেকের কথা মতো মুকেশের বাবা মোবাইল থেকেই সেই রাতে শল্যবিভাগের প্রধান চিকিৎসক শ্বেতাঙ প্রকাশকে ফোন করেন। কিন্তু, গভীর রাতে ঘুমানোর সময় ফোন করায় মুকেশের বাবা টিকাম-এর উপর ব্যাপক রুষ্ট হন শ্বেতাঙ। এরপর অভিষেকের সঙ্গে তিনি ফোনে কথা বলতে চান। অভিযোগ, শ্বেতাঙ যে গোটা ঘটনায় রুষ্ট হয়েছেন তা তিনি অভিষেককে জানান। এখানেই শ্বেতাঙ ক্ষান্ত হননি, তিনি মুকেশকে মেরে ফেলার কথাও বলেন।
সেইসঙ্গে জানান, হাসপাতালের কোনও একটা বিভাগে ভর্তি করে নিয়ে মুকেশকে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখতে। এরপর বেশ ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলেন, ভর্তি করে নাও মেরে ফেলার জন্য। সবই তো জানো কী করতে হবে? কিন্তু, কেন ফালতু ফালতু ঝামেলা নাও?
এসএন হাসপাতালের শল্য বিভাগের চিকিৎসক অভিষেক শ্বেতাঙকে জানান, মুকেশের পেটে বিস্তর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এর উত্তরে শ্বেতাঙ ফের বলেন, আরে ভাই ভর্তি করে নাও, তারপর রোগীর পরিবারকে রক্ত আনার কথা লিখে দাও। ব্যস, এই চাপেই রোগীর পরিবার দৌঁড়ঝাপ করবে, ততক্ষণে রোগীর মরা ছাড়া আর কোনও গতি থাকবে না।
নিজের বিভাগের জুনিয়র চিকিৎসক অভিষেককে এই সব নির্দেশ দেয়ার পর শ্বেতাঙ ফের বলেন, আরে এই সব কাজের জন্য আমার ঘুম ভাঙানোর কোনও দরকার ছিল কি? এসব তো তোমরাই সামলাতে পারো।
মোবাইলে এই কথোপকথনের কয়েক ঘণ্টা পরেই মৃত্যু হয় মুকেশের। মোবাইলে এস এন হাসপাতালের দুই চিকিৎসক শ্বেতাঙ প্রকাশ এবং অভিষেকের মধ্যে চলা ভয়ঙ্কর কথোপকথন যে মোবাইল কলে রেকর্ড হয়ে গিয়েছে তা প্রথমে জানতেন না মুকেশের বাবা। পরে, মোবাইলে এই টেপটি তারা কল রেকর্ডে আবিষ্কার করেন।
মোবাইলে রেকর্ড হওয়া সেই কথোপকথন দিয়ে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেছেন মুকেশের বাবা এবং কাকা। আগ্রার পুলিশ সুপার গোটা ঘটনাটি জেলা প্রশাসককে জানান। জেলা শাসকের সুপারিশে জেলার প্রধান স্বাস্থ্য আধিকারিক একটি তদন্তকারী মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছেন।
সেই তদন্তকারী মেডিকেল বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক এ আগরওয়াল জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। শ্বেতাঙ প্রকাশ এবং অভিষেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমাণ হলে দু’জনেরই লাইসেন্স কেড়ে নেয়া হতে পারে। এদিকে, আগ্রার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, অডিও টেপটিকে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন