রাজধানীতে সক্রিয় অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য

  19-02-2017 01:48PM

পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীর অদূরে সাইনবোর্ড এলাকায় সম্প্রতি অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়ে লেগুনা চালক রুবেল ও হেলপার নাজমুল। যাত্রীবেশে উঠে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা চালক ও হেলপারের সঙ্গে সখ্য করে। পরে নেশাদ্রব্য খাইয়ে লেগুনাটি নিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন অচেতন অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য নতুন কিছু নয়। তবে পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলে এদের দৌরাত্ম্য কমে, আবার তৎপরতা কমে গেলে এদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়।

সর্বশেষ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে অজ্ঞান পার্টির ১৭ সদস্যকে আটক মহানগর গোয়েন্দা ডিবি পুলিশ। সাম্প্রতিক সময়ে শুধু এই সাইনবোর্ড এলাকা নয় রাজধানী জুড়ে বেড়ে গেছে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা। আর পার্টির খপ্পড়ে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

সাইনবোর্ড এলাকায় খোয়া যাওয়া লেগুনা মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই রুটে অজ্ঞান পার্টির বড় একটি চক্র রয়েছে। এই চক্রটি লেগুনা, সিএনজি এমনকি প্রাইভেট ও মাইক্রো ছিনতাই করে থাকে।চালকদের সঙ্গে কৌশলে সখ্য করে অজ্ঞান করা দ্রব্য খাইয়ে পরে তারা এগুলো নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, এই রুটে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের টহল বাড়ানো গেলে পুরো এই চক্রকে আটক করা সম্ভব হবে। উদ্ধার হবে চুরি ছিনতাই হওয়া গাড়ি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোর মধ্যে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, গাবতলী, শ্যামলি, কল্যানপুর, মহাখালিতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তৎপরতা চালাচ্ছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বাস স্টপেজ অথবা গুরুত্বপূর্ণ মোড় যেমন ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন জাগায় ছদ্মবেশে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাদের কাজ করে থাকে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা কখনো ডাব বিক্রেতা, কখনো ভ্রাম্যমাণ পান সিগারেটের দোকান, কখনো হকার সেজে এই কাজ করে থাকে।

সায়েদাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী আবুল বাশার বলেন, এই এলাকায় ভ্রাম্যমাণ পান সিগারেটের বিক্রেতারা এই পার্টির সদস্যদের সঙ্গে জড়িত। তারা বিভিন্ন রকমের লোকদের টার্গেট করে থাকে। এরপর কিছু নেবে কিনা তা জিজ্ঞাসা করে। যদি কিছু নিতে চায় তাহলে কেমিক্যাল দেয়া জিনিস দেয় এবং তার পিছু নেয়।

আবুল বাশার জানালেন, এছাড়া এই এলাকায় যারা অজ্ঞান পার্টির সদস্য তাদের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। একজন যদি কোনো লোককে টার্গেট করে তাহলে প্রত্যেকে টার্গেট করা ব্যক্তিকে অনুস্মরণ করে। এরপর সুযোগ বুঝে তারা এ কাজ করে থাকে। এভাবেই রাজধানী জুড়ে এই চক্র সাধারণ মানুষের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার বলেন, এ এলাকাতেও চক্রটি তৎপরতা চালাচ্ছে।রাজধানীর বৃহত্তম কাঁচা বাজার হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন। সুযোগ বুঝে এই চক্রটি ব্যবসায়ীদের সবকিছু নিয়ে যায়। এছাড়াও কাওরান বাজার থেকে রাতের বেলায় কম টাকায় সাধারণ মানুষ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যায়। এরাও এদের হাত থেকে রক্ষা পায় না। গত সপ্তাহে তিন ব্যক্তির টাকা ও মোবাইল নেয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিন অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়ে সাধারণ মানুষ হাসপাতালে আসছেন। গত সপ্তাহে অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়ে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি হাসপাতালে এসেছেন। যারা রাজধানীর কোনো না কোনো জায়গায় অজ্ঞান পার্টির শিকার হয়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন।

মহাখালী বাস টার্মিনালে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা সম্পর্কে বনানী থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) বিএম ফরমান আলী বলেন, “মহাখালী এলাকায় আমাদের সার্বক্ষণিক টহল থাকে। কেউ যদি এ ঘটনার শিকার হন আমাদের বক্স অথবা টহল পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, বাস টার্মিনালসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারী থাকে। এরপরও এই চক্রটি পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটায়।

তিনি বলেন, অজ্ঞানপার্টিসহ প্রতারক চক্রদের বিরুদ্ধে বাস টার্মিনালগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারী আরো বৃদ্ধি করা হবে। যাতে করে এই চক্রটিকে দমন করা যায়।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন