আতঙ্কের নাম সিরিয়াল কিলার

  28-10-2016 06:14AM


পিএনএস: আতঙ্কে বাড়ি ছেড়েছেন মাহিরা বেগমের পরিবার। রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাসায়। আতঙ্ক এখন পুরো দক্ষিণখান জুড়েই। আতঙ্কের নাম সিরিয়াল কিলার। তাকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় স্বস্তিতে নেই ওই এলাকার লোকজন। যে কোনো সময় আবারও হামলার শিকার হতে পারেন যে কেউ- এমনটিই মনে করেন তারা। তাই নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। হামলার শিকার পরিবারের সদস্যরা একা কোথাও বের হন না। কেউ কেউ বাসা পরিবর্তন করেছেন। সিরিয়াল কিলারের হামলার শিকার মাহিরা বেগমের সাক্ষাৎ পেতে মামলার এজাহারে দেয়া ঠিকানা অনুসারে টানা কয়েক দিন আশকোনা মেডিকেল রোডের বাড়িতে গেলেও তার সাক্ষাৎ মিলেনি। বাড়ির মালিক জানান, ঘটনার পর ভয়ে বাসা ছেড়ে চলে গেছেন তারা। তবে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে ২৩৫ নম্বর ওই বাড়ির। গেটে একাধিক তালা দেয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের অনুমতি ছাড়া ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয় না কাউকে। মাহিরা বেগমের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়ে জাহিদা আহমেদ জানান, তার মায়ের ওপর হামলার পর আগস্টেই চতুর্থ তলার ওই বাসা ছেড়েছেন। তিনি বলেন, এভাবে কি ওই বাসায় থাকা সম্ভব। আল্লাহ আমার মাকে বাঁচিয়েছেন। আবার যে এভাবে হামলা হবে না তার কি গ্যারান্টি আছে।

কেন তার মায়ের ওপর হামলা করা হলো, হামলাকারী কে তার কিছুই জানেন না জাহিদা। তিনি অবিলম্বে কিলারকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, একের পর হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। ওই কিলার অত্যন্ত সচেতনভাবে এগুলো করছে। সে কখনও ফোনে কল দিয়ে বাসায় ঢুকে না। ওয়ার্কিং ডে-তেই প্রতিটি ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, মায়ের ওপর হামলার পর র্যা ব, পুলিশ সবাই এসেছিল। মায়ের বক্তব্য নিয়েছে। আমি মামলা করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখনও হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জাহিদা বলেন, ছোট পরিবারের জন্য সাবলেট ভাড়া দেয়া হবে লিখে টু-লেট টানিয়ে ছিলাম। টু-লেটটাই কাল হয়েছিল। টু-লেটের সূত্র ধরেই কিলার তাদের বাসায় ঢুকেছিল বলে জানান তিনি। বাসায় মাহিরা এবং তার একমাত্র মেয়ে জাহিদা থাকতেন। দুজন মানুষের জন্য কয়েক রুমের এই ফ্ল্যাটটির প্রয়োজন ছিল না। তাই টু-লেট টানানো হয়েছিল। ঘটনার দিন জাহিদা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে। পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ফোনে হামলার বিষয়টি জানান তাকে। দ্রুত ছুটে যান জাহিদা। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় মাহিরা বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে একটি স্কুল ব্যাগ ও লোহার চাপাতি জব্দ করে পুলিশ।

মাহিরা বেগমের বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) আবদুল ওয়াদুদ জানান, সময় তখন দুপুর। বাসায় মাহিরা বেগম একা। নক করার শব্দ শুনে দরজা খুলে দেন মাহিরা। ব্যাগ কাঁধে, আনুমানিক পয়ত্রিশ বছর বয়সের ভদ্রবেশী ওই কিলারকে দেখে অনভিপ্রেত কিছুই মনে হয়নি তার। দরজা খুলতেই সে বলেছিল, টু-লেট দেখে এলাম। রুমটি দেখবো।
মাহিরা জানতে চেয়েছিলেন, কে কে থাকবেন। সে জানিয়েছিলো, তার মা ও সে থাকবে। রুমটি দেখতে মাহিরার পিছু পিছু যায় কিলার। চারদিক ঘুরে দেখে। বাথরুম, কিচেনও দেখে। এরমধ্যেই অন্য একটি রুমে ঢুকে সে। মাহিরা অবাক হয়ে বলেন, এই রুমতো ভাড়া দেবো না। কিলারের নির্ভয় কণ্ঠ ‘তাতে কি, রুমটা দেখি একটু।’ মাহিরা তখনও বুঝতে পারেননি তার জন্য একটা ভয়ঙ্কর মুহূর্ত এগিয়ে আসছে। কিলার রুমটি দেখছিল। মাহিরা এলোমেলো ক’টা কাপড় গুছাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই ঘটে ঘটনা। মাহিরা ঢলে পড়লেন। রক্তে ভেসে গেলো পুরো মেজে। বেশ কিছু সময় পর পাশের ফ্ল্যাটের এক নারী খোলা দরজা দিয়ে তাকিয়ে দেখেন রক্তাক্ত মাহিরা পড়ে আছেন। ওই নারীর চিৎকার শুনে এগিয়ে যান অন্যান্যরা।

জাহিদা আহমেদ জানান, তার মায়ের মাথায় তিনটি কোপ দিয়েছিল কিলার। মা চিৎকার করার কারণে তাড়াহুড়া করে ওই কিলার নেমে গেছে। নতুবা মাকে বাঁচানো হয়তো সম্ভব হতো না। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর মাহিরা বেগম শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেও এখনও ভয় কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। ঘুমের ঘোরে এখনও মাঝে মাঝে চিৎকার করেন। দিনের বেলাতেও এখন বাসায় একা থাকতে ভয় পান তিনি। কিলার আতঙ্ক যেন তাকে ছাড়ছে না। ভয় পান তার মেয়ে জাহিদাও।

এ বিষয়ে র্যা ব-১ এএসপি নাজমুল হক বলেন, এলাকার নিরাপত্তার জন্য র্যাখবের টহল জোরদার করা হয়েছে। সিরিয়াল কিলারকে শনাক্ত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ বিষয়ে র্যালব ছায়া তদন্ত করছে বলে জানান তিনি।



পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন