শিক্ষক লাঞ্ছনার তদন্ত: নারায়ণগঞ্জে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম

  24-10-2016 04:39PM

পিএনএস: ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নারায়ণগঞ্জের স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করার ঘটনার পুনঃতদন্তে নেমেছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) শেখ হাফিজুর রহমান।
ওই ঘটনায় পুলিশ প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে ৮ অক্টোবর পুরো ঘটনার বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমকে ৩ নভেম্বরে মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বন্দর উপজেলায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে আসেন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কর্মকর্তা শেখ হাফিজুর রহমান।
তিনি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে কটুক্তির অভিযোগ উত্থাপনকারী দশম শ্রেণীর ছাত্র রিফাত হাসান ও পরে তার মা রিনা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন।
এসময় তার সঙ্গে ছিলেন সিএমএম আদালতের বিচারিক হাকিম গোলাম নবী, মাজহারুল ইসলাম ও নারায়ণগঞ্জের মুখ্য বিচারিক হাকিম শহীদুল ইসলাম।
বিচারিক তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল হলে ৬ নভেম্বর প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য বিষয়টি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাই কোর্ট বেঞ্চে আসার দিন ঠিক রয়েছে।
শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনায় মন্ত্রী থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এ কে এম সেলিম ওসমানের শাস্তি দাবি করলেও পুলিশ তদন্ত করে ৭ অগাস্ট আদালতে যে প্রতিবেদন দেয়, তাতে বলা হয়, ওই ঘটনায় এই সংসদ সদস্যের কোনো দোষ তারা পায়নি।
পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামলকে গত ১৩ মে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি প্রকাশ পেলে দেশজুড়ে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়।
স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানই যে সেদিন শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে উঠ-বস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও তা দেখা যায়।
সরকারের মন্ত্রীরাও সে সময় সেলিম ওসমানের ভূমিকার জন্য সমালোচনায় মুখর হন। তবে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের এই সদস্য কোনো ‘ভুল করেননি' দাবি করে ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করেন।
ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে এলে হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয়।
রুল হওয়ার পর ২৯ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসির প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ, যা দায়সারা বলে অসন্তোষ জানিয়েছিল আদালত।
এরপর ৮ জুন জেলা প্রশাসক নতুন করে প্রতিবেদন দেন হাই কোর্টে। ওই ঘটনায় করা জিডির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে অগ্রগতি আছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসি ৬০ দিন সময় চেয়ে আবেদন করেন।
আদালত তখন স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় করা জিডির তদন্তে আসা ফল হলফনামা আকারে ৪ অগাস্ট আদালতে দাখিল করতে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়। গত ৭ অগাস্ট পুলিশের সেই প্রতিবেদন হাই কোর্টে পড়ে শোনায় রাষ্ট্রপক্ষ।
সেখানে বলা হয়, “শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান দুজনই উদ্ভূত ঘটনায় পরিস্থিতির শিকার।... কারও বিরুদ্ধে কোনোরূপ অভিযোগ না থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় আকস্মিকভাবে ওই ঘটনাটি হয়েছে বলে জানা যায়।”
রুলের পর ব্যাখ্যাদানকারী হিসেবে আইন ও শালিস কেন্দ্র এ মামলায় পক্ষভুক্ত হয় ও হলফনামা দেয়। হলফনামায় বলা হয়, জিডির সূত্র ধরে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা শ্যামল কান্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি।
মে মাসেও ওই ঘটনার পরপরই শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে চাকরিচ্যুত করেছিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে নিন্দা-প্রতিবাদের মধ্যে দুই দিনের মাথায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে। নিয়মবহির্ভূত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিদ্যালয় কমিটিও বাতিল করা হয়।
এছাড়া শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে কথিত নির্যাতিত ছাত্রের মায়ের একটি এবং ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে করা আরেকটি মামলার আরজি নারায়ণগঞ্জের আদালত খারিজ করে দেয়।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন