সোচ্চার না হওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে হিজড়াদের চাঁদাবাজির ক্ষেত্র

  20-02-2017 12:21AM

পিএনএস (সৈয়দ হাফিজুল ইসলাম): কাজ করে খাওয়ার জন্য কি যৌনাঙ্গ খুবই প্রয়োজন? নিশ্চই আমার সাথে সবাই একই উত্তর দিবেন ‘না’।
নানা মানুষ হিজড়াদের নানাভাবে সহানুভুতির দৃষ্টিতে দেখে। যেমন কেহ বলেঃ সমাজ অবহেলিত, কেহ বলে নির্যাতিত, কেহ বা বলে লাঞ্চিত। বিভিন্ন ভাবে সহানুভূতির দৃষ্টিতে এদের আখ্যা দিলেও আজ এদেরই নির্যাতন আর লাঞ্ছনায় অতিষ্ঠ জনসাধারণ।
রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দুইটার দিকে কাকরাইল মোড় থেকে যাচ্ছিলাম। এমন সময় দেখলাম ট্রাফিক জ্যামে পড়া যানবাহন থেকে কিছু হিজড়া চাঁদাবাজি করছে। মানুষও মান সম্মানের ভয়ে এদেরকে টাকা-পয়সা দিচ্ছে। আমাকে ছবি তুলতে দেখে রেগে যায় এক হিজড়া।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি হাতিরঝিলে সন্ধ্যার দিকে হাটছিলাম, এমন সময় দুজন হিজড়া এসে আমাকে বলল, ‘ভাইয়া ১০টা টাকা দিয়া যান’। পরিস্থিতি এমন যে, আমি টাকা না দিয়ে যেতে পারলাম না, শুধু মান-সম্মান হারানোর ভয়ে। কারণ, আমার মনে ভয় জেগে উঠলো যে, এরা অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে।
আমরা এসব হিজড়াদের মূলত কিছুই বলি না কারণ এদের প্রতি আমরা সহানুভূতি দেখাই। কিন্তু তারা এই সহানুভূতিকে পুঁজি করে যাচ্ছে তাই করে বেড়াবে এটা আর কতো আমরা সহ্য করব? বরং এতোদিন সহ্য করে আসায় তাদের চাঁদাবাজির ক্ষেত্র দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এখন আমরা একটু দেখেনি তাদের চাঁদাবাজির ক্ষেত্রগুলোঃ-
বাসাবাড়ীতে চাঁদাবাজিঃ
কারো বাসায় নতুন বাচ্চা জন্মগ্রহণ করলে এরা হামলে পরেন দলবল নিয়ে। শিশুটিকে নিয়ে নাচ গান করে। অনেক ক্ষেত্রে শিশুটি ভয় পেয়ে অসুস্থ হওয়ার খবরও পাওয়া যায়। অশ্লীল ভাষায় এদের স্বরোচিত নাচগান দিয়ে পরিবেশ মাতিয়ে উচ্চ হারে চাঁদা দাবি করেন। যা দেওয়া অধিকাংশ পরিবারের পক্ষেই অসম্ভব। তাতে বেধে যায় ঝগড়া। চাঁদার টাকা কম হলেই এরা প্রথমে কাপড় খুলে ভয় দেখায়। তা না হলে প্রসাব পায়খানা করে পরিবেশ নষ্ট করার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে। এদের কাছে মাফ চেয়ে, হাতে পায়ে ধরে রক্ষা পেতে হয় নবজাতকের পরিবারকে।

ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজিঃ
বাসাবাড়িতে চাঁদাবাজিতে সফল হয়ে তারা হাত বাড়াল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দিকে। দাপট দেখানোর সুবিধার্থে দলবদ্ধ হয়ে এলাকা ভাগ করে নেমে পরে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের দিকে। সেই এলাকা অনুসারে সপ্তাহে ১দিন কোথাও মাসে ১দিন নির্দিষ্ট হারে এদেরকে চাঁদা দিতে হয়। অন্যথায় দলবল নিয়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা।

বিয়ে সহ নানা আনুষ্ঠানে চাঁদাবাজিঃ
এলাকায় কোন অনুষ্ঠান হলে এরা সদলবলে হামলে পরে। স্বরোচিত অশ্লীল নাচ গান গেয়ে তারপর চাঁদা নিয়ে আনুষ্ঠান ছাড়েন।
চাঁদাবাজির ক্ষেত্র তাদের বাড়তে বাড়তে এবার তারা নেমে পরেছে রাস্তায়। পথচারীদের পথ আটকিয়ে, রিক্সা থামিয়ে এমনকি যানজটের সুবিধার্থে প্রাইভেট কার, সিএনজি থেকেও ইদানিং চাঁদা তুলতে দেখা যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। আরও যে চাঁদাবাজির কতো ক্ষেত্র তারা দিনদিন তৈরি করেছে তা একটু খেয়াল রাখলেই চোখে পরে। তাদের কর্মকাণ্ড এখন প্রকাশ্যে পুলিশের সামনেও হচ্ছে।

একটা সময় ছিল যখন কর্মসংস্থানের অভাব ছিল তখনকার কথা আলাদা, কিন্তু এখন কর্মসংস্থানের কোন অভাব আছে কি? একজন হিজড়া যদি কারো বাসায় গৃহস্থলির কাজ করে তা হলে কেউ কি তাকে তাড়িয়ে দেবে? অবশ্যই দেবে না বরং গৃহকর্তী আরো খুশি হবেন এই ভেবে যে তার জামাই কখনও কুনজর দেওয়ার সুযোগ পাবে না।

বাংলাদেশে অনেক গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে হিজড়াদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। সেখানে একটি মেয়ে যদি কাজ করতে পারে হিজড়া কাজ করতে কোন সমস্যা হবার কথা নয়।

একজন হিজড়া যদি দোকানে কাজ করে, যদি সেলস এ কাজ করে তা হলে তার কোন সমস্যা আছে কি? তারা চাইলে অনায়াসে করতে পারবে এসব কাজ।

এভাবে যেখানেই তাকান না কেন কাজের ক্ষেত্রে এদের বর্তমানে কোন বাধা নেই। কিন্তু এরা তা করবে না। এরা সর্বদাই লিঙ্গের অনুপস্থিতিকে পুঁজি করে চাঁদাবাজি করে চলছে। বিনা পরিশ্রমে যদি চলে যায় কে চায় পরিশ্রম করতে, এই মনমানসিকতা নিয়ে হিজড়া নয় এমন অনেকে হিজড়া সেজে চাঁদাবাজি করতে নেমেছে যার প্রমাণ ভূরিভূরি রয়েছে।

এতো গেল তাদের দিনের বেলার কার্যকলাপ। কিন্তু রাতের বেলার কার্যকলাপ এদের আরো খারাপ। এরা নিজেরা মাদক সেবনতো করেই সাথে এলাকার যুব সমাজের মাঝেও এরা মাদক সরবরাহ করে থাকে। এমনকি পতিতা সরবরাহের কাজও তারা করে। পথ পতিতা সহ বিভিন্ন পতিতাদের সঙ্গে সখ্য থাকে এদের। যার মাধ্যমে এরা এই কাজটি অনায়াসে করে চলছে।
এভাবে যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন এদের ভাল কাজের কোন নিদর্শন নেই।
তাই এদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ সহ সকলের যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হওয়া উচিত।

লেখক, সাংবাদিক
প্রিমিয়ার নিউজ সিন্ডিকেট লি.(পিএনএস)

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন