ইয়াবা ব্যবসায় অসাধু পুলিশ

  03-12-2016 10:58AM


পিএনএস ডেস্ক: চট্টগ্রামে তিন কৌশলে ইয়াবা ব্যবসা করছে কতিপয় অসাধু পুলিশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। সম্প্রতি কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে ইয়াবাসহ এএসআই রেদোয়ানুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। শুধু রেদোয়ানই নন, কয়েক বছরে একাধিক পুলিশ সদস্য বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে ইয়াবাসহ আটকের ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, ২৬ নভেম্বর রাতে কোতোয়ালি থানার আইস ফ্যাক্টরি রোড থেকে ১ হাজার ৭শ’ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন বাকলিয়া থানার এএসআই রেদোয়ানুল ইসলাম। একটি প্রাইভেট কার থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা তাকে গ্রেফতার করেন। এ সময় প্রাইভেট কারে ইসরাতুন নুর জেরিন নামে তার এক বান্ধবী এবং চালককেও গ্রেফতার করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে রেদোয়ান বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, ১১ নভেম্বর তিনি (রেদোয়ান) বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে ১ হাজার ৭শ’ পিস ইয়াবাসহ এক ব্যক্তিকে আটক করেন। ইয়াবাগুলো থানায় জমা না দিয়ে তিনি নিজের কাছে রেখে দেন এবং টাকা নিয়ে আটক ব্যক্তিকে ছেড়ে দেন। পরে ওই ইয়াবা বিক্রির জন্য গ্রাহক খুঁজতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মেট্রো উপঅঞ্চলের উপপরিচালক আলী আসলাম হোসেন বলেন, রেদোয়ান গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। স্বীকার করেছেন কিভাবে তিনি ইয়াবা ব্যবসা করেন।

সূত্র জানায়, তিন কৌশলে কতিপয় অসাধু পুলিশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ইয়াবা ব্যবসা করে থাকে। এগুলো হচ্ছে- ইয়াবার মূল পয়েন্ট টেকনাফ থেকে সরাসরি এনে বিক্রি করা, ইয়াবা নিজ দায়িত্বে রেখে নিরাপদ স্থানে টাকার বিনিময়ে পৌঁছে দেয়া এবং ইয়াবাসহ আসামি গ্রেফতারের পর ইয়াবা রেখে আসামি ছেড়ে দেয়া কিংবা আসামির কাছে পাওয়া ইয়াবা কম দেখিয়ে বাকি ইয়াবা বাইরে বিক্রি করা।

টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত সড়কের পাশে যেসব থানা এবং পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে এর একাধিক থানা ও ফাঁড়িতে রয়েছে ওই সিন্ডিকেটের সদস্য। জানা গেছে, গত কয়েক বছরে একাধিক পুলিশ সদস্য ইয়াবাসহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এরমধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিএমপির সাবেক তিন এসআইয়ের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার প্রমাণ পায় গঠিত তদন্ত কমিটি। তিন এসআই হলেন- শেখ সজিব, জুয়েল সরকার ও শাহাদাত হোসেন। পরে সিএমপির তৎকালীন কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেন।

২০১৫ সালের ২০ জুন র্যাবের অভিযানে প্রাইভেট কার এবং ৬ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) এএসআই মাহফুজুর রহমান। মাহফুজের নোট বুকে পাওয়া গেছে ২৮ কোটি ৪৪ লাখ ১৩ হাজার টাকার ইয়াবা বেচাকেনার হিসাব। এতে ইয়াবার ক্রেতা-বিক্রেতা হিসেবে যে ১৪ জনের নাম পাওয়া গেছে তার অধিকাংশই পুলিশ সদস্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাহফুজ বেশ ক’জন পুলিশ, আইনজীবী এবং আদালতের মুহুরি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার তথ্য দেন।

গত বছরের জানুয়ারিতে চকরিয়া থানার এসআই আকতার হোসেন ও কনস্টেবল বেলাল উদ্দিনসহ ৪ জনকে প্রাইভেট কারসহ আটক করে জেলা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ তা বিক্রির ১০ লাখ টাকা পাওয়ার গুজব ওঠে। পরে পুলিশ নগদ টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও এড়িয়ে যায় ইয়াবা উদ্ধারের বিষয়টি। এ ঘটনায় কক্সবাজার জেলা পুলিশের দুই সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়। একই মাসে ২০ হাজার পিস ইয়াবা হাতবদল করতে গিয়ে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন চকরিয়া থানার মাতামুহুরি ফাঁড়ির কনস্টেবল নাজমুল হোসেন।

এ ব্যাপারে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টচার্য বলেন, শুধু ইয়াবা ব্যবসা নয়, পুলিশের বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সূত্র: যুগান্তর

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন