সাইবার অপরাধের শিকার নারীরা

  25-02-2017 10:47AM

পিএনএস ডেস্ক: বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম সহ সব বয়সী মানুষ ইন্টারনেটের ব্যবহার বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে, তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অন্য মাধ্যমগুলোয় এই অপরাধের প্রবণতা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে সাইবার অপরাধে নারীরাই শিকার হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। শিক্ষার দিক থেকে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে আছেন আমাদের দেশের নারীরা। আর সেই সুযোগে কিছু মানুষ এসব নারীকে বিভিন্নভাবে অপরাধের ফাঁদে ফেলছে।

ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন থানা ও দেশের একমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনাল বিচারাধীন মামলা ঘেঁটে দেখা যায়, ৮২ শতাংশ সাইবার অপরাধের শিকার নারী। অন্যদিকে গত আড়াই বছরে ৩৭টি থানার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে ৯৭টি। এর মধ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এমনকি বিভিন্ন পরিবারের গৃহবধূসহ এই অপরাধের শিকার হচ্ছেন নারীরা। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালের তথ্যমতে ১০৫টি মামলার বিচার চলছে, যার মধ্যে ৯২ জন বাদী হচ্ছেন নারী।

এসব থানার সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময় সম্পর্কে জড়িয়ে থাকার পর সম্পর্কের অবনতি হলে মেয়েটির ছবি নিয়ে তা ফটোশপের মাধ্যমে বিকৃত করা, একটি মেয়ের ছবি ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করে তা দিয়ে ফেইক আইডি খোলা এবং প্রেমঘটিত ক্ষেত্রে দেখা যায় সম্পর্ক ভেঙে গেলে মেয়ের নগ্ন ছবি আপলোড করাসহ নানারকম অপরাধের শিকার হন নারীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সাইবার অপরাধের হুমকি দিয়ে চাঁদা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক সময় মেয়েদের বিভিন্নভাবে কুপ্রস্তাব দেওয়া হলে সে প্রস্তাবে রাজি না হলে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাদের আপত্তিকর ছবি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।

ধানম-ির বেসরকারি বিদ্যালয় অধ্যয়নরত ছাত্রী লিনা (প্রকৃত নাম নয়) বলেন, ফেসবুকে তার ছবি ডাউনলোড করে একটি ফেইক আইডি খোলা হয়েছে, তিনি রিপোর্ট করলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। এতে তিনি কিছুদিন ধরে দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এ রকম আরও অসংখ্য নারী এমন সাইবার অপরাধের হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তা অনুসন্ধান করে জানা যায়।

ঢাকার মোহাম্মদপুরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক ছাত্রী বলেন, ‘আমরা মেয়েরা ভয়ের সংস্কৃতির এই সমাজে নিজেদের এ রকম সমস্যার কথা বাইরে, এমনকি নিজেদের পরিবারের সঙ্গেও বলতে ভয় পাই। যার ফলে আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি, আমাদের মধ্যে অনেক মেয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে থাকে।’ এ রকম আরও অসংখ্য নারী এমন সাইবার অপরাধের হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

আমাদের দেশের নারীরা এখনো পরিবারের বিভিন্ন শাসনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন, যার জন্য নিজের বিপদের কথা অনেক ক্ষেত্রেই বলতে গিয়েও বলতে পারছেন না। এর পেছনের কারণ আমাদের দেশের পরিবারে দায়িত্বে থাকা সদস্যদের অসহযোগিতা। এ ক্ষেত্রে নিজেদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে ভয় পান এবং চক্ষুলজ্জার কারণে বাইরের জরুরি ব্যবস্থা নিতেও দ্বিধাবোধ করেন তারা ।

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী এখলাছুর রহমান বলেন ‘একদিকে এসব কর্মকাণ্ড একের পর এক ঘটে চললেও দেশের আইনের যথাযথ অনুসন্ধান এবং যোগ্য বিচারের অভাবে সাইবার অপরাধ ক্রমেই বেড়ে চলছে। যার ফলে অনেক অপরাধীর বিচার না হওয়ায় মানুষ এখন নিকৃষ্ট কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করছে না। এমনকি যে কোনো ধরনের প্রতিশোধমূলক আচরণের নারীকেই একমাত্র লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ধরা হয়।

আমাদের দেশে এই অপরাধের বিরুদ্ধে যদি নারীর পাশাপাশি পুরুষরাও এগিয়ে আসে, তাহলে এ রকম সাইবার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড খুব দ্রুত সমাধান করা যাবে এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
.
সুত্র: আমাদের সময়


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন